তুমি শুধু আমার – পর্ব ১৮

0
386

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
পর্বঃ১৮

সকালে স্নিগ্ধ রোদে মেঘের ঘুম ভাঙে পাশে তাকিয়ে দেখে তার ঘুমন্তপরী ঘুমিয়ে আছে।মেঘ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে,মেঘ আস্তে করে বৃষ্টির কপালে ভালোবাসার পরশ ছুয়ে দেয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি কিছুটা নড়েচড়ে উঠে,মেঘ মুচকি হেসে বিছানা ছেড়ে হাতে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মেঘ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে যে বৃষ্টি এখনো ঘুমিয়ে আছে,মেঘ রেডি হয়ে নিচে চলে যায়।

বড় থাইগ্লাস টা ভেদ করে বৃষ্টির মুখের উপর রোদ পরতেই পিটপিট চোখে তাকায়।বৃষ্টি উঠে বসে চারপাশে তাকিয়ে মেঘ কে খুজতে থাকে,মেঘ কে রুমে না পেয়ে বৃষ্টির মন টা খারাপ হয়ে যায়,নিজের দিকে তাকিয়ে কাল রাতের কথা মনে করতেই বৃষ্টির লজ্জা পেয়ে যায়।মেঘ হাতে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে দেখে বৃষ্টি মুচকি মুচকি হাসছে।

মেঘ;;good morning jan🥰

বৃষ্টি;;good morning,,

বৃষ্টি,তুমি এতো তারাতারি ঘুম থেকে উঠে পরলে আর আমাকে তুমি ডাকলে না এইটা কিন্তু ঠিক না আর তোমার হাতে কি??

মেঘ;;তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট,

বৃষ্টি;;কিইইই তুমি আমার জন্য ব্রেকফাস্ট এসেছো কিন্তুু কেনো আমাকে ডাকলেই হতো?

মেঘ;;ওওও ড্রামাকুইন,এতো বকবক না করে যাও গিয়ে তারাতারি ফ্রেশ হয়ে এসো না কি আমি তোমাকে কোলে তুলে ফ্রেশ করিয়ে আনবো কোনটা😏

বৃষ্টি;;এই না,আমি একাই যেতে পারবো(লুচু কোথাকার)বলেই বৃষ্টি তারাতারি করে ওয়াশরুমে চলে যায়,বৃষ্টির দৌড় দেখে মেঘ শব্দ করে হেসে দেয়।

মেঘ হাত থেকে খাবার টা টেবিলে রেখে সোফায় বসে অফিসের কিছু কাজ করতে থাকে হঠ্যাৎ করেই মেঘের কানে গানে গুন গুন করে গানের আওয়াজ অাসতে থাকে, মেঘের আর বুঝতে বাকি রইল না যে বৃষ্টি মস্তবড় একজন ওয়ারুম সিঙ্গার।মেঘ বৃষ্টি গান শুনছে আর হাসছে(কি পিচ্চি বউ আমার কপালে দিলে আল্লাহ)

মেঘ;;আরে বৃষ্টি সারাদিন কি ওয়াশরুমেই থাকবে না কি। কি হলো বৃষ্টি বের হবে না, না কি আমি দরজা টা ভেঙে ফেলবো।আমি দরজা ভেঙে ঢুকে গিলে কিন্তুু বেশি একটা ভালো হবে না।

বৃষ্টি মেঘের কথা শুনে চারপাশে থাকিয়ে দেখে যে তার জামা আনতে মনে নেয়(এইরে এখন কি করি জামা তো আনতে মনে নেই)মেঘ কে বলবো

মেঘ;;কি হলো বৃষ্টি কথা বলছো না কোনো?

বৃষ্টি আস্তে করে দরজা টা একটু ফাকাঁ করে দেখে যে মেঘ সামনে দাড়িয়ে আছে তা দেখে সাথে সাথেই বৃষ্টি দরজা টা লাগিয়ে দেয়।

মেঘ কি হলো এইটা, দরজা লাগালে কেনো তারাতারি বের হও বলছি??

