তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৩৩ Writer তানিয়া শেখ

0
431

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৩৩
Writer তানিয়া শেখ

আজ একটা সন্দেহজনক ঘটনা ঘটল। আপাদমস্তক কালো কাপড়ে আবৃত দুজন মানুষকে দেখেছে নিকোলাস। নৈশ তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিরছিল লিভিয়ার বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনের রাস্তাটা দিয়ে সোভিয়েত সৈন্যদের গাড়ি যাচ্ছিল। নিকোলাস ধোঁয়ার কুন্ডলি হয়ে দরজা গলে ঘরের ভেতরে ঢুকল। সৈন্যদের গাড়ির শব্দ যতক্ষণ শুনতে পেয়েছিল নিচতলাতেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা চলে যেতে ও বসার ঘরে গিয়ে বসল। আর তখনই শব্দটা কানে এলো। শব্দটা তীব্র নয়। সাধারণভাবে কারো কানেই লাগবে না হয়তো কিন্তু নিকোলাসের লাগল। সতর্ক হলো ও। উঠে দাঁড়ায় নিঃশব্দে। পর্দা সরিয়ে দেখা রিস্ক হবে। কারণ শব্দটা আসছে ঠিক ওদিক দিয়ে। ও হাওয়ায় মিশে গেল। উত্তরদিকের জানালার ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো বাইরে। বাড়ির পেছনের গম খেতে দাঁড়িয়ে ছিল সেই আপাদমস্তক কালো কাপড়ে আবৃত মানুষ দুটো। নিকোলাস অদূরের উইন্ডমিলের কাছাকাছি নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ায়। লোকদুটোর ভাবগতিক ও দেখতে চেয়েছিল। একদৃষ্টে ওরা ঘাড় তুলে তাকিয়ে ছিল দোতলার ওই ঘরটাতে যেখানে ও আর ইসাবেলা থাকে। হঠাৎ ইসাবেলার ছায়া পড়ে জানালায়। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে জানালার দিকে। একটানে সরিয়ে দিলো পর্দা। ফ্রেন্স জানালার কবাট খুব সাবধানে খুললো। একেবারে খুললো না। ওর হয়তো গরম লাগছিল বলে সামান্য একটু ফাঁকা করে দিলো জানালা। তারপর সরে গেল সেখান থেকে। মানুষ দুটো ওর ছায়া দেখে পরস্পরের দিকে চেয়ে মাথা নাড়ায়। ওদের এই আচরণ নিকোলাসকে চিন্তিত করে। সিদ্ধান্ত নেয় শেষ করে ফেলবে ওদের। শ্বদন্ত বেরিয়ে এসেছিল, চোখ দুটো পৈশাচিকতায় জ্বলজ্বল করছিল। ও ছুটে আসবে ঠিক তখনই ডান পাশের বাড়ির সামনে গুলাগুলি শুরু হলো। সৈন্যদের চিৎকার আর সাধারণ মানুষের আহাজারিতে একটু দৃষ্টি সরেছিল। ওই একটুখানি সময়েই বাড়ির পেছনের মানুষদুটোকে হারিয়ে ফেলে নিকোলাস। কোথাও আর খুঁজে পাওয়া গেল না। চিন্তিত মুখে ফিরে এলো। ভোর হলে ও মৃতের ন্যায় হবে। তখন যদি ওরা আক্রমণ করে? আগের মতো নিশ্চিন্তে ওপরে শুতে পারবে না আজ। এ বাড়ির সবটা নিকোলাস নখদর্পনে। বেসমেন্টের এককোণে ছোট্ট খুপরি মতো স্থান আছে। বড্ড নোংরা আর স্যাঁতসেঁতে। ইঁদুর, মাকড়শার অভাব নেই সেখানে। ঠিক করল আজ ওখানেই ইসাবেলার থাকার ব্যবস্থা করবে। নিজের জন্য অন্য চিন্তা করল। আজ আর এ বাড়িতে থাকবে না। ঝুঁকি নিতে নারাজ ও। বেসমেন্টের এই জায়গাটা যতদূর পারা যায় পরিস্কার করল। এখনও থাকার জন্য পুরোপুরি উপযোগী না। একটুখানি কাঠের ছিদ্র ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই আলো বাতাস ঢোকার। কাঠের দেওয়ালের গায়ে গায়ে এখনও মাকড়শা, পোকামাকড় নির্ভয়ে হাঁটছে। নিকোলাসের হাতে সময় কম। বেসমেন্টের পুরোনো জিনিসের মধ্যে হাতুড়ি আর লোহার রড পেল ও। সেগুলো দিয়ে ঘিরে দেওয়া কাঠের তক্তার তিনটে আলাদা করে। এখান থেকে গম খেত খুব বেশি দূরে নয়। কাঠের তক্তা তিনটে আবার কোনোরকমে বসিয়ে দেয় আগের মতো। নিচের একটা ঘর থেকে একটা ম্যাট্রেস আর বালিশ এনে রাখল সেখানে। হ্যারিকেন জ্বালিয়ে একনজর দেখে নিলো। ইসাবেলার বোধহয় এখানে থাকতে সমস্যা হবে। যে গরম পড়েছে! এর মাঝে এই আলো-বাতাসহীন বদ্ধ জায়গায় থাকাটা কষ্টকর। ইসাবেলাকে সবটা বললে নিশ্চয়ই কষ্টটা ও করবে। এছাড়া উপায়ও নেই আর। নিকোলাস ওপরে উঠে এলো। ইসাবেলা বসেছিল বিছানায় পা ঝুলিয়ে জানালা মুখী হয়ে। নিকোলাস রুমে ঢুকতেও ফিরে দেখল না। কিন্তু ওর মনোযোগ সম্পূর্ণই নিকোলাসের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে। ওর পাশের বিছানার ম্যাট্রেস বসে গেল। সোঁদা মাটির পরিচিত গন্ধটা এবার খুব কাছ থেকে পাচ্ছে ইসাবেলা। বিছানা শক্ত করে ধরল হাত দুটো। তাকাবে না তাকাবে করেও তাকাল পাশে। শ্যেনদৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে নিকোলাস। চোখ সরিয়ে নিলো ইসাবেলা। টের পাচ্ছে বুকের ভেতরের ঢিপঢিপানির শব্দটা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। ওর আজকাল মনে হয় অল্প বয়সেই হার্টের অসুখে ধরবে। তারপর একসময় হার্ট ফেল করে মরে যাবে।

“তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম জানালার কাছে না যেতে।”

ইসাবেলার জিহ্বা ভার হয়ে আছে। কোলের ওপর রাখা হাতদুটো অস্থির। নিকোলাস ভেবে এসেছিল এই মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটি এড়িয়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে? নিকোলাস অবাধ্যতা, অসম্মান একদম সহ্য করতে পারে না। এই মেয়ে সেটাই করবে। আবার এখন কথার জবাব দিচ্ছে না।

“বেলা?”

“উম,, আমার গরম লাগছিল।” মিনমিনে গলায় বলল ও। নিকোলাস কপাল চুলকে বলে,

“হাত পাখা কী করেছ? গরমের জন্য ওটা ছিল তো?”

ইসাবেলা এই জীবন্মৃত পিশাচকে কী করে বুঝাবে সারাদিন একটানা পাখা ঘুরাতে কত কষ্ট হয়। নিকোলাসের ব্যথাবোধ না থাকলেও ইসাবেলার আছে। সারাদিন হাতপাখা ঘুরাতে ঘুরাতে হাতটাই ব্যথা হয়ে গেছে। কপট রাগে মুখ ফুলিয়ে রইল।

“কতবার বলেছি কথা জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকবে না। আজ তোমার এই ভুলের জন্য কী হয়েছে জানো?”

“কী হয়েছে?” চকিতে তাকাল নিকোলাসের দিকে।

নিকোলাস সব ঘটনা খুলে বলতে আতঙ্কিত হয়ে উঠল ইসাবেলা।

“তাহলে লিভিয়া ঠিকই ছিলেন। আমার মন বলছিল লিভিয়ার কথা ফলবে। এখন কী হবে? লোকগুলো কী মতলবে এসেছিল ঈশ্বর জানে। আমার ভয় করছে নিকোলাস।”

নিকোলাসের দিকে ফিরে বসল ও। ওর বিপন্ন মুখে খানিকক্ষণ চেয়ে রইল নিকোলাস। রাগটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। অনেকদিন এভাবে পাশাপাশি বসে না দুজন। অনেকদিন এভাবে কথা বলেনি। আজ নিকোলাসের মনে হলো- ভীষণ মিস করছিল ইসাবেলা কণ্ঠে নিকোলাস ডাকটা। ভীষণ মিস করছিল ইসাবেলার ওই ডাগর নয়নের চাহনি।

“নিকোলাস!”

দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নিকোলাস। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আপাতত নিচে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পেয়েছি। চলো দেখাচ্ছি।”

ইসাবেলা ক্রাচে ভর করে উঠে দাঁড়ায়। নিকোলাস বিছানা থেকে ওর হাত পাখা আর ব্যান্ডেজ নিলো এক হাতে অন্য হাতে হ্যারিকেন। ইসাবেলা ক্রাচে ভর করে ঠুক ঠুক করে ওর পিছু পিছু হাঁটছে। দরজা খুলে ওরা করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ির মাথায় এলো। সেদিন সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে গিয়ে ইসাবেলার বেহাল অবস্থা হয়েছিল। আজ তাই সিঁড়ি দেখে থমকে দাঁড়ায়। তার ওপর আজ রাত। নিকোলাসের হাতের হ্যারিকেনের সলতে কমিয়ে রাখা হয়েছে। ওইটুকু আলোতে ক্রাচের সাহায্যে সিঁড়ি পার হওয়া কম ভীতির নয়।
নিকোলাস দু সিঁড়ি নেমে ওর থেমে যাওয়াতে ঘুরে জিজ্ঞেস করল,

“সমস্যা?”

“না।”

নিকোলাস জানে ইসাবেলা মিথ্যা বলছে। তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ইসাবেলা লম্বা শ্বাস নিয়ে সিঁড়িতে এক পা রাখে। পায়ে খুব চাপ লাগে এই সময়। ঠোঁট দু’টো শক্ত করে ভয়ে ভয়ে সাবধানে এক পা এক পা করে নামছিল। ওকে দেখে নিকোলাসের খারাপ লাগল। সেদিনের ওই ব্যবহারে মনে মনে অনুতপ্ত কম হয়নি। কিন্তু ইগো বজায় রাখতে এড়িয়ে গেছে ইসাবেলাকে। এখন আর তা পারল না। হাতের জিনিস সিঁড়ির নিচে রেখে ওর দিকে উঠে এলো। ইসাবেলাকে কিছু ভাবার অবসর না দিয়ে কোলে তুলে নেয়। চমকে নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে ইসাবেলা। সশব্দে নিচে পড়ে যায় ক্রাচটা। হতবুদ্ধি হয়ে ইসাবেলা বলল,

“কী করছেন?”

“সাহায্য।”

“আমি সাহায্য চাইনি। আমার এক পা এখনও ঠিক আছে। সেদিন একাই নেমেছিলাম আজও পারব। নামান।”

নিকোলাস ওর কথা উপেক্ষা করে কোলে তুলে নামতে লাগল। ইসাবেলা রেগে যায়।

“নামাতে বলেছি আপনাকে নিকোলাস। নামান বলছি।”

“চুপচাপ কোলে থাকো নয়তো ছুঁড়ে ফেলে দেবো নিচে।”

“তাই দেন তবুও ভালো।”

নিকোলাসের এই স্বেচ্ছাচারিতাকে অপছন্দ করে ইসাবেলা। ইচ্ছে হলো সাহায্য করল, ইচ্ছে হলো তিক্ত কথা শুনিয়ে দিলো। কেন এমন করবে?

“আ’ম সরি।”

“হুঁ?” অবিশ্বাস্য চোখে নিকোলাসের মুখের দিকে তাকাল ইসাবেলা। নিকোলাস বিরক্ত হওয়ার ভান ধরে বলল,

“কানে খাটো তুমি?”

“হ্যাঁ, আরেকবার বলেন।”

“মেজাজ খারাপ করবে না। আমি জানি তুমি শুনেছ।”

“না, শুনিনি। আবার বলেন সরি।”

নিকোলাস সিঁড়ির নিচে নেমে এসে থামল। ইসাবেলার নিষ্পাপ ভাব ধরে থাকা মুখটার দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলল,

“তুমি সত্যি একটা নির্বোধ।”

“হুম, এখন বলেন কী বলছিলেন। একটু একটু শুনেছি সসস __?”

