তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব-২৩ Writer Taniya Sheikh

0
460

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব-২৩
Writer Taniya Sheikh

রাত্রির প্রায় শেষ প্রহর। নিকোলাস বসে আছে ইসাবেলার শিওরে। মেজাজ চরম খারাপ ওর। ইসাবেলার অচেতন মুখপানে চেয়ে রাগটা অবশ্য গলে গলে যাচ্ছে। এই মেয়ে জানেওনা নিকোলাসের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে সে। সেই যে প্রথমবার ঝিলের পাড়ে ইসাবেলাকে দেখেছিল। নগ্ন দেহে একটু একটু করে ডুবছিল ওর শরীর। কুয়াশা চাদর হয়ে জড়িয়ে রেখেছিল চারপাশ। মুখশ্রী ছিল ঠাণ্ডার দাপটে গোধূলির লালিমা। প্রচণ্ড কাঁপছিল ওর গোলাপি ঠোঁটদুটো। যখন ডুব দিয়ে মাথা তুলল, ভেজা চুল গোলাপ রাঙা বুকে লেপটে ছিল। মনে হয়েছিল যেন গ্রিক দেবী আফ্রোদিতি নেমে এসেছে ধরার জলে। সেই প্রথমবার হৃদয় সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ ওঠে। বুকের বা’পাশ শব্দ করে উঠেছিল নিকোলাসের। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক হয়। ইসাবেলা তাকে আকৃষ্ট করেছিল সেদিন। ভেবেছিল তা হয়তো কেবল ওর রক্তের তৃষ্ণার জন্য। রক্ত পানের পর মোহটা কেটে যাবে। হলো উলটো। প্রথমদিনের পর ওর রক্তের স্বাদ কিছুতেই ভুলতে পারল না। শুধু কি রক্ত? ইসাবেলার চাহনি, বিমর্ষ মুখ সর্বক্ষণ ভাবনায় স্থান করে নেয়। এমনটা হয়নি পূর্বে। মেয়েটার প্রতি আলাদা রকমের টান অনুভব করেছে। ইতঃপূর্বে যা কারো প্রতি হয়নি। এমনকি নিকোলাসের জোড়া যে মেয়েটি ছিল তার প্রতিও এমন কিছু অনুভব করেনি। মার্গারেটের সাথে দেখা প্রায় দশ বছর পূর্বে। সোনালি চুল, সুশ্রী মুখবয়বের মার্গারেট নিকোলাসকে প্রচণ্ড ভালোবাসত। ভালোবেসে স্বেচ্ছায় নেকড়ে থেকে ভ্যাম্পায়ার হয়েছিল। ছায়ার মতো অনুসরণ করত নিকোলাসকে। ওর ওপর আসা বিপদের সামনে আগে দাঁড়াত। নিকোলাসের নিঃসঙ্গ জীবনে মার্গারেট সঙ্গী হয়ে এসেছিল। তেমন করে ভালো না বাসলেও বেশ পছন্দ করেছিল জোড়াকে নিকোলাস। ভালোই যাচ্ছিল ওদের সম্পর্ক। কিন্তু ফাদার জালোনভ মার্গারেটকে কেড়ে নিলো নিকোলাসের জীবন থেকে। মেরে ফেলল ওরা ওকে। মাদামের বাড়িতে ইসাবেলার সাথে ভ্যালেরিয়ার সম্পর্ক জানতে পেরে বেজায় খুশি হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শেষ করবে এই মেয়েকে। প্রতিশোধ নেবে মার্গারেটের মৃত্যুর। কিন্তু পারেনি নিকোলাস। ইসাবেলার নিষ্পাপ চেহারা তার ভেতরের পিশাচটাকে হারিয়ে দেয়। একেবারে মারা হয় না আর। নিজের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মাদামের বাড়ি ছেড়েছিল। ফেরার আগে মাদামকে বশিভূত করে ইসাবেলার ক্ষতির শেষ চেষ্টা করে। যা প্রত্যক্ষভাবে পারেনি, পরোক্ষভাবে পারতে চেয়েছিল। সেখানেও ব্যর্থ হয়। পুনরায় ওকে দেখে অবাক হয়েছিল সেদিন। এই মেয়ে একবার নয় দু দু বার চড় মেরেছে, অসম্মান করেছে। যা অন্য কেউ করার দুঃসাহস পর্যন্ত দেখায় না। দেখালে জীবিত থাকে না আর। অথচ, নিকোলাস এই মেয়েকে কিছুই বলেনি। স্রেফ নির্বোধ বলে উপহাস করেছে। যখন মনে হয়েছে মেয়েটা তার মধ্যে অদ্ভুত অজানা এক অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে, সতর্ক হয়ে যায়। ওর রক্তের নেশা ছেড়ে ওর থেকে দূরত্ব পর্যন্ত গড়ে। আন্দ্রেইর সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটতে লাগল। ভেবেছিল আন্দ্রেই সুস্থ হলেই মেয়েটাকে ওর হাতে তুলে দেবে। তারপর যা ইচ্ছে হোক। কিন্তু যখন প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে গেল, রেগে যায় নিকোলাস। ইসাবেলা তাকে আগুনে পুড়িয়ে শেষ করতে চেয়েছিল। বোকা মেয়ে জানে না নিকোলাসকে আগুনে পুড়িয়ে মারা যায় না। কিন্তু ওর স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয় নিকোলাস। পণ করে এবার এই মেয়েকে হত্যা করবেই করবে। সেই পণ মুহূর্তে ভেঙে গেল যখন ইসাবেলাকে কর্নেলার পতিতালয়ে অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। ওর ভেতরের শয়তানটা ভীষণ খুশি হয়েছিল। বলেছিল বেশ হয়েছে। এবার জীবনভর পতিতালয়ের কর্দমাক্ত খোয়ারে বন্দি থাক। লাগুক কলঙ্কের চন্দন ললাটে। কটাক্ষ করেছিল ইসাবেলাকে। তারপর নিজের প্রয়োজনে কর্নেলার পাঠানো মেয়েটার সাথে একান্তে রুমে গিয়ে বসে। মার্গারেটের মৃত্যুর পর এখানে ওর প্রায়ই আসা হয়। কর্নেলা ওর সত্যিটা জানে। এমন অনেকেই জানে। তারা স্বার্থসিদ্ধি জন্য নিকোলাসের সত্যি গোপন রেখেছে। একটা গোপন চুক্তি আছে তাদের মধ্যে। প্রয়োজন পরস্পরকে সাহায্য করে তারা। সেদিন কর্নেলার পাঠানো মেয়েটার রক্ত পান করলেও দৈহিকভাবে মিলিত হতে পারেনি। কীভাবে পারবে? ইসাবেলার ভাবনা তাড়া করে ফিরছিল। সুতরাং রাগে হিস হিস করতে করতে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। এই মেয়েটার কারণে গত কয়েক মাসে কোনো মেয়ের সাথে একান্তে সময় উপভোগ করতে পারেনি। আর না পেরেছে বার বার চেষ্টার পরও ওকে মারতে। শেষবার নোভা এসে বাঁচিয়ে দিলো। ওরা কী ভেবেছে? নিকোলাস বোকা? বোঝেনি ওদের অভিনয়? এই তুচ্ছ মানবীকে বাঁচাতে নোভার ওমন আচরণ যারপরনাই আশ্চর্য করেছে। কিন্তু চুপ করে ছিল। যেন কিছুই বোঝেনি। ইসাবেলার কাছ থেকে যত দূরে সরতে চেয়েছে ততই মুখোমুখি হয়েছে। ও যখন কথা বলা বন্ধ করেছে, নিকোলাসের খারাপ লেগেছে। কেন লেগেছে তার কারণ অনুসন্ধান করেও পায়নি। ইসাবেলাকে কাঁদতে দেখে উপেক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সান্ত্বনা দেওয়া, মিষ্টি কথা বলে সমবেদনা জানানো এসব নিকোলাসের দ্বারা অসম্ভব। তবুও সে গিয়েছিল ওর কাছে। জিজ্ঞেস করেছিল কী হয়েছে। জবাব দেওয়া দূরের কথা উলটো রাগত চোখে চেয়েছিল। নিকোলাস ভালো করেই জানে ইসাবেলা তাকে ঘৃণা করে। সুযোগ পেলে তাকে শেষ করতে ওর হাত কাঁপবে না। এত কিছু জানার পরও ইসাবেলাকে সে বাঁচিয়ে রেখেছে। কমিউনিটির পিশাচেরা ইসাবেলার রক্তের গন্ধে সর্বক্ষণ আশপাশে ঘুরঘুর করে। নিকোলাসের ভয়ে ঘাপটি মেরে আছে। ইভারলির পরিণতিতে আরো সতর্ক হয়েছে সকলে। ওকে শাস্তি দিয়েছে কেবলমাত্র ইসাবেলাকে অশোভনভাবে স্পর্শ করার জন্য। ইসাবেলাকে কেউ অশোভন স্পর্শ করলে একদম সহ্য করতে পারে না। ওই যে পেটমোটা লোকটা স্পর্শ করেছিল, তার দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে নিকোলাস। পরে অবশ্য এ নিয়ে বেজায় নাখোশ হয়েছে। মনকে এই বলে বুঝ দিয়েছে যে, পলের অনুরোধ রক্ষার্থে ওকে বাঁচিয়েছে। তাছাড়া আর কী? ইসাবেলা মরুক বাঁচুক তাতে ওর কিছু এসে যায় না। তবে এ কথা ঠিক ইসাবেলার কারণে সে বার বার ভুল করছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাপারটা রিচার্ডের নজরে পড়েছে। নাখোশ হয়ে আছে সে। নিকোলাস ক্ষমতার দেয়াল দিয়ে ইসাবেলাকে নিরাপদে রেখেছিল। যদিও একথা বাহ্যিকভাবে স্বীকার করবে না। স্বীকার না করলেও এই নিয়ে কমিউনিটির সকলে মনঃক্ষুণ্ন। নিকোলাস রাজা হওয়াতে চেপে আছে সেটা। রিচার্ড বার বার সাবধান করছেন। জোর করছেন ওকে মেরে ফেলতে। নিকোলাস চুপচাপ সেসব এড়িয়ে গেছে। বোনকে উপহার দেওয়া দাসীর নিরাপত্তা দিয়েছে। এ ছাড়া আর কিছু নয়। রিচার্ড ছেলের মনগত জটিলতা আন্দাজ করেছেন। ছেলের ওপর এখন আর প্রভাব খাটাতে না পারলেও মেয়ের ওপর পারেন। বাবা, সৎমা আর বাকিদের কথার তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ ইসাবেলাকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নোভা। নিকোলাসকে জানিয়েছিল। জবাবে সম্মতি জানিয়েছে সে। সব সমস্যার মূলে ইসাবেলা। ওকে তাই দূরে সরিয়ে দেওয়ায় সঠিক বলে মনে করে। রিচার্ড খুশি হয়। নিকোলাসও। এই মেয়ের প্রতি অদ্ভুত অজানা অনুভূতিটাকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেবে না সে। পিশাচদের এসব অনুভূতি থাকা উচিত নয়। সামান্য একটা মেয়ে মানুষের প্রতি মন কেন দূর্বল হবে? মনকে শক্ত করে। সে যোদ্ধা। কোনো যুদ্ধে হার মানবে না। হোক না তা মনের বিরুদ্ধেই। নোভা যখন এসে জানালো ইসাবেলা ফিরে গেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে নীরবে। কিন্তু মনটা খুশি হয়নি। একটা নিগূঢ় শূন্যতা জেঁকে বসেছিল। সেটাকে ঠেলে সরাতেই গ্যাব্রিয়েল্লাকে কাছে টেনেছে। স্থানীয় মন্ত্রীর সুন্দরী যুবতি মেয়ে গ্যাব্রিয়েল্লা। নিকোলাসের সত্যিটা জানার পরও সে রাজি হয়েছে বিছানা সঙ্গী হতে। শুধু গ্যাব্রিয়েল্লা কেন? যে কোনো মেয়ে ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসবে। ওকে পেতে মৃত্যুকেও গলার হার করে নেবে সানন্দে। গ্যাব্রিয়েল্লা বুকের কাপড় খুলে বসল ওর সামনে। ঝুঁকে চুমু খেতে চায় ঠোঁটে। এই একটা জিনিসে প্রচন্ড আপত্তি নিকোলাসের। যাকে তাকে চুমু খাবে না। শেষবার হয়তো মার্গারেটকে চুমু খেয়েছিল। তারপর আর কাওকে হয়তো,, থেমে গেল ভাবনা। দাঁতে দাঁত পিষল। আবার সেই ইসাবেলার ভাবনা! গ্যাব্রিয়েল্লার কাঁধ টেনে শ্বদন্ত বসিয়ে দেয়। একটু ব্যথা পেলেও প্রকাশ করে না মেয়েটা। নিকোলাসকে প্রলুব্ধ করতে শীৎকার করতে লাগল। ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িয়ে ধরে। নিকোলাসের সহচরী হতে আগ্রহী সে। মেয়েটাকে পছন্দ হলো নিকোলাসের। ইসাবেলার ভাবনা দূরীকরণে এই মেয়েটিই বেস্ট অপশন। দু’হাতে কাছে টেনে নিয়েছিল। ভেবেছিল এবার ইসাবেলার ভাবনা তাকে আর বিরক্ত করবে না। নির্বিঘ্নে গ্যাব্রিয়েল্লার সাথে রাতটা একান্তে কাটবে। বিধিবাম, স্বয়ং ইসাবেলা এসে হাজির হলো ওর সামনে। নিজের চোখকে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। ভ্রম ভেবেছিল। ভ্রম হলে সে একা দেখত, গ্যাব্রিয়েল্লা দেখবে কেন? বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। ডাকে। জবাব নেই। কাছাকাছি দাঁড়াতে জ্ঞান হারায় ইসাবেলা। মহা বিরক্ত নিকোলাস। এই মেয়ে কথায় কথায় জ্ঞান হারায় কেন? নিশ্চয়ই তাকে বেকায়দায় ফেলতে। স্মৃতির ঘোর কাটল দরজা খোলার শব্দে।