—–বৃষ্টি,তুমি রুম থেকে বের হও।আমি জামা আনতে ভুলে গেছি

মেঘ,আরে আমি কেনো রুম থেকে বের হবো।তুমি আগে বের হও আর আমি কি তোমাকে এই অবস্থায় নতুন দেখলাম না কি,,,

বৃষ্টি;;(লজ্জা শরম ও নেয় কিছুই মুখে আটকায় না) এই তুমি রুম থেকে বের হবে কি না সেইটা বলো।
মেঘ,না আমি যাবো না তুমি আগে বের হও বলেই মেঘ আড়াল হয়ে যায়।

বৃষ্টি;;অনেক বার মেঘ বলে ডাকাতে যখন কোন ছাড়াশব্দ আসে না তখন বৃষ্টি আস্তে করে দরজা খুলে বের হয়ে আসে(যাক বাবা লুচু তাহলে সত্যি রুম থেকে বের হয়েছে)বৃষ্টি আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে যে মেঘ তার পিছনে দাড়িয়ে আছে।বৃষ্টি মেঘকে দেখা মাএই যেই না চিৎকার করবে সঙ্গে সঙ্গে মেঘ বৃষ্টির মুখটা চেপে ধরে।

মেঘ;;এইভাবে চিৎকার করার কি আছে তোমাকে তো এই অবস্থায় নতুন দেখছি না সুইটহার্ট বলে চোখ টিপ মারে।

বৃষ্টি;;(লুচু, বানর, হাতি,মুখে কিছুই আটকায় না দেখো দেখি কি ভাবে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে)

—-মেঘ কি হলো এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো, জামা টা কি আমি পরিয়ে দেবো।।

মেঘের মুখে এমন কথা শুনা মাএই বৃষ্টি বড় বড় চোখ করে থাকায়।
মেঘ,কি হলো কথা বলো?বোবা হলে না কি,,
বৃষ্টি চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মেঘ মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।

বৃষ্টি;;এই তোমার মুখে কিছুই আটকায় না যখন তখন আমাকে লজ্জা দেও কেনো বলো তো আর তুমি এখন রুম থেকে বের হও আমি জামা পরবো।

মেঘ আমি আজকে জামা পরিয়ে দেই কি বলো?

বৃষ্টি;;এই না,আমি,আমি একাই জামা পরতে পারবো।তুমি এইবার প্লিজ বাহিরে যাও প্লিইইইজ।

মেঘ;;ok fine আমি যাচ্ছি। এইভাবে চিৎকার করার কি আছে বলেই মেঘ বৃষ্টির দিকে জামা টা ছুরে মারে, জামা টা সোজা বৃষ্টির মুখের উপর গিয়ে পরে।বৃষ্টির মুখ ঢেকে যাওয়াতে মেঘ ফিক করে হেসে দেয়, তারাতারি রেডি হয়ে নাস্তা টা করে বের হয়ে এসো। এই বলেই মেঘ রুম থেকে বের হয়ে যায়।অনেক টা সময় পার হয়ে যায় কিন্তুু বৃষ্টির নিচে আসার কোন নাম নেই মেঘ কিছুটা কপাল কুচকে নিজেই রুমে গিয়ে দেখে বৃষ্টি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চেইন লাগানোর চেষ্টা করছে।

বৃষ্টি(দুর ছাই কেনো যে জামা টা পরতে গেলাম এখন তো জামার চেইন টা লাগাতে পারছি না)

মেঘ, বৃষ্টির এমন কান্ড দেখে হাসবে না কি কান্না করবে বুঝতেই পারছে না।মেঘ শান্ত হয়ে বুকে দুহাত রেখে বৃষ্টির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে দেখে যে তার হাত চেইন অবধী আসছে না।মেঘ আয়নার সামনে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ঠাস করে এক হাত দিয়ে বৃষ্টির পিছনের জামার চেইন টা লাগিয়ে দেয়।বৃষ্টি আচমকা এমন হওয়া তে চমকে যায়।

মেঘ;;এইভাবে তাকিয়ে না থেকে চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে বলেই দুইজন রুম থেকে বের হয়ে যায়।

এলিনা,,কিরে জোড়া শালিক পাখি কোথায় যাওয়া হচ্ছে??

বৃষ্টি;;কলেজ দাদি,

এলিনা;;ও আচ্ছা,সাবধানে যেও??

