ছোট সাহেবের অত্যাচার – পর্ব ২৪

0
526

ছোট সাহেবের অত্যাচার
Writer:- Bushratuzzaman Shoya
Part:- 24
.
ছোঁয়া তো একদম টেনশনে মরেই যাচ্ছে।ছোঁয়া সারাটা রাত একটুও ঘুমাতে পারল না।আজান দিয়ে দিয়েছে।ছোঁয়া বিছানা ছেড়ে উঠে ওযু করে এসে নামাজটা পড়ে নিল।ছোঁয়া নিচে নেমে আসল।ছোঁয়ার এখনও অনেক টেনশন হচ্ছে।ছোঁয়া মনে মনে বলছে,,,
ছোঁয়াঃকি যে হল উনার এখনও বাড়ি ফিরেননি।সকাল হয়ে গেছে।আমার অনেক টেনশন হচ্ছে।
আমেনা ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে এসেছে।আমেনা ছোঁয়াকে টেনশন করতে দেখে বলছে,,
আমেনাঃকি হয়েছে বউমা??তোমাকে খুব টেনস দেখাচ্ছে।
ছোঁয়াঃউনি এখনও বাড়ি ফিরেননি।আমার খুব টেনশন হচ্ছে মা।
আমেনাঃকি বলছ টা কি তুমি বউমা।ও এখনও বাড়িতে ফিরেনি।বাড়িতে না আসলে ফোন করে জানিয়ে দিত।
ছোঁয়াঃকিন্তু উনি তো ফোন করে জানিয়ে দেননি।
আমেনাঃএখন আমার নিজেরই খুব টেনশন হচ্ছে।টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
বাড়ির সবাই এখন খুব টেনশন করছে।ছোঁয়া চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ছোঁয়া মনে মনে বলছে,,
ছোঁয়াঃউনি তো কখনও এইরকম করেন না।তাহলে আজকে কেন করছেন।
একটু পরেই আফজালের মোবাইলে কল আসল।ওদের কটেজটা যে দেখাশুনা করে রহিম সে কল দিয়েছে।আফজাল কলটা রিসিভ করল,,
আফজালঃহ্যা রহিম বল।
রহিমঃকালকে রাইতে ছোট স্যার আইছিল।কিন্তু কালকে রাইতে কটেজে আগুন লাগছিল।কিন্তু ছোট স্যারের কোন চিহ্নও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।উনি বোধ হয় আর এই পৃথিবীতে আর নেই।পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আফজালঃকি?এইটা কিছুতেই হতে পারে না।
মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেল।আফজাল সাহেব সোফায় বসে পড়লেন।সবাই বলতে লাগলেন।কি হয়েছে??আপনার হঠাৎ কি হল??
আফজালঃআমাদের ছোট ছেলেটা আর বেঁচে নেই।আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ছোঁয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।ছোঁয়া জোরে করে একটা চিৎকার করে উঠল,,
ছোঁয়াঃনা।
ছোঁয়া এক দৌড়ে বাইরে চলে আসল।রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে লাগল।আর শুধু পাগলের মত প্রান্তিকের নাম নিচ্ছে।আর বলছে,,
ছোঁয়াঃনা উনার কিছুই হয়নি।উনি বেঁচে আছে।
বাকিরা সবাই ওর পিছনে ছুটছে।যাতে ছোঁয়ার আবার কিছু না হয়ে যায়।শুধু বাড়ির ছেলেরা ওর পিছনে আসছে।আমেনা কাজল পুষ্পিতা ওরা বাসায় রয়েছে।ছোঁয়া ছুটেই চলেছে।
ছোঁয়া একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেল।কেউ ভাবতে পারেনি এমন কিছু একটা হবে।গাড়িটা চালাচ্ছিল সিরাজ।সিরাজ গাড়ি থেকে নামল।সিরাজ গাড়ি থেকে নেমে ছোঁয়াকে দেখে অবাক হল।আর বলতে লাগল,,
সিরাজঃকালকের সেই মেয়েটা।
ওরা সবাই এসে গেছে।ফাহাদ জোরে করে চিৎকার করে উঠল,,
ফাহাদঃএকি হল আমার মেয়েটার সাথে।আমার মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাও।
আফজালঃএকি হল হাই আল্লাহ।
জাকিরঃবোন।
সিরাজঃআপনারা চিন্তা করবেন না।আমি উনাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
ফাহাদঃজ্বি।
সিরাজ ছোঁয়াকে কোলে নিল।গাড়িতে নিয়ে শুয়ালো।হসপিটালে পৌছে গেছে।ডক্টর রাশেদ ছোঁয়াকে দেখছে।ডক্টর বের হয়ে বলছে,,
রাশেদঃভয়ের কিছুই নেই।তেমন কিছুই হয়নি।কিছুখন পর জ্ঞান ফিরে আসবে।
সবাই না যেন একটু শান্তি পেল।সিরাজ হঠাৎ করেই জিজ্ঞাসা করে বসল,,
সিরাজঃউনি এইভাবে ছুটছিলেন কেন??