“ইসাবেল!”

দরজা ঠেলে নোভা প্রবেশ করে। উদ্বিগ্ন হয়ে বসল ইসাবেলার শিওরের অন্যপাশে। নিকোলাস কিছুতেই বুঝতে পারে না পিশাচদের ওপর এই মেয়ের এত প্রভাব কেন? প্রথমে সে তারপর নোভা এমনকি আন্দ্রেইও এই মেয়ের প্রতি মায়া দেখিয়েছে। নিশ্চয়ই জাদু টোনা জানে এই মেয়ে। হ্যাঁ, তাই হবে। যত দ্রুত সম্ভব একে দূরে পাঠাতে হবে। এত দূরে যেখান থেকে ওর ভাবনাও নিকোলাসকে স্পর্শ করবে না।

“কী হয়েছে ওর? ”

“আমাকে কেন প্রশ্ন করছ? ওকেই জিজ্ঞেস করো।”

“ও তো অচেতন।”

“চেতনা ফেরাও।”

নিকোলাস রাশভারি মুখে উঠে দাঁড়ায়। গ্যাব্রিয়েল্লাকে জোর করে বিদায় দিয়েছে। রাগ করেছে সে। ওর রাগ ভাঙাতে এক মিনিট সময় লাগবে না নিকোলাসের। চোয়ালে আঙুল ঘষতে ঘষতে মুচকি হাসল। নোভা পানি এনে ইসাবেলার চোখে মুখে ছিটা দেয়। পিটপিট করে চোখ মেলতে নিকোলাসের মুখ দেখল প্রথমে৷ নিকোলাসের মুচকি হাসি দপ করে নিভে গেল। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে এত এত মেয়েলোক থাকতে এই মেয়ের চাহনি কেন হৃদয় সমুদ্র উত্তাল করে? পারলে হৃদয়টাকে খামচে বের করে আনত এক্ষুনি। বিদ্রোহী, বেঈমান হৃদয়। অপছন্দ করে এই মেয়েকে নিকোলাস। ভীষণ অপছন্দ করে। নিকোলাসের কুপিত দৃষ্টি দেখে বিস্ফোরিত হয়ে গেল ইসাবেলার চোখ দুটো। বড়োসড়ো একটা ঢোক গিলে চোখ ফের বন্ধ করে ফেলল।

“ইসাবেল”

নোভার হাত গালে পড়তে চমকে তাকায়।জোরপূর্বক হেসে অস্ফুটে বলল,

“নোভা।”

“ঠিক আছো তুমি?”

