আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে #৩য়_পর্ব

0
376

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#৩য়_পর্ব

অন্নার বিস্মিত, ভীত মুখ উপেক্ষা করেই অর্জুন প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুই আমার প্রেমিকা?”

প্রশ্নটি মস্তিষ্কে ঝংকার তুললো। মিনিট খানেক সময় লাগলো বিষয় বুঝতে। যখন ধাতস্থ হলো ব্যাপারখানা ঠিক কি এবং কি ঘটতে যাচ্ছে অমনি অন্না উলটো দৌড় দিলো। ভেবেছিলো এই যাত্রায় রক্ষে কিন্তু তখন ই অর্জুনের মোটা পুরুষালী কন্ঠ কানে এলো,
“এই অন্না শোন, দাঁড়া বলছি। অন্নার বা’চ্চা দাঁড়া”

পেছনে তাকাতেই ছোটার গতি বাড়ালো অন্না, কারণ অর্জুনদাও তার পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর চেচাচ্ছে। কোনো থামাথামি নেই, তেজহীন সূর্যের তাপে অন্না অর্জুনের যেনো দপূড় প্রতিযোগিতা চলছে। শুধু শেষ সীমানাটি কোথায়, জানা নেই। পড়ন্ত বিকেলে পাড়ার রাস্তা ফাঁকা, এই সময়টিতে ক্লান্ত মানুষেরা নিজেদের যাবতীয় কাজের অবসান ঘটিয়ে ঘুমায়, নয় জিরোয়। তাইতো মোড়ের স্বপন পানওয়ালার দোকান ও বন্ধ। ভাগ্যিস রাস্তায় এখন মানুষ নেই, নয়তো কালকের হেডলাইন হতো, “অর্জুন দা অন্নার প্রেমে এতোই মজেছে যে মাঝরাস্তায় সে অন্নার পেছনে ছুটছে”। কিন্তু এ যে প্রেমদৌড় নয়, এ হলো জীবন বাঁচানোর দৌড়। অর্জুনদার ক্রোধের হাত থেকে বাঁচার দৌড়। তার দপদপ করা শিরা, রক্তিম চক্ষু ই সাক্ষী আজ অন্নাকে কাঁচা চি’বি’য়ে খাবে। অন্না দৌড়াচ্ছে আর মনে মনে গুটিকয়েক খাস বাংলা গা’লি বকছে নিজের সইদের। মীরজাফরের দল জীবনে শুধরালো না। ক্রমান্বয়ে নিজের গতি বাড়ালো অন্না, যেনো পেছনে কোনো হিং’স্র বা’ঘ পড়েছে। একটা সময় অর্জুনের কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে গেলো। অন্নাও দৌড়ে অন্য পাড়ায় ঢুকে পড়লো। পেছনে ফিরে অর্জুনের অবস্থান দেখার চেষ্টা করতেই দেখতে পেলো তার থেকে বেশ কিছুটা দূরে অর্জুন রাস্তার উপর উপুড় হয়ে সে শুয়ে আছে। নড়ছে, চড়ছে না। অন্নার বুক ধক করে উঠলো৷ এতো উঁচুলম্বা ছেলে হুট করে রাস্তায় গড়াগড়ি খাবে ব্যাপারখানা বোধগম্য হচ্ছে না। অন্না ছুটে গেলো অর্জুনের কাছে। দু চার বার ধাক্কা দিলো, কিন্তু সাড়া পেলো না। অর্জুন কে ঠেলে চিত করলো, শ্বাসের বেগ ক্ষীন। অন্নার বুকে এবার ভয় চাপলো। নিগূঢ় ভয়। অর্জুনদা কি তার পেছনে ছুটতে ছুটতে পটল তুললো? ভয়ে কাঁপছে অন্না। ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে বললো,
“অর্জুনদা, উঠো না। ভয় হচ্ছে”

এর মাঝেই এক রিক্সাওয়ালা তার কাছে এসে বললো,
“মামনী, তুমি কাঁদছো কেনো?”