আফজালঃআজকেই ওর স্বামী মারা গেছে।এর জন্য পাগল হয়ে এইভাবে ছুটছিল।
সিরাজঃএই বয়সে।উনার বয়সই বা হয়েছে কতটুকু।সরি আপনাদের পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলে ফেলছি।
ফাহাদঃইটস ওকে।তুমি আমাদের অনেক বড় উপকার করলে।তোমার উপর সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
সিরাজঃএইভাবে বলবেন না আঙ্কেল।আমি এখন আসছি।
ফাহাদঃজ্বি।
সিরাজ ওইখান থেকে বের হয়ে চলে গেল।ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরে গেছে।ছোঁয়া বারবার শুধু প্রান্তিকের নাম নিয়েই যাচ্ছে।ছোঁয়াকে সামলানোটা অনেক কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।ছোঁয়াকে অনেক কষ্টে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল।
ছোঁয়া কোন কথাই বলছে না।চুপচাপ একদম দাঁড়িয়ে রয়েছে।ছোঁয়ার রুমের ভিতর ঢুকে নিজেকে আটকিয়ে দিল।কোন শব্দই আসছে না ভিতর থেকে।
অনেকদিন ধরেই ছোঁয়া নিজেকে এইভাবে আটকিয়ে রেখেছে।মাঝেমাঝে ছোঁয়ার জোরে জোরে কান্নার আওয়াজ শুনা যায়।ওরা সবাই নিচে বসে কথা বলছে,,,
আমেনাঃঅনেকদিন ধরেই মেয়েটা নিজেকে আটকিয়ে রেখেছে।এইভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না।
আফজালঃঠিকই বলেছ তুমি আমেনা।এইভাবে আর কতদিন চলবে।
ফাহাদঃআমাদেরকে দরজাটা ভাঙ্গতে হবে।যদি এইভাবে থাকতে থাকতে মেয়েটার কিছু হয়ে যায়।
জাকিরঃঠিকই বলেছ বাবা।দরজা ভাঙ্গতেই হবে।চল।
সবাই ছোঁয়ার রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।জাকির বলছে,,,
জাকিরঃবোন তোকে ভালোই ভালোই বলছি তুই কি দরজাটা খুলবি না।
ছোঁয়াঃনা আমি দরজাটা খুলব না।
জাকিরঃদরজাটা খুলবি না তো।তাহলে দরজাটা ভাঙ্গতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
সবাই মিলে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আগে ছোঁয়া দরজাটা খুলে দিল।ছোঁয়া দরজাটা খুলে দিয়ে রুমের ভিতরে যেয়ে বসে পড়ল।সবাই আবার নিচে এসে পড়ল।নিচে এসে দেখে একজন ভদ্র মহিলা বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।ফাহাদ হঠাৎ করে বলে উঠল,,
ফাহাদঃআরে রাবেয়া যে।
রাবেয়াঃজ্বি।আসসালামুলাইকুম।
ফাহাদঃওলাইকুমআসসালাম।
আফজালঃএ কে ফাহাদ।
ফাহাদঃআরে রাবেয়াকে ভুলে গেছিস।ওর স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিল।তখন ওর কোলে একটা ছোট্ট শিশু ছিল।আমরা ওকে সাহায্য করেছিলাম।
আফজালঃও এই রাবেয়া।
ফাহাদঃছেলে এখন কি করে??
