ছোট সাহেবের অত্যাচার – পর্ব ৫+৬

0
748

ছোট সাহেবের অত্যাচার
Writer:Bushratuzzaman Shoya
Part:05 +06
.
— ইদানিং একটু বেশিই করছে প্রান্তিক।
তোমার উপর অত্যাচারটা একটু বেশিই করছে।
এই জিনিসটা আমাদের সবার চোখে পড়েছে।
আমাদের সবারই খুব খারাপ লাগে এই বিষয়টাতে।
.
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।
তার কিছুখন পর ছোটসাহেব আমাকে ডাক দিলেন,,
.
— এই ছোঁয়া,,তাড়াতাড়ি উপরে আস।
.
আমি বলতে লাগলাম,,
.
— এই তো আবার ডাকছেন।
.
— যাবে না তুমি এখন উপরে।
দেখি ও কিভাবে তোমাকে অত্যাচার করে??
.
— আমাকে যেতে দিন ম্যামসাহেব।
আমি নিজে থেকে উপরে না গেলে কি হবে উনি নিজে নিচে নেমে এসে আমাকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যাবে।
আমাকে যেতে দিন।
.
— তুই যা ভালো মনে করিছ তাই কর।
আমরা তো আর তোকে আটকাতে পারি না।
.
.
.
আমি এক দৌড়ে উপরে চলে গেলাম।
বাইরে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,
.
— আমায় ডেকেছেন ছোট সাহেব।
.
— আগে তুই ভিতরে আস।
.
— জ্বি ছোট সাহেব।
.
আমি ছোট সাহেবের ঘরে ঢুকলাম।
আজকে ছোট সাহেবকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আগের থেকেও বেশি।
.
আমি তো উনার দিক থেকে চোখ নামাতেই পারছি না।
কেন যে উনাকে এত ভালো লাগছে।
আমি উনাকে অনুভব করতে পারছি।
.
উনার স্পর্শকে।
ছোট সাহেবের ডাকে আমার হুশ ফিরল।
ছোট সাহেব আমাকে বলছেন,,,
.
— ছোঁয়া শোন।
.
— জ্বি ছোট সাহেব।
.
— কালকে যে আমার ফ্রেন্ডস এসেছিল না আর তারের গার্লফ্রেন্ড।
আমি তো ওই মেয়েদের সামনে তোকে আমার গার্লফ্রেন্ড বলেছিলাম।
ওরা আজকে বলেছে তোকে সাথে নিয়ে যেতে পার্টিতে।
তুই যাবি আমার সাথে।
তুই না করবি না।
তুই এই কথা বলে বের হবি যে তুই তোর এক ফ্রেন্ড এর বার্ডতে যাবি।
না করতে পারবি না।
না করলে কিন্তু তোর খবর আছে।
.
— না না কোন সমস্যা নেই।
আমি যাব আপনার সাথে।
.
.
.
ছোট সাহেব এর একেকটা অর্ডার,একেকটা অনুরোধ,একেকটা অত্যাচার আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
জানি না কিসের টানে আমি ছোট সাহেবকে নাও করতে পারি না।
আমি যখন ছোট সাহেবের ঘর থেকে বের হব তখন আকাশ মানে ম্যামসাহেবের ছোট ভাই উনার ঘরে ঢুকলেন।
.
তিনি ছোট সাহেবকে বলছেন,,,
.
— এত সেজে কোথায় যাওয়া যাচ্ছে??
.
— আরে আকাশ তুমি কখন আসলে??
.
— এইতো একটু আগে।
বললে না তো কোথায় যাওয়া হচ্ছে??
গার্লফ্রেন্ড,,,
.
— না।
আমার একটা ফ্রেন্ডস পার্টির আয়োজন করেছে সেইখানে যাচ্ছি।
.
— ও আচ্ছা যান যান।
.
— তোমার হঠাৎ এইখানে আসা।
যার জন্য এসেছ সে তো ট্রিপে গেছে।
কালকে আসবে বাড়িতে।
.
— আপনিও না প্রান্তিক ভাইয়া।
.
— সব বুঝি আমি আকাশ।
আমার বুনু টা গেল কিন্তু তুমি গেলে না কেন??
তাহলে একটু কথা বলতে পারবে।
.
— আসলে ভাইয়া এই ট্রিপটা শুধু মেয়েদের জন্য।
.
— ও।
আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
পরে কথা হবে তোমার সাথে।
.
.
.
আমি আমার রুমে চলে গেলাম।
রুমে যেয়ে রেডি হয়ে নিলাম।
আমি বের হলাম।
.
স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন,,,
.
— কোথায় যাচ্ছ??
.
— আজকে আমার এক ফ্রেন্ড এর বার্ড ডে সেইখানে যাচ্ছি।
সেই কবে থেকে বলে রেখেছে যেতেই হবে।
না গেলে আমার সাথে কথাই বলবে না।
.
— আচ্ছা যাও।
.