অন্না অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

****

ফিনাইলের তীক্ষ্ণ গন্ধ নাকে আসছে। হাতে চিনচিনে ব্যাথা। ধীরে ধীরে চোখ মেললো অর্জুন। তার মাথার উপর সাদা সিলিং। বুকের যন্ত্রণাটা এখন ক্ষীন। মাথাটা হালকা ভার ভার লাগছে। পাশ ফিরে তাকালো আশপাশে। একটা ছোটখাটো ক্লিনিকের সফেদ বিছানায় শুয়ে আছে সে। ফিনাইলের তীক্ষ্ণ গন্ধ সহ্য হয় না তার, ফলে নাক মুখ কুচকে এলো। হাতের চিনচিনে ব্যাথার উৎস খুঁজে পেলো সে। ক্যানোলা লাগানো, স্যালাইন চলছে। তার অবস্থান ধাতস্থ হতেই নজর গেলো তার বা পাশের প্লাস্টিকের চেয়ারটায়। অন্না ঝিমুচ্ছে, তার জামার হাতা কনুই অবধি তোলা। মুখখানা মূর্ছা গেছে। ক্লান্তি শুষ্ক মুখে বারবার এসে পড়ছে অবাধ্য কোকরানো চুলগুলো। এমন সময় বয়স্ক নার্স প্রবেশ করলো রুমে। হাতে থাকা প্লেটটা শব্দ করেই রাখলো সে। ফলে অন্না হড়বড়িয়ে উঠলো। অর্জুনকে চোখ মেলতে দেখে ব্যাস্ত গলায় বললো,
“এখন কেমন লাগছে অর্জুন দা?”
“আমি এখানে কেন?”

নার্স তখন বললো,
“তুমি বেহুশ হয়ে গিয়েছিলে, হিমোগ্লোবিন তো কম তো। তাই তো ডাক্তার বললেন র’ক্ত দিতে হবে। ভাগ্যিস মেয়েটার র’ক্তের গ্রুপ মিললো। কিছু ইঞ্জেকশন দিয়েছে। সময় সময় দিও কিন্তু। এই বয়সে এমন অসুখ তো ভালো না”
“আমাকে র’ক্ত ও দিয়েছে?”
“হ্যা”
“এখন ই বের করুন, আমি ওর র’ক্ত নিবো না”

ভনীতাছাড়া বলে উঠলো অর্জুন। অর্জুনের এমন কথায় হতবিহ্বল হয়ে গেলো নার্স। অন্নার মুখখানা হা হয়ে গেলো। অবাক কন্ঠে বললো,
“কেনো? আমার র’ক্তে কি সমস্যা?”
“আবার জিজ্ঞেস করিস, আজ আমি হাসপাতালে কেন? তোর জন্য। আর পাড়ায় কি রটিয়েছিস আমি জানি না। নিবো না তোর র’ক্ত। নার্স আপনি ওর রক্তটুকু বের করে নিন তো।”
“দেওয়া রক্ত বের করে কিভাবে?”
“আমি জানি না, আপনি আমার পারমিশন ছাড়া দিলেন কেন?”

অর্জুনের অস্থিরতা বাড়লো। অহেতুক পাগলামি প্রথমে চুপ করে সহ্য করলেও বেশিক্ষণ সহ্য করলো না অন্না। তার সহ্যের ও একটা বাঁধ আছে। সে অর্জুনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নার্সকে বলে উঠলো,
“ছাড়ুন তো উনার কথা, ছোটবেলায় কাকীমার হাত থেকে পড়ে মাথায় চোট পেয়েছে। তার সব ক’টা ছেড়া”
“আমার তার ছেড়া?”
“একদম চুপ। আর একটা প্যা পু শুনেছি তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। একে মাঝরাস্তায় ভিরমি খাবে আবার নাক উঁচুগিরি দেখাবে। একদম চুপ”