বৃষ্টি,আচ্ছা দাদি তুমি ও সাবধানে থেকো আর সময় মতো ঔষুধ খেয়ে নিও।দাদির কাছ থেকে বিদাই নিয়ে মেঘ বৃষ্টি দুইজনেই বের হয়ে যায়।

মেঘ বৃষ্টির কলেজের সামনে এসে বৃষ্টি কে নামিয়ে দিয়ে সোজা অফিসে চলে যায়।

মেঘ অফিসে ঢুকা মাএই সবাই সালাম দিতে থাকে।মেঘ সবাইকে সালামের উওর দিয়ে সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়।

আকাশ;;আসবো মেঘ,

মেঘ;;হুম আয়,আমার কেবিনে আসতে কি তোর পারমিশন লাগে।

আকাশ,মেঘ কিছু জানিস তুই,টিনা কোথায়?

মেঘ;;না তো, আমি কি করে জানবো টিনা কোথায়

আকাশ;;তুই কি জানিস সেই দিনের পর থেকে টিনা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না,তোর কি একবার ও মনে হয়নি টিনা কথা।

মেঘ;;সত্যি বলতে আমার মাথায় ছিলো না টিনার কথা,কেনো কি হয়ছে টিনার আমি তো আজকে বাসায় তেও দেখলাম না মনে করেছি বাহিরে গেছে।

আকাশ;;আমিও সিওর জানি না,রনি কে বলেছি খোজ নিতে।
দুইজনেই টিনার কথা ভাবতে থাকে।তারমাঝেই কিছু কাজ বাকি আছে সেই গুলাও চেক করে।

নীলা;;কিরে বৃষ্টি আজকে ও কি তুই ক্লাস করবি না এইভাবে এইখানে বসে আছিস যে?

বৃষ্টি;;দুর ক্লাস করতে ভালো লাগে না,আচ্ছা শোন না চল তুই আর আমি মিলে ফুচকা খেয়ে আসি বলেই নীলা আর বৃষ্টি কলেজ থেকে বের হয়ে যায়।দুই বান্ধবী মিলে ফুচকার দোকানে এসে ঝাল কমিয়ে দুই প্লেট ফুচকা দিতে বলে।তার মাঝেই দুইজন লোক বৃষ্টিকে ফলো করতে থাকে।বৃষ্টির কিছু ছবি তুলে সাথে সাথে শফিকের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

শফিক ল্যাপটপে কিছু কাজ নিয়ে বিজি ছিলো সেই সময় তার ফোনে মেসেজ আসে,মেসেজ টা ওপেন করে দেখে বৃষ্টির ছবি,বৃষ্টি কে দেখা মাএই শফিক অবাক হয়ে যায়,(এতো সুন্দর দেখতে তুমি তোকেই আমার চাই)মেঘের প্রান তুমি তাই না তাহলে তোমাকে নিয়ে আসা যাক বলেই বাকাঁ হাসি দেয়।তারপর সাথে সাথে ফোন করে গার্ডদের বলে বৃষ্টির উপর নজর রাখতে।

মেঘ;;আকাশ চল আমার সাথে বৃষ্টির কলেজে?

আকাশ;;তুই যা, আমি এইদিক টা দেখছি??

মেঘ,সত্যি তো তুই যাবি না,গেলে ভালো হতো না তাহলে নীলার সাথে দেখা হয়ে যেতো।।।

আকাশ;;মানে,,

মেঘ;;মানে এই যে আমার ভাইটা যে প্রেমে পরেছে।

আকাশ;;মোটেও না,,,

মেঘ;;আরে আমার ভাই চলতো,,অনেক টা দেরি হয়ে যাচ্ছে,কিন্তুু এক জিনিস মানতে হবে আমার শালিকা দেখতে খুব সুন্দর

আকাশ;;ও আচ্ছা তাই,সুন্দর না ছাই,,ভুতনী একটা।
মেঘ আচ্ছা চল, দেখা যাক ভুতনী না কি মানুষ এই বলেই দুইজন অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে চলে যায়।

আর এইদিকে নীলা আর বৃষ্টি যেনো ফুচকার প্রতিযোগীতা করছে।মেঘ হাওয়ার বেগে গাড়ি এসে থামায় বৃষ্টির কলেজে সামনে। গাড়ি থেকে তারাতারি করে নেমে দেখে যে বৃষ্টি কোথাও নেই।বৃষ্টি কে না দেখে মেঘ ভয় পেয়ে যায়।আকাশ তোর বউমনি কে দেখছি না।

