ছোট সাহেবের অত্যাচার – পর্ব ২৫

0
490

ছোট সাহেবের অত্যাচার
Writer:Bushratuzzaman Shoya
Part:25
.
আবির আজকে তাড়াতাড়ি বাসায়‌ চলে আসল।রাবেয়া সোফায় বসে রয়েছে।আবির রাবেয়ার পাশে বসল।আর বলতে লাগল,,
আবিরঃ- আম্মু তুমি আমাকে আজকে এত তাড়াতাড়ি আসতে বললে কেন??
রাবেয়াঃ- তোমাকে একটা কথা বলার আছে।
আবিরঃ- কি কথা আম্মু??
রাবেয়াঃ- তোমার জন্য মেয়ে দেখে এসেছি।মেয়েটার স্বামী মারা গেছে এই কয়েকদিন হল।মেয়েটার বেশি বয়স হয়নি।সবে মাত্র আঠার।আমি তোমার সাথে বিয়ে দিতে চায় মেয়েটার।যাতে মেয়েটা মুব অন করতে পারে।তুমি কি এই বিয়েতে রাজি??
আবিরঃ- এই বিয়েতে রাজি আমি।আমি জানি তুমি আমার জন্য কখনও ভুল পাত্রী দেখবে না।মেয়েটা বিধবা তাতে কি হয়েছে ওরও তো বাঁচার অধিকার আছে।সো আমি এই বিয়েতে রাজি।
রাবেয়াঃ- আবির।
রাবেয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।রাবেয়ার বিশ্বাস ছিল আবির কোনদিন ওর ডিসিশনে অস্বীকৃতি জানাবে না।আবির রাবেয়ার চোখের পানি মুছে দিল।আবিরেরও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু সেই পানি চশমার আড়ালে দেখা যাচ্ছে না।
|
|
ছোঁয়া ওর ঘরে চুপচাপ বসে রয়েছে।আমেনা ওর ঘরে আসল।আমেনা ওর পাশে বসল।ওর পাশে বসে ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগল,,
আমেনাঃ- ছোঁয়া তোকে একটা কথা বলি??
ছোঁয়াঃ- নিশ্চুপ।
আমেনাঃ- আমার মনে হয় তোর আর একবার বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ।
ছোঁয়াঃ- কি বিয়ে??আমি আমার ছোট সাহেবের জায়গা আর কাউকে দিতে চায় না।
আমেনাঃ- বুঝতে পারছি তোর কষ্টটাকে।তোর জীবন এখনও পড়ে রয়েছে।তাই বলছি বিয়ে করে ফেল।নইলে যে এইভাবে থাকতে থাকতে তুই মরে যাবি।
ছোঁয়াঃ- আমি তো তাই চাই।আমি আমার ছোট সাহেবের কাছে চলে যেতে চাই।(কাঁদতে লাগল)
আমেনাঃ- কি পাগলের মত কথা বলছিস তুই??এই রকম কথা আর বলবি না।
ছোঁয়াঃ- কি আর বলব।তাহলে আপনি যে আমাকে বারবার বিয়ে করার কথা বলছেন??