অন্নার রুদ্ররুপ দেখে হকচকিয়ে গেলো অর্জুন। আপনাআপনি সে চুপ করে গেলো। অন্না বুঝলো ঝা’ড়ি কাজে দিয়েছে, অর্জুনদার প্যা পু আজকের মতো বন্ধ। নার্স মুচকি হেসে চলে গেলেন। অর্জুন কিছু বলছে না, কিন্তু সে অন্নার দিকে ক্রোধাগ্নি প্রয়োগ করতেও পিছপা হচ্ছে না। দৃষ্টি দিয়ে যদি কাউকে ভ’স্ম করা যেতো তবে অর্জুন হয়তো সত্যি ই অন্নাকে ভস্ম করে দিতো।

অন্না এবং অর্জুন বাড়ি ফিরলো রাত ন’টা নাগাদ। অন্না বাড়িতে জানিয়ে দেওয়ায় অর্জুনের বাবা দীপংকরবাবুএবং অন্নার বাবা প্রদীপবাবু ক্লিনিকে চলে গিয়েছিলেন। অন্নার উপস্থিত বুদ্ধির বেশ প্রশংসা করলেন দীপংকর বাবু। অর্জুনের মা কাকলী দেবী তো অন্নাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে মুখে ফ্যানা তুললেন। মেয়েটি র’ক্ত দিয়ে প্রাণ না বাঁচালে ছেলেটি না জানে কি অবস্থায় থাকতো। কিন্তু তারা তো জানেন না, ছেলের অসুস্থতার উৎস ও এই নারীটি। অর্জুন যখন বিনা ধন্যবাদেই উপরে চলে গেলো তখন কাকলী দেবী বললেন,
“ও একটু এমন ই রে, মনে কিছু নিস না”

*****

অর্জুনের জ্বর আজ দুদিন। পড়াতে আসছে না সে অন্নাকে। তাই অন্নার সুখের অন্ত নেই। হিসাববিজ্ঞান বই সে শিকে তুলে রেখেছে। রিতাদেবীর বকাবকির মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু অন্না গায়ে মাখাচ্ছে না। কিন্তু মনে মনে খচখচানিটাও অব্যাহত রয়েছে। অর্জুনদার জ্বর হলো কেন? সে কি ভীষণ অসুস্থ? তাই ভালো ভাড়াটিয়া এবং ছাত্রী রুপে তাকে দেখতে এসেছে। সদরে কড়া নাড়তেই কাকলী দেবি দরজা খুললেন, হাসি মুখে বললেন,
“তুই তাহলে এমুখো হলি?”
“অর্জুনদা কেমন আছে?”
“জ্বর টা কমছে না, ঔষধ খাচ্ছে। যা না, ভেতরেই আছে। যেয়ে দেখ কোনো মোটাই বই এ মুখ গুজে আছে। তুই অর্জুনের ঘরে যা, আমি নাড়ু নিয়ে আসছি”

বলেই তিনি হেসেলে গেলেন। অন্না পা টিপে টিপে অর্জুনের ঘরে ঢুকলো। পর্দা টেনে অন্ধকার করে রাখা ঘর। অর্জুন হেলান দিয়ে বিছানায় বসে রয়েছে। চোখ বুজে রয়েছে, বুকের উপর হিসাব বিজ্ঞানের বই, “principle of accounting”। লোকটা পারেও। এই জ্বরে কেউ হিসাববিজ্ঞান পড়ে। এলোমেলো খাতা এবং মুখটি খোলা কলম সাক্ষী তার পড়াশোনার। অন্না কিছুসময় শ্যামমুখশ্রীর দিকে অপলক চেয়ে রইলো। মাঝে মাঝে ঈশ্বর সৃষ্টির এমন অপরূপ নিদর্শন মুগ্ধ নয়নে দেখতে ইচ্ছে হয়। কি সুন্দর অর্জুন দা, তার ঘুমন্ত মুখখানা দেখে মনে হচ্ছে যেনো সুদর্শন কোনো শিল্পকর্ম। শ্যাম মুখ, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, লম্বা লম্বা নেত্রপল্লব, খাঁড়া নাক। অন্না ঠিক কতোটা সময় তাকিয়ে রইলো জানা নেই। কিন্তু যখন ধ্যান ভাঙ্গলো তখন ই সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। সুন্দর জিনিস মারাত্মক বিপজ্জনক। আর অর্জুনদা বিপজ্জনক দু দি পাওয়া ইনফিনিটি। তাই বিছানার কাছ থেকে সরে অর্জুনের বই এর তাকের দিকে গেলো। এর মাঝে একটি বই সারির মধ্যে উলটো করে রাখা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “নৌকাডুবি”। অন্না আস্তে করে বইটি বের করলো। মলাট খুলতেই প্রথম পাতায় ফাউন্টেন পেনে গোটা গোটা করে লেখা,
“জন্মদিনের শুভেচ্ছা, অর্জুনদা”