“আ’ম সরি, বেলা। আ’ম রিয়েলি সরি। আমার ওভাবে বলা উচিত হয়নি। শুনেছ এবার। আবার বলব?”

ইসাবেলা মাথা নাড়ায় সামনে পেছনে। সে শত, সহস্র বার শুনতে চায় নিকোলাসের সরি। নিকোলাসের রুক্ষ আচরণে এতদিন যে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে তুলেছিল আজ সব ধসে গেল। এত আনন্দ হচ্ছে ওর যে ঠোঁট দুটো হাসবে বলে প্রসস্থ হতে চায়। ঠোঁট শক্ত করে হাসি চেপে আছে। নিকোলাস ঝুঁকে আসতে হাসিটা স্তব্ধ হয়ে গেল। ওদের মুখটা এখন খুব কাছে। শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে ইসাবেলা বলল,

“লাগবে না। শুনেছি।”

“কেন আরেকবার শোনো, তারপর আরেকবার এভাবে অনেকবার। আজ না হয় ভোর পর্যন্ত আমি তোমাকে সরি বলব। এটা আমার শাস্তি হোক। তোমার মনে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি হোক আমার।”

মুখ ওর ঠোঁটের কাছে এনে চাপা সম্মোহনী গলায় বলল নিকোলাস। ইসাবেলা টের পাচ্ছে নিকোলাসের ভারী শ্বাস পড়ছে ওর ঠোঁটের ওপর। ইসাবেলার হাত দুটোর বাঁধন আরও শক্ত হলো ওর গলায়। নিকোলাস ওর ঠোঁটে কোণে চুমু দিতে গিয়ে থেমে যায়। কী করতে যাচ্ছিল এসব? মুখ সরিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোণের দুষ্টুমি মিলিয়ে গিয়ে সেখানে জেগে ওঠে গম্ভীরতা। ইসাবেলাও বিব্রত, লজ্জিত। গলা থেকে হাত ছাড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে মুখ নুয়ে রইল। ওর কাছে মনে হলো আজও নিকোলাস অন্যবারের মতো ওকে বিব্রত করতে মজা করেছে। কপট রাগে দাঁত কামড়ে বলল,

“আমাকে নামান।”

“চুপচাপ থাকো বেলা। যখন নামানোর নামিয়ে দেবো।”

“আমাকে বারবার লজ্জা দিয়ে খুব আনন্দ হয় তাই না? আমারও দিন আসবে। এর শোধ আমিও নেবো।”

মুখ ঘুরিয়ে নিলো ইসাবেলা। কান্না পাচ্ছে এখন ওর। নিকোলাস কোনো কথা বলল না। নিজেকে বরাবরই কন্ট্রোলে রেখেছে ও। কিন্তু ইদানীং ইসাবেলার কাছে এলে সেই কন্ট্রোল হারিয়ে বসে। হ্যাঁ, এটা সত্য আগে যতবার ইসাবেলার কাছে এসেছিল সবটা মজাচ্ছলে। ইসাবেলাকে দুর্বল বলে প্রমাণ করতে। কিন্তু আজ যা করেছে তাতে কোনো মজা ছিল না। দুর্বলতা একা ইসাবেলার নয় ওরও প্রকাশ পেয়েছে। এসব কারণে দুরত্ব বাড়িয়েছিল। ইসাবেলার ওপর অকারণে রাগ দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সব ভেস্তে গেল। নিকোলাসকে মানতে হলোই ও দুর্বল ইসাবেলা প্রতি। ওর দু ঠোঁটের নেশা ওকে রক্তের নেশার থেকেও বেশি কাবু করে। ইসাবেলার সান্নিধ্যে এলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে। একে কী বলে? নিছক শারীরিক আকর্ষণ, না আরও কিছু? যাই হোক নিকোলাস এই আকর্ষণ কাটিয়ে উঠবে, উঠতেই হবে ওকে।

বেসমেন্টে এসে ইসাবেলাকে নামিয়ে দিলো নিকোলাস। ম্যাট্রেস দেখিয়ে বলল,

“এখানে বসো আমি আসছি।”