— তুই কি একা যাবি নাকি।
রাস্তাঘাটের যা অবস্থা।
কখন কি হয়ে যাবে।
আমি তো এখন বের হচ্ছি আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
.
— হ্যা রে ছোঁয়া তুই যা ওর সাথে।
তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
.
— তুই যেইভাবে বাইক চালাস।
একটু সাবধানে নিয়ে যাস।
.
— আরে ছোঁয়া ড্যাডকে বল এর আগেও তো তুই আমার পিছনে বসে কলেজে গেছিস।
কোথায় কখনও তো পড়ে যাস নি।
.
— না পড়লে ভালো।
যাও।
.
— জ্বি সাহেব।
.
.
.
আমি আর ছোট সাহেব বের হয়ে গেলাম।
ছোট সাহেব বাইকটা বের করলেন।
আমাকে বসতে বললেন।
.
আর এইটাও বললেন যে উনাকে শক্ত করে ধরে বসে থাকতে।
আমি উনাকে শক্ত করে ধরে বসলাম।
.
সাহেব আর বাকি সবাইরা কথা বলছেন,,,
সাহেব সবাইকে বলছেন,,
.
— ওরা দুইজন যেহেতু বাইরে চলে গেছে।
তাই তোমাদেরকে আমি কথা বলতে চাই।
.
— জ্বি বলুন।
.
— ভাবছি যে প্রান্তিকের বিয়ে দিয়ে দেব।
বিয়ের বয়স তো হয়েই গেছে ওর।
.
— কিন্তু ড্যাড কার সাথে দিবে??
মেয়ে,,
.
— মেয়ে ঠিক করাই আছে অর্নব।
.
— কিন্তু কে??
.
— ছোঁয়া।
.
— কি ছোঁয়া??
আফজাল তুই কি ভেবেচিন্তে বলছিস তো কথাটা।
.
— হ্যা মা আমি ভেবেচিন্তেই বলছি।
মাঝেমাঝে প্রান্তিক বাইরের মানুষের সামনে যেইভাবে অর্ডার দেই আর অত্যাচারটুকু করে তাতে উনারা মনে করেন ছোঁয়া ওর স্ত্রী।
আর আমরাও মিথ্যে বলেছি।
সেই মিথ্যে কে আমরা সত্যি করে তুলি।
.
— কিন্তু তারপরে,,,,
.
— কোন কিন্তু নই।
ভেবেচিন্তেই বলছি কথাটা।
.
— ঠিক আছে।
.
.
.
ছোট সাহেব আমাকে সেই পার্টিতে নিয়ে আসলেন।
আমাকে উনার ফ্রেন্ডসদের সামনে নিয়ে গেল।
কালকের ওই ফ্রেন্ডস ছাড়া আরও অনেকে রয়েছে।
.
কালকের ওই মেয়েরা এসে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,,,
.
— আজকের রাতটা শুধু তোমার জানটাকে ছেড়ে আমাদের সাথে থাকতে হবে।
চল তো।
.
— হুম।
.
— আমাদেরকে একটু সাহায্য কর রান্না করতে।
আমাদেরগুলো বলছিল তুমি খুব মজা করে রান্না করতে পার।
চল।
.
— হুম চল।
.
আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
সেই হাত ধরে যেই হাতে আজকে ছোট সাহেব মোচড় দিয়েছিলেন।
তাই একটু ব্যথা অনুভব করলাম।
.
তাই সামান্য চিৎকার করে উঠলাম।
আমার চিৎকার শুনে ওই মেয়েগুলো বলে উঠল,,,
.
— হাতে কি হল??
Any problem??
.
— nothing..
.
ছোট সাহেব উনাদেরকে বলছেন,,
.
— ওর ডান হাতে ইদানিং একটু বেশি ব্যথা হই।
ভাবছি যে আমি নিজে যেয়ে ডাক্তার দেখাব।
.
— oh i see..
Let’s go…
.
— হুম,,,
.
.
.
চলবে।
ছোট সাহেবের অত্যাচার
Writer:Bushratuzzaman Shoya
Part:06
.
আমি ওই মেয়েগুলোর সাথে চলে গেলাম।
মেয়েগুলো আমাকে রান্নার ওইখানে নিয়ে যেয়ে বলছে,,
.
— হেল্প কর না প্লিজ রান্না করতে।
কত কি রান্না করতে বলেছে এনারা।
কিছুই করতে পারিনি এখনও।
আবার এরাও বিকেলের নাস্তাও করবে সেইটাও তো করতে পারেনি।
তুমি আগে বিকেলের নাস্তা করতে হেল্প কর না।
.
— ok..
আপনারা আমার কাছে দিন।
.
— এই যে প্যাকেটগুলো।
.
.
.
আমি রান্না করা শুরু করে দিলাম।
বিকেলের নাস্তা তৈরি করা শেষ।
আমি সুন্দর করে সাজিয়েও দিলাম।
.
আমি মেয়েগুলোকে বলতে লাগলাম,,
.
— আপনারা নাস্তা সার্