তার নিচে ছোট করে লেখা “কৃষ্ণা”। নামটি দেখে খানিকটা অবাক হলো অন্না। অর্জুনকে এই ক বছরে কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখে নি সে। তাহলে মেয়েটি কে? কোনো বান্ধবী নাকি অতিপ্রিয় কেউ?
“আমার জিনিস ধরেছিস কেন? রাখ বলছি”

অর্জুনের তীক্ষ্ণ স্বর কানে আসতেই চিন্তার মেঘে ছেদ পড়তো। ঈষৎ কেঁপে উঠলো অন্না। বইখানা বন্ধ করে পেঁছনে ঘুরে বুকে হাত দিয়ে বললো,
“চেঁচাচ্ছো কেন? আমি কি চু’রি করেছি কিছু? একটু হলেই প্রাণখানা খাঁচা ছাড়া হতো”
“তোর তো সাহস কম না আমার বই ধরিস!”

বলেই ছো মেরে বইখানা নিয়ে নিলো অর্জুন। অর্জুনের এরুপ কার্যে অবাক হলো অন্না। মুখ বাকিয়ে বললো,
“ভাবখানা এমন যেনো প্রেমিকার প্রথম উপহার!”
“তোকে বলবো কেন? আর এখানে কি করছিস? আমার ঘরে ঢুকেছিস কোন মতলবে?”

অর্জুন খেঁকিয়ে উঠলো। তার মুখশ্রী বিরক্তিতে ঘেরা। চোখ ছোট ছোট করে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে সে। অন্নার রাগ হলো, প্রচন্ড রাগ। ইচ্ছে অর্জুনের লম্বা চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। অর্জুনদাকে বানিয়ে দিতে “টেকো অর্জুনদা”। কিন্তু সে তা করলো না। গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর করুন গলায় বললো,
“তুমি তো মানুষ ভালো না অর্জুন দা, জীবনদাতার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?”
“নিকুচি করি তোর জীবনদান!”
“এইজন্য এসেছি, মা বললো তোমার জ্বর এসেছে। দু-তিন দিন পড়াবে না। আমি বাপু দায়িত্ববান নারী। ম’রে ট’রে গেলে কি না দেখতে এসেছি। বলা তো যায় না, সামান্য বাগানে ঢুকেছি বলে চো’র বানিয়েছো। এখন জ্বর হয়ে ম’রে ট’রে গেলে ভু’ত হয়ে বলবে অন্নার র’ক্তে ভাইরাস। তাই দেখতে এলাম। যাক, যেহেতু আমার উপর চেঁচাতে পারছো তার মানেই ভালোই আছো। মন শান্ত হলো। সেই চোটে কাকীমার হাতের নাড়ু তো জুটেছে। তোমার ভয়ে তো এমুখো হওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে এতো ভালো মায়ের ঘরে এমন খ’চ্চ’র ছেলে কিভাবে জন্মায়?”
“এখন ভয় হয় না?”

