অতিথি পর্ব:১২ লেখা: মিশু মনি

0
449

অতিথি
পর্ব:১২
লেখা: মিশু মনি
.
মর্ম বিস্ময়ের ঘোরে হা করে তাকিয়ে আছে।
মিশু বলল,মুখে মশা ঢুকে যাবে।মশা গিলে খেলে চিকুনগু জ্বর হবে।
– চিকুন গু?
– আজ্ঞে হ্যা।হা বন্ধ করো।
– মিশু তোমার জানা উচিৎ, আমাদের বাসায় কোনো মশা নেই।
– মশা নেই তাতে কি? মিশু তো আছে 😀
মর্ম হেসে বলল,মিশু মশা! বাহ দারুন তো! আজ থেকে তোমাকে আমি মশা বলে ডাকবো।
মিশু রাগ হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল।মর্ম বলল,অন্য কোথাও গিয়ে ঝগড়া করি? কারও দেয়ালে এভাবে কান পেতে রাখা যৌক্তিক নয়।
– আচ্ছা চলো।
ওরা মর্ম’র রুমে চলে আসল।
মর্ম বলল,মেয়বি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে সুজানা আপু ব্যাক করেছে।
– তোমাকে বলেছে? আপুকে ফিরিয়ে আনলাম তো আমি।
– তুমি!
– আজ্ঞে হা।এসব মিশুর কেরামতি।
– বাহ! মশার মাথায় বুদ্ধি আছে দেখছি।
– সারমর্ম,মশা বলবা না।
– আরে মিশু আর মশা এক ই কথা।
– মর্ম,ভাল হবেনা বলে দিচ্ছি।মুখ খারাপ করতে চাচ্ছি না।
– হা হা হা।পাগলী মেয়ে।আচ্ছা বলো এখন কি করা যায়?
– এখন, চলো নাচি।
– নাচি মানে? ডান্স করতে পারো?
– খুব পারি।চলো নাচি।কাজী সাহেবের বিয়ে এবার ফাইনাল করেই ছাড়ব। সেই আনন্দেই নাচা উচিৎ।
মর্ম মুখ বাকিয়ে বলল,মশা আবার নাচতে পারে নাকি? হুহ।
– মর্ম,আরেকবার মশা বললে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
– ওকে বাবা সরি।আর মশা বলবো না।এখন থেকে বলবো মিশা, মিশা সওদাগর।
মিশু রেগে যাচ্ছিল।মর্ম হেসে বলল,আচ্ছা চলো নাচবো।
– একসাথে?
– হ্যা।প্রব্লেম কোথায়? তুমি আর আমিই তো।
মিশু দাত কেলিয়ে বলল,আচ্ছা তাহলে জোরে গান ছেড়ে দাও।দারুন হবে মর্ম।পাশের রুমে নাটক হচ্ছে,আর এই রুমে গান।
.
মর্ম কম্পিউটারে গান বাছাই করতে লাগল।মিশুর একটা গান ও পছন্দ হচ্ছে না।
শেষে মিশু নিজেই উঠে এসে বলল,এসব কি গান শুনি? এসব গানের সাথে কি আর ডান্স করা যায়?
– তাহলে বলে দাও কি গান দিবো?
– মেরে পিছে হিন্দুস্থান হ্যায়..
মর্ম চোখ বড় বড় করে মিশুর দিকে তাকালো,সিরিয়াসলি?
– আজ্ঞে হা।দাও এই গানটা ছেড়ে দাও।
মর্ম একটু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলল,এইসব গান তুমি শুনো?
– হ্যা শুনি।তো?
মর্ম হেসে বলল,বেশ ভালো।তাহলে নাচার জন্য প্রস্তুত?
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,একদম রেডি।তুমি রেডি?
– হুম।তাহলে গান ছেড়ে দিই?