হ্যাঁ বোধক মাথায় নাড়ায় আস্তে করে। চোখের কোণা দিয়ে নিকোলাসকে দেখছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে ও যেন এখান থেকে চলে যায়। সব প্রার্থনা কবুল হয় না। এটাও তেমন। নোভা ওকে বসতে সাহায্য করে। তারপর বলল,

“পল আমাকে সবটা বলেছে। আমি খুব রেগে আছি ইসাবেল। কেন ফিরেছ আবার? বলেছিলাম না চলে যেতে?”

ধমকের সুরে কথা শেষ করল নোভা। ইসাবেলা এবার কী বলবে? আগাথাকে স্মরণ করেও লাভ হলো না। ওই তো দূরে তাঁর প্রেতাত্মা দাঁড়িয়ে। বেশ ফাঁসিয়েছে তাকে। পথ না পেয়ে ঠোঁট উলটে কেঁদে দিলো। নোভা যত প্রশ্ন করে ও তত জোরে কাঁদে। নিকোলাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ দেখছিল। একপর্যায়ে রেগে ধমকে উঠল।

“চুপ, একদম চুপ।”

নোভা এবং ইসাবেলা চমকে উঠল। ইসাবেলার বুক ঢিপঢিপ করছে। হাত পা বুঝি ঠাণ্ডা হয়ে এলো।

“অনেকক্ষণ ধরে দুজনের নাটক দেখছি আমি। একজন প্রশ্ন করছে আরেকজন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। নোভা, তুই বলেছিলে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিস। ও এখানে কেন তাহলে?”

“সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কেন ফিরেছ ইসাবেল? জবাব দাও?”

ইসাবেলা ঠোঁট উলটে কাঁদতে যাবে তখনই নিকোলাসের হাত ওর গলায় এসে থামে। খুব জোরে নয়। মৃদুভাবে চেপে ধরে ওর গলা।

“আরেকবার ভ্যা করবে তো এখনই শেষ করে ফেলব। বলো কেন ফিরেছ?”

কাঁদবে তো দূরের কথা দম ফেলতেই ভুলে গেল ইসাবেলা। নিকোলাসের হাতের আঙুল গলায় মৃদু চাপ দিতে ঠোঁট দু’টো ঈষৎ ফাঁকা হয়ে গেল। নিকোলাসের অগ্নিদৃষ্টিতে এবার ভিন্ন কিছু জেগে ওঠে। ইসাবেলার ঠোঁটে স্থির হয় মনোযোগ।

“বড়োভাই?”

নোভার উদ্বিগ্ন গলার স্বরে হুঁশ ফেরে নিকোলাসের। মাথা ঝাঁকিয়ে হালকা গলা ঝেড়ে বলল,

“কালই আবার ফেরত পাঠাবি এই আপদটাকে। কাল মানে কাল নোভা। এর এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

ইসাবেলার গলা ছেড়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। জোরে শ্বাস ছেড়ে গলায় হাত বুলিয়ে ইসাবেলা সেদিকে তাকিয়ে রেগে বিড়বিড় করে বলে,

“ব্লাডি ব্লাড সাকার।”

কথাটা ঠিক বিড়বিড় করা হয়নি। বেশ জোরেই বলে ফেলেছে অসতর্কে। নোভা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায় ওর দিকে। নিকোলাসের পা থেমে গেছে। ঘুরে দাঁড়ায়।

“কী বলেছ তুমি?”