নিকোলাস চলে যেতে সংকীর্ণ জায়গাটাতে ভালো করে নজর বুলিয়ে নিলো ইসাবেলা। ভ্যাপসা বিশ্রী গন্ধে নাক কুঁচকায়। ম্যাট্রেসের মাথার দিকের দু হাত দূরের মোমটা পুড়ে অর্ধেক হয়েছে। মোমের আলোতে ভূতুড়ে লাগছে আশপাশটা। খচখচ করে ইঁদুর দৌড়ে গেল এখান থেকে ওখানে। নিজেদের এতদিনের বসতিতে মানুষের উৎপাত পছন্দ হলো না বোধহয়। কিচকিচ করে ডাক ছেড়ে তাই যেন জানান দিচ্ছে। নিকোলাসের ওই পরিত্যক্ত পুরোনো প্রাসাদ, গুহা আর জঙ্গলের অভিজ্ঞতার দরুন ইসাবেলার আজ আর ভয় করছে না। গুহার ভেতর সাপও দেখেছিল। আর জঙ্গলে সেই জোঁকের কথা স্মরণ করতে ওর শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। এখানে নিশ্চয়ই ওসব থাকবে না। পা তুলে ম্যাট্রেসে বসল।

“দুপুর পর্যন্ত এখানে থাকতে পারবে?”

হাতে দুটো প্যাকেট নিয়ে ঢুকল নিকোলাস। খুপরির মুখটা ভারী লম্বা দুটো কাঠ দিয়ে বন্ধ করে দিলো। প্যাকেট রেখে আবারও জিজ্ঞেস করল,

“পারবে?”

মাথা নাড়াল ইসাবেলা। সে বেশ পারবে। তাছাড়া নিকোলাস পাশে থাকতে ভয় কীসের!
একটু আগে দুজনের মধ্যে যা হয়েছিল নিকোলাস তা ভুলে সহজ হতে চাইছে। কিন্তু ইসাবেলা সহজ হলে তো! কেমন মুখ ফুলিয়ে আছে। গলা ঝেড়ে নিকোলাস মাথার দিকের দেওয়ালের কাঠ দেখিয়ে বলল,

“এই যে দেখছ কাঠের তক্তা তিনটে, এটা আমি খুলে কোনোরকমে লাগিয়ে রেখেছি। দুপুরের আগে যদি ওরা এখানে আসে এবং বেসমেন্ট পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয় তাহলে এখান দিয়ে বেরিয়ে যাবে। সামনের গম খেতের পূর্ব দিকে গেলে জঙ্গল পাবে। সেখানেই থেকো আমি খুঁজে নেবো।”

“আপনি এখানে থাকবেন না?”

“আমি অন্য কোথাও থাকব।”

“কোথায়?”

নিকোলাস সে কথার জবাব না দিয়ে প্যাকেট দেখিয়ে বলল,

“এখানে খাবার আর পানীয় আছে। খিদে পেলে খেয়ে নিয়ো। নিরাপদে থেকো বেলা।”

ইসাবেলার স্থির দৃষ্টি এড়িয়ে নিকোলাস হ্যারিকেন নিভিয়ে দিলো।

“কোনো রকমের আলো জ্বালাবে না।”

মোমবাতির আলো ফু দিয়ে নিভাতে বেসমেন্টের এই খুপরি ঘরে ঘুটঘুটে আঁধারে ঢেকে যায়। কিছুক্ষণ ইসাবেলা নিকষ কালো অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখল না চোখের সামনে। আস্তে আস্তে চাঁদের আলো এসে ঢুকল কাঠের ফাঁকফোকর গলে। সেই আলোতে নিকোলাসকে ধোঁয়া হয়ে উড়ে যেতে দেখল আলোর ভেতর দিয়ে। সেদিক একদৃষ্টে চেয়ে রইল ও। বিষণ্ণ মুখখানা আরও করুণ হয়ে ওঠে। চোখ দুটো করে টলমল।

চলবে,,,

গতকালই দিতাম এই পর্বটা কিন্তু ওয়াইফাই ছিল না বলে দিতে পারিনি। সতেরশো এর বেশি শব্দ আছে। ছোটো পর্ব বললে রাগ করব🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here