মিশু মেঝের মাঝখানে এসে দাড়ালো।মর্ম গান ছেড়ে দেয়া মাত্রই নাচ শুরু করে দিলো।
মর্ম হা করে তাকিয়ে আছে।মিশু এমন ভালো ডান্স করতে পারে সেটা দেখে বোঝা যায় না।মিশু নেচেই চলেছে।
মর্ম গানটা বদলে অন্য গান দিলো। মিশু নাচ থামিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় মর্ম এসে মিশুর হাত টেনে ধরে নাচতে লাগল।স্পিকারে গান বাজছে- kabhi joo badaal,baarse na dekhu tujhe akhe.. varkey tuu laage mujhe peheli… barish kii duaa…
.
মিশু মুখে হাসি ফুটিয়ে নাচতে লাগল।মর্ম ও খুব ভালো নাচছে।যে কেউ দেখলে বলবে এরা নিঃসন্দেহে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্যান্সার।
মর্ম’র খুব ভালো লাগছে।ও মিশুর হাত ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মিশুকে নাচাচ্ছে।
.
হিমু ও মাত্রা দরজায় দাড়িয়ে হা করে ওদের নাচ দেখছে! দুজনের চোখেই বিস্ময়!
হিমু ভাবছে,আজ এসব কি হচ্ছে বাসায়? একটা সুন্দরী মেয়ে এসে মৈত্রীর রুমে ঢুকেছে অনেক্ষন হলো।আর এদিকে মিশু আর মর্ম এভাবে নেচে চলেছে।কি হচ্ছে এসব?
.
হিমু মাত্রার মাকে গিয়ে সব বলতেই উনি মর্ম’র রুমে চলে আসলেন।
এভাবে দুজনকে নাচতে দেখে ওনার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে,মর্ম আর মিশুর মাঝে একটা সম্পর্ক আছে।ও জন্যই মিশু মৈত্রীকে বিয়ে করতে চায়না।
ওনাকে দেখে মিশু নাচ থামিয়ে দাড়িয়ে পড়ল।
মর্ম হাফাতে হাফাতে বলল,মা তুমি এ ঘরে!
– এসব কি হচ্ছে! বাড়ি টাকে এফ.ডিসি বানিয়ে ফেলছো।
– এফ.ডিসি মানে?
– মানেটা এখন শেখাতে হবে?
– সরি আম্মু।প্লিজ কিছু মনে করোনা।আসলে আমরা এম্নিতেই ডান্স প্রাকটিস করছিলাম।
– আচ্ছা।এবার বল মৈত্রীর রুমে কে?
– সুজানা আপু।
– সুজানা আপু কে?
– তোমার মেয়ে।তোমার একটা মেয়ে আছে না? সেই মেয়ে এসেছে।
মর্ম’র মা কাদো কাদো হয়ে বলল,তোর বাপের আরেকটা বউ আছে? তার আবার মেয়েও আছে?
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,সেরেছে রে।
– কি সেরেছে? কবে বিয়ে করছে তোর বাপ?
– আহা! আব্বু কেন বিয়ে করতে যাবে?
– তাহলে মেয়ে আসলো কই থেকে?
– মেয়ে বলতে তোমার ছেলের বউ।
মা আবারো কেদে কেদে বললেন,মৈত্রী আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলল?
– আরে আম্মু,তুমি তো দেখছি মিশুর চেয়েও অবুঝ।
মিশু বলল,আনটি অবুঝ নয়।আসলে তোমার ই কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা নাই।আমি বলছি।
মিশু এসে আনটিকে পাশে বসিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে বলল।তারপর আনটি হেসে বললেন, তুই তো ভারি দুষ্টু রে মিশু।
– হ্যা।আমি পাজির পা ঝারা।
– শোন না মিশু মা,আমার তোকে খুব ভালো লাগে।আমার তো মেয়ে নেই,তুই আমার মেয়ে।
মিশু আনটিকে জরিয়ে ধরে বলল,হ্যা।আমিই তোমার মেয়ে।এবার আসো, বড় ছেলের বউকে দেখবা।সুজানা আপু দেখতে এত্ত কিউট!
– মেয়েটার নাম সুজানা?