খানিকটা ঝুকে অন্নার চোখে দৃষ্টি রেখে ধীর কন্ঠে কথাটা বললো অর্জুন। অর্জুন ঝুকে আসাতে তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে অন্নার মুখশ্রীতে। তার দৃষ্টি অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নে আটকে গেলো। ভয়ংকর দৃষ্টি। নাহ, এই ভয়ংকরের অর্থ ই ভিন্ন। এই দৃষ্টিতে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে, ডুবে যেতে পারে৷ এ যেনো শান্ত একটা দীঘি। অন্নার অনুভূত হলো তার হৃদয়টা স্পন্দিত হচ্ছে। বেসামাল সেই স্পন্দন। অন্না দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। খানিকটা সরে দাঁড়ালো অর্জুনের থেকে। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“যতই হোক আমি তোমার পাওনাদার, আর পৃথিবীতে পাওনাদার দেনাদার থেকে উপরে। তুমি আমার কাছে ঋণী, এই ঋণ এতো সহজে ছাড়ছি না। আর তবুও যদি তুমি আমাকে বকাঝকা করো, সোজা কাকীমাকে বলে দিবো। চ্যাটার্জি বাড়ি বুঝি ঋণদাতার সাথে এই আচারণ করে?”
“মুখে তো খই ঝড়ে, এক ঘা দিবো সব ঋণ বেরিয়ে যাবে। আমার অবস্থার জন্য দায়ী কে? শুনি?”
“আমি বলেছি আমার পেছনে দৌড়াতে?”
“আমাকে হেডলাইন বানাবা আমি চুপ করে থাকবো? তোর সাত পুরুষের ভাগ্য তোকে এখনো কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি”

এবার একটু দমলো অন্না। হ্যা, দোষটা তার। সে মিথ্যে বলেছে, যার কারণে আজ সকলের মুখে মুখে তার উপাধি “অর্জুন দার প্রেমিকা”। গলা খাকারি দিলো অন্না, একটু রয়ে সয়ে বললো,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আর কথা শোনাতে হবে না। এই কান ধরে বলছি, আর কেউ কখনো বলবে না, আমি তোমার প্রেমিকা”
“কি করবি?”
“সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও, এতো প্রশ্ন কেন? আম খাও, গুটি গুনে কি হবে”

বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো অন্না। অর্জুন হতবিহ্বল চাহনীতে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইলো। মেয়েটি তাকে বাক করার একটি সুযোগ ও ছাড়ে না। আগে তাও একটু ভয়ভীতি ছিলো, এখন তাও নেই। র’ক্ত দিয়ে এখন র’ক্ত চো’ষার কাজ করছে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো অর্জুনের। হাতে থাকা “নৌকাডুবি” বইটা এক পলক চোখ বোলালো সে। তারপর যথাস্থানে রেখে দিলো।

******

অর্জুনের শরীর এখন বেশ ভালো। জ্বর নেই, অন্নার র’ক্ত শরীর মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু মনটা ভালো নেই। তাই তো বইখাতা বন্ধ করে পাড়ার চায়ের দোকানে গেলো সে। পড়ন্ত বিকালের তেজহীন রশ্নি গায়ে এসে পড়ছে। যুবসমাজের চায়ের ধোঁয়ায় কথা উড়ছে! কত শত তাদের কথা। বিশেষ কথা পুজো আসছে। পাশে একখানা মন্দির থাকায় পুজোটা বেশ জমজমাট ই হয়৷ এই পাড়ায় ধর্মের মতোভেদ নেই। উৎসব টা সুষ্ঠভাবে পালন ই প্রধান। অর্জুন এসে বসতেই সকলের কেন্দ্রবিন্দু হলো সে। চা এগিয়ে দিতে দিতে পাড়ার মোস্ট সিনয়র রবিন ভাই বলে উঠলেন,
“কি ভায়া, শরীর ভালো?”
“জ্বী”
“তা ভাই, প্রেমে পড়ে জ্বর হয় শুনেছি, ছ্যাকা খেয়ে জ্বর হয় প্রথম শুনলাম। দেবদাস হোক তো তোমার মতো! অন্নার পেছনে দৌড়ে কি না শেষ অবধি ক্লিনিক চলে গেলে…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here