কাজলঃ- মা তো ঠিকই বলছে।তোর লাইভে মুভ অন করা উচিৎ।
ছোঁয়াঃ- আপু তুমিও বলছ কথাটা।
জাকিরঃ- আর আমরা সবাই বলছি একই কথা।তুই বিয়ে করে নে আবার।
ফাহাদঃ- মা আবার তুই বিয়ে করে ফেল না।সবার খুশির জন্য।
ছোঁয়াঃ- এই বিয়ে করলে তোমরা যদি খুশি হও।ঠিক আছে তাহলে আমি এই বিয়েটা করব।
সবাই খুশি হয়ে বাইরে চলে গেল।ছোঁয়া কান্না করতে লাগল।ছোঁয়া প্রান্তিকের একটা ছবি হাতে নিয়ে বলতে লাগল,,
ছোঁয়াঃ- আমি এই বিয়েটা করব ঠিকই কিন্তু আপনার জায়গা আমি কাউকে দিতে পারব না।
এই বলে প্রান্তিকের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল।কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।কিছুতেই কান্না থামছে না।
|
|
আবির রাতে ওর রুমে বসে অফিসের কাজ করছে।অনেক রাত হয়ে গেছে।অবশেষে কাজটা শেষ হল।আবির চশমাটা খুলে লাইটটা অফ করে শুইয়ে পড়ল।আবির শুইয়ে শুইয়ে ভাবছে,,
আবিরঃ- জানি না মেয়েটা দেখতে কেমন হবে।সুন্দর নাকি।মেয়েটার ছবি দেখতে পেলে ভালো হত।মাকে বলতে একদম ভুলেই গেছি।থাক একদম বিয়ের দিনই দেখে নিব।
আবির এই কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
|
|
সিরাজ শুইয়ে রয়েছে।কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না।সিরাজ যতবারই চোখ বন্ধ করছে ততবারই ছোঁয়াকে দেখতে পারছে।চোখ খুলে রেখেও শান্তিতে থাকতে পারছে না।
সব জায়গায় ছোঁয়াকেই দেখতে পারছে।প্রথম যেদিন ছোঁয়াকে দেখেছিল।সিরাজ একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে।না তো চোখ বন্ধ করতে পারছে না তো চোখ খুলে রাখতে পারছে।সিরাজ পাগল হয়ে বলতে লাগল,,
সিরাজঃ- এই মেয়েকে দেখার পর থেকেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।কোথাও ঠিকমত থাকতে পারছি না।না না আমি আর পারছি না।যেখানেই তাকাচ্ছি শুধু ওই মেয়েটাকেই দেখতে পাচ্ছি।
সিরাজ এইসব সহ্য করতে না পেরে একদম অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
|
|
সকাল হয়ে গেছে।সকাল সকাল আবিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।আবির ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে আসল।রেডি হয়ে নিচে নেমে আসল।
রাবেয়া সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিল।আবির রাবেয়ার পাশে যেয়ে বসল।আবিরকে দেখে রাবেয়া বলতে লাগল,,
রাবেয়াঃ- আবির তুমি কি ছোঁয়ার সাথে দেখা করতে চাও??
আবিরঃ- হ্যা,,না মানে হ্যা।
রাবেয়াঃ- আজকে তুমি ওর সাথে দেখা করতে পারবে।একটা সুযোগ আছে।
আবিরঃ- কিভাবে??
রাবেয়াঃ- বিয়ের জন্য শপিং এ নিয়ে যাব আজকে ছোঁয়াকে।মানে সবাই যাব।সাথে তুমিও যাবে।
আবিরঃ- ঠিক আছে।
রাবেয়াঃ- এর জন্য বিকেলে তুমি অফিস থেকে চলে আসবে।
আবিরঃ- হুম।এখন আমি আসছি আম্মু।
রাবেয়াঃ- হুম।
আবির ও ওর মা কে অনেক সম্মান করে।তাই কখনও আপনি ছাড়া কোন কথা বলে না।
|
|
ছোঁয়া অনেকদিন পর নিচে আসল।তাও আবার নিজেত ইচ্ছায়।তাই সবাই আজকে অনেক খুশি হয়েছে।পুষ্পিতা ছোঁয়ার পাশে বসে বকর বকর করতে লাগল।