– হ্যা।আসো, দেখবা।আর এই আপুর সাথেই কিন্তু মৈত্রীর বিয়ে দিতে হবে।আমি কিন্তু বিয়ে খেয়েদেয়ে তারপর বাড়ি যাবো।
আনটি হেসে বললেন,আচ্ছা চল।মেয়েটাকে দেখি আগে।
.
সবাই মৈত্রীর দরজায় এসে দাড়ালো।কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,কাজী সাহেব, দরজা খুলুন।
.
মৈত্রী দরজা খুলে দেখে মা,মর্ম,মাত্রা,হিমু আর মিশু দাড়িয়ে।
মাকে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা।
মিশু ভিতরে ঢুকে সুজানার কাছে গিয়ে বলল,হাই ম্যাম।প্রেম করা হলো?
সুজানা মিশুর কান টেনে ধরে বলল,পাজি মেয়ে।তুমিই আমাকে কল দিয়েছিলে?
– আহা,কাজী সাহেব সব বলে দিয়েছে? যাই হোক,বাইরে আসুন আপু।শ্বাশুরি এসেছেন।
– হ্যা।আপনার শ্বাশুরি,আমার ও শ্বাশুরি।
বলেই দাত বের করে হাসল।
.
সুজানাকে দেখে মাত্রার মায়ের খুব পছন্দ হলো।মেয়েটি দেখতেও পরির মত,আচরনেও নম্র অনেক।
তিনি সুজানার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নাস্তা তৈরি করতে চলে গেলেন।
.
সকলে বসার ঘরে এসে বসল।মৈত্রী হাত মুখ ধুয়ে এসে মিশুর পাশে বসে পড়ল।
মিশু বলল,কাজী সাহেব। পাত্র পাত্রী,কাজী সবাই যখন আছে,বিয়েটা পড়িয়ে ফেলুন।
– সুজানা একা একা বিয়ে করবে না।
– আরে আমি তো আপনাদের বিয়ের কথা বলিনি।আমি বলেছি আমার আর মর্ম’র বিয়ের কথা।
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,আমি ওকে বিয়ে করবো না।বান্দর মাইয়া একটা।মিশা সওদাগর।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,সারমর্ম তোমারে গাইরালামু কিন্তু।
মৈত্রী ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,সুযোগ পেলেই দুটো ঝগড়ায় মেতে ওঠে।
মিশু বলল,ঝগড়া আমি করিনা।মর্ম করে।
মর্ম বলল,মশার কাজ ই তো হচ্ছে গুণগুণ করা।
মিশু ছড়ায় ছড়ায় বলে উঠল,
মর্ম’র বাচ্চা,এত্তুকোনা কাচ্চা..
দেখতে বড় সুন্দর, চিড়িয়াখানার বান্দর..
মর্ম হেরে গেল।মিশুর সাথে তো সে পারবেই না।
তারপর ও বলার চেষ্টা করলো,
মিশু পাগলী, ঠিক যেন ছাগলী..
রাস্তায় ঘুমায়,কুত্তারা চুমায়…
.
সবাই হেসে উঠল।মিশু রেগে উঠে চলে গেল।
রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তার প্লেট সাজিয়ে নিলো। মর্ম’র প্লেটে পেট খারাপের ওষুধ মিশিয়ে দিলো। তারপর খাবার গুলো নিজ হাতে পরিবেশন করলো।
সকলেই তৃপ্তির সাথে খেলো। মিশু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিচ্ছে।আজ তো রাতে মর্ম’র বারোটা বাজবে।
.
খাওয়ার পর সুজানা বিদায় নিয়ে চলে গেল।
মর্ম রুমে এসেই বাথরুমে ছুটে গেল।
মিশু এসে বলল,মর্ম চলো নাচি।
মর্ম দাত কিড়মিড় করে বলল,আমি বারবার টয়লেটে দৌড়াচ্ছি।আর নাচবো?
মিশু হেসে বলল,বারবার যাওয়ার চেয়ে টয়লেটে গিয়ে বসে থাকলেই পারো।
মর্ম প্রচণ্ড রেগে গেল।কিন্তু মিশু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
( চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here