ইসাবেলা ঠোঁটে হাত ঢেকে মাথা ঝাঁকায়। নিকোলাস ওর দিকে আসতে এক লাফে নোভার পেছনে গিয়ে লুকাল।

“তোমার সাথে জরুরি কথা আছে নোভা। প্লিজ তোমার ভাইকে যেতে বলো।”

আস্তে আস্তে বললেও নিকোলাস শুনল সে কথা। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ওর। এতই যখন ভয় ফিরে এসেছে কেন? নির্বোধ। নোভা ভাইয়ের দিকে অনুনয়ের চোখে তাকাল। ঘুরে দাঁড়ায় নিকোলাস। যেতে যেতে বলে,

“কাল দুপুরে ওকে যদি দেখেছি মনে রেখো নোভা, ওইদিনই ওর জীবনের শেষদিন।”

ইসাবেলা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে আর মনে মনে বলে,

“তোর জীবনের শেষদিন না দেখে আমি মরব না না রে হারামজাদা।”

“ইসাবেল”

কোমরে হাত রেখে ঘুরে দাঁড়ায় নোভা। পল তাকে জানিয়েছে ইসাবেলা জোর করে আবার ফিরেছে এখানে। কিন্তু কেন? এত ভয় দেখালো, অপমান করল তারপরও কেন ফিরেছে? ও তো বাড়িই চলে যেতে চেয়েছিল। নোভা ওর সেই ইচ্ছে পূরণ করেছে।

“কেন ফিরেছ তুমি?”

“ক্ষমা চাইতে।”

“কী?”

“ও-ওই যে খরগোশ_”

নোভা হাত তুলে চুপ করিয়ে দেয়।

“আগেই বলেছি ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। যা সত্যি তাই বলেছ। আবার কেন একই কথা বলছ?”

দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল নোভা। ইসাবেলা আগাথাকে দেখছে। সে ইশারায় উৎসাহ দিচ্ছে এই টপিক চালিয়ে যেতে।

“নোভা প্লিজ!” ইসাবেলা কাতর গলায় বলল। নোভার হাতটা টেনে ধরে মাথা নুয়ে ফুঁপিয়ে বলল,

“আমাকে বাঁচিয়েছ তুমি। হতে পারো পরিস্থিতির বশে পিশাচ কিন্তু মনের দিক দিয়ে তুমি মানুষ। খুব ভালো মানুষ। ডাইনি নও। খরগোশটাকে ইচ্ছে করে খাওনি।”

“ইচ্ছে করে খেয়েছি ওটাকে আমি।”

“আমরা যেমন খিদে পেলে ভাত খাই, পিপাসা পেলে পানি পান করি। তুমিও তেমনি ক্ষুধাতৃষ্ণার তাড়নায় খরগোশটাকে খেয়েছ। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। এটা তোমার শরীরবৃত্তীয় প্রবৃত্তি, চাহিদা। কিন্তু তখন রাগের মাথায় কথাটা আমি বুঝতে পারিনি। আমার মা বলেন উপকারীর উপকার স্বীকার করতে হয়। আমি উলটো তিরস্কার করেছি তোমাকে। অকৃতজ্ঞ আমি।”

ইসাবেলার চোখের পানি নোভার হাতের ওপর পড়ে। এই পানি মেকি কান্নার নয়। ইসাবেলা সত্যিই অনুতপ্ত। নোভা হাত ছাড়িয়ে বলল,

“হয়েছে, হয়েছে। যাও ক্ষমা করে দিয়েছি।” ইসাবেলা খুশি হয়। পরক্ষণেই খুশিটা ম্লান হলো। এত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করলে এখানে থাকা হবে না যে। থাকতে না পারলে প্রতিশোধ নেবে কী করে? ভ্যালেরিয়ার শেষ কাজ এখন তো ওকেই সমাপ্ত করতে হবে। অদূরে মোরগ ডেকে উঠল। নোভা বলল,

“পলকে বলছি তোমাকে আবার ট্রেনে তুলে দিতে। ক্ষমা তো পেয়েছ এখন নিশ্চয়ই ফিরতে বাধা নেই?”

ইসাবেলা হ্যাঁ, না কিছু বলল না। নোভা জবাবের অপেক্ষা করে না। ভোর হওয়ার আগেই ফিরে গেল কফিনে। ইসাবেলা চিন্তিত মুখে বসল বিছানার ওপর। কীভাবে থাকবে এখানে? আগাথাও হাওয়া।

চলবে,,,

আজ একটু নিকোলাসের পয়েন্ট অফ ভিউ দিলাম। কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here