আকাশ,দেখবি আর কি ভাবে এইদিকে তাকা,তাকিয়ে দেখ বেশ আরাম করে ফুচকার প্রতিযোগীতা চলছে।আকাশ যখন গাড়ি থেকে নামে তখনি আকাশের চোখ যায় নীলা আর বৃষ্টির দিকে।আকাশের কথা শুনে মেঘ তাকিয়ে দেখে যে বৃষ্টি ফুচকা দোকানে,এইটা দেখা মাএই মেঘ স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে(আমি ছাড়া কলেজ খুজে মরি আর তুমি আরাম করে ফুচকা খাচ্ছো দাড়াও দেখাচ্ছি মজা)মেঘ আর আকাশ দুই জনেই সেইখানে গিয়ে চুপ করে বৃষ্টি আর নীলার পিছনে গিয়ে দাড়ায়।

নীলা;;মামা, আরও দুই প্লেট ফুচকা দেন তো।নীলার কথা শুনে বৃষ্টিও বলে আরও দুইটা ফুসকা দেন ঝাল কমিয়ে।

ফুচকার লোকটা মেঘ কে দেখে ভিষন ভয় পেয়ে যায়।

মেঘ,চোখ দিয়ে ফুচকাওয়ালা লোকটা কে ইশারা করে যে বেশি করে ফুচকায় ঝাল দিতে।লোকটা মেঘ কে দেখা মাএই ভয়ে দুই প্লেটে ফুচকায় বেশি করে ঝাল দেয়।নীলা প্লেট দুটো নিয়ে একটা বৃষ্টির হাতে দেয় আর একটা নিজে নেয়।বৃষ্টি নীলা যখন ফুচকা খেতে থাকে হঠ্যাৎ বৃষ্টির মনে হলো ফুচকায় প্রচুর ঝাল দেয়া হয়েছে।বৃষ্টি হাত থেকে ফুচকার প্লেট টা রেখে চিৎকার করে উঠে।

বৃষ্টি;;ও মা গোওওওও এতো ঝাল। আমার আম্মু ও এতো ঝাল দেয় না যতোটা এই ফুচকায় ঝাল।আপনি ইচ্ছে করে দিয়েছেন তাই না।।

নীলার অবস্থা তো খুব খারাপ এতো ঝাল খেয়ে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এইটা দেখা মাএই আকাশ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

নীলা;;মামা এইটা আপনি ইচ্ছে করে ঝাল দিয়েছেন তাই না।আরে আমার কি দোষ,,ওই দুইজন বলাতেই তো দিলাম।

বৃষ্টি,কে বলেছে, কোন হারামি বলেছে??কি হলো মামা বলছেন না কেনো কে বলেছে??আমি জানি না, ভয়ে লোকটা মাথা নিচু করে রাখে।

বৃষ্টি;;আরে কোন শালা,বাদর, হাতির বাচ্চারা বলছে যে আমাদের ফুচকায় ঝাল দিতে।সামনে আয় তোদের কে এখন আমি ঝাল খাওয়াবো।

মেঘ আকাশ দুইজনেই বৃষ্টির কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।মেঘ বউমনি শেষমেষ তোকে আর আমাকে শালা মানিয়ে দিলো।মেঘ,হুম তাই তো দেখছি।

বৃষ্টি যেই না পানি খাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরবে তখনি মেঘ কে দেখে ভয় পেয়ে যায়।।
মেঘ তো বৃষ্টির দিকে চোখ ছোট করে তাকায়।

বৃষ্টি একটা মেকি হাসি দিয়ে মেঘের সামনে গিয়ে আরে তুমি কখন এলে আমি তো দেখি নি(এইরে সব শুনে নেয় নি তো 😬)

মেঘ;;তুমি যেনো একটু আগে কি বললে? আবার বলো?

বৃষ্টি;;ক,,ক,কই আমি তো কিছুই বলি নি😁

মেঘ;;ও আচ্ছা তাই?

আকাশ,তোরা দুইজন থামবি।তারাতারি বাসায় চল অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।বৃষ্টি, ঠিক বলেছো আকাশ ভাইয়া চলো তারাতারি দেরি হয়ে যাচ্ছে বলেই বৃষ্টি নীলা কে নিয়ে এক দৌড়ে গাড়িতে বসে।দুইজনের কান্ড দেখে মেঘ আকাশ ফিক করে হেসে দেয়।

#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here