রাবেয়াঃআমার বিজনেস এখন ওই দেখাশুনা করে।আর প্রচুর রাগি হয়েছে।কাজের দিক থেকে অনেক রাগি কিন্তু মন মানসিকতা অনেক ভালো।সবাইকে অনেক সাহায্য করে।
ফাহাদঃভালোই তো।
রাবেয়াঃআপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আপনারা অনেক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।কি হয়েছে??
ফাহাদঃআমার মেয়েটার স্বামী মারা গিয়েছে অনেকদিন হলো।অনেকদিন ধরে নিজেকে আটকিয়ে রেখেছিল রুমে।
রাবেয়াঃঅনেক খারাপ কথা।আর আপনার মেয়ের বয়সই বা কত হবে।আঠার হবে।এখনি এত কিছু হয়ে গেছে।আগে তো লাইফ পড়েই রয়েছে।আমার মনে হয় লাইফে মুভ অন করা উচিৎ।আমার মনে হয় ওর আবার বিয়ে দেওয়া উচিৎ।সরি আপনাদের পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলে ফেললাম।
আমেনাঃসরি কেন বলছেন আপনি??আপনি ঠিক কথায় বলেছেন।ছোঁয়ার আবার বিয়ে দেওয়াই উচিৎ।সেই ছোটবেলা থেকে ওকে মানুষ করেছি আমার মেয়ের মতনই।আমার মনে হয় ওর বিয়ে দেওয়াই উচিৎ।
কাজলঃআমি মার সাথে একমত।ওর জীবন তো এখনও পরে রয়েছে।
আফজালঃঠিকই কথা বলেছ।
ফাহাদঃকিন্তু আমার এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে কে??
রাবেয়াঃকিছু যদি না মনে করেন তাহলে ছোঁয়ার বিয়ে আমি আমার ছেলের সাথেই দিতে চায়।
ফাহাদঃকিন্তু তোমার ছেলে তো রাজি হবে এই বিয়েতে।
রাবেয়াঃআমার ছেলে রাজি হবে এই বিয়েতে।কিন্তু ছোঁয়া কি রাজি হবে??
আমেনাঃরাজি করানো দায়িত্ব আমাদের।
ফাহাদঃকিন্তু রাবেয়া তোমার ছেলের নাম কি??
রাবেয়াঃআবির।আবির হাসান জয়।
ফাহাদঃওর বাবার নামেই রেখেছ।জয়।ভালো।
রাবেয়াঃনাম রেখেছি ঠিকই কিন্তু এই নামে কখনও ডাকি না।সব সময় আবির নামেই ডাকি।
ফাহাদঃভালো।
আবির ওর অফিসে চলে এসেছে।আবির ভিতরে যেয়ে দেখে কেউই তার কাজে মনযোগ নেই।কিন্তু সবাই যখন আবিরকে দেখল যে যার কাজ করতে লাগল।আবির রাগি একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
আবির জোরে জোরে করে হেঁটে নিজের অফিস রুমে ঢুকে গেল।চেয়ারের উপর বসে পড়ল।ল্যাপটপ টা অন করে কাজ করতে লাগল।আবির এর মোবাইল এ একটা কল আসল।আবির এর মা রাবেয়া কল দিয়েছে।আবির কলটা রিসিভ করল,,
আবিরঃআসসালামুলাইকুম আম্মু।
রাবেয়াঃওলাইকুমআসসালাম।
আবিরঃআম্মু কোন কিছুর কি প্রয়োজন??
রাবেয়াঃহ্যা।আজকে তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসবে।
আবিরঃঠিক আছে আম্মু।
সিরাজ ওর রুমে ঢুকে সব কিছু আওলাজ্যাওলা করতে লাগল।আর বলতে লাগল,,
সিরাজঃমেয়েটা আগে থেকেই বিবাহিত ছিল।আমার হৃদয়টা ভেঙ্গেই গেল।জীবনে প্রথম কাউকে ভালো লেগেছিল তাও আবার বিবাহিত।
চলবে।
[দাঁতের ব্যথার কারনে বেশি লিখতে পারলাম না।ক্ষমা করে দিবেন সবাই।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here