কাজল আর আমেনাও ছোঁয়ার পাশে এসে বসল।আমেনা ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগল,,,
আমেনাঃ- ছোঁয়া মা আজকে আমরা তোমার বিয়ের জন্য শপিং এ যাচ্ছি।তোমাকে কিন্তু যেতে হবে।কারন তোমার বিয়ের শপিং।
ছোঁয়াঃ- ঠিক আছে।
ছোঁয়া রাজি হয়ে গেল শপিং এ যাওয়ার জন্য।কারন ছোঁয়া জানে এতেই সবার খুশি।ছোঁয়া ওর পরিবারের খুশির জন্য এই বিয়েটা করছে।
|
|
আবির ওর অফিসে বসে রয়েছে।আর কাজ করছে।কিন্তু হঠাৎ করেই ছোঁয়ার কথা মনে পড়ে গেল।আর শুধু ভাবছে,,
আবিরঃ- না জানি মেয়েটা দেখতে কেমন হবে।স্বামী মারা যাওয়ার পর বোধ হয় চেহারার একটু পরিবর্তন হয়ে গেছে।আজকে দেখতে পাব মেয়েটাকে।আমি তো ওয়েট করতে পারছি না।
আবির এই কথাগুলো ভাবছে কিছুখন পর আবির এর পিএ এসে বলতে লাগল,,
পিএঃ- স্যার এই ফাইলে আপনার একটা সাইন লাগবে।
আবিরঃ- ও আচ্ছা দিন।
আবির আগে ফাইলটা ভালোভাবে চেইক করে নিল সব কিছু ঠিক আছে কিনা।তার পর সাইন করে দিল।ছোঁয়াকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে কাজে মনযোগ দিল।
|
|
সাদমান সাহেব কিছুতেই বুঝতে পারছেন না যে উনার ছেলে এমন কেন করছে??এত পাগলের মত কেন ব্যবহার করছে।সাদমান সিরাজের পাশে বসে জিজ্ঞাসা করছে,,
সাদমানঃ- সিরাজ মাই সান তোমার কি কিছু হয়েছে??
সিরাজঃ- কিছুই হয়নি ড্যাড।
সাদমানঃ- তাহলে এইভাবে মনমরা হয়ে থাক কেন??
সিরাজঃ- এমনিই।প্লিজ ড্যাড আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
সাদমান ওইখান থেকে চলে গেল।সাদমান বাইরে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল,,
সাদমানঃ- কিছু তো একটা হয়েছে।যেইটা ও আমাকে বলতে চাচ্ছে না।
|
|
বিকাল হয়ে গেছে।সবাই শপিং এ যাবে এখন।ফাহাদ রাবেয়াকে বলছে,,
ফাহাদঃ- রাবেয়া তুমি যে বললে তোমার ছেলে আসবে।কোথায় তোমার ছেলে??
রাবেয়াঃ- ওইতো চলে এসেছে।
আবির ওর গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।আবির গাড়ি থেকে নামল।সবার সামনে এসে সালাম দিল।সবাই সালাম এর উত্তর দিল।আবির চোখ খুজছে শুধু ছোঁয়াকে।রাবেয়া ছোঁয়াকে নিয়ে এসে বলতে লাগল,,
রাবেয়াঃ- এই তো ছোঁয়া।
আবিরঃ- ও।
আমেনাঃ- ছোঁয়া মা তুমি আবির এর সাথে যাও।আমরা সবাই এই গাড়িতে যাচ্ছি।
ছোঁয়াঃ- ঠিক আছে।
|
|
সবাই এই গাড়িতে যেয়ে উঠল।ছোঁয়ধ আবির এর গাটিতে যেয়র বসল।আবির গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল।ছোঁয়া চুপ করে বসে রয়েছে।আবির শুধু ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আবির ছোঁয়ার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না।আবির ভয় কাটিয়ে বলতে লাগল,,
আবিরঃ- আপনি এখনও আপনার স্বামীকে ভুলতে পারেননি।
ছোঁয়াঃ- হুম।বড্ড বেশি ভালোবাসি তাকে।আর আমাকে একা ফেলে রেখে চলে গেল।
আবির আর কোন কথাই বলল না।গাড়ি চালানো তে মনযোগ দিল।গাড়িও চালাচ্ছে আর একটু পর পর ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
|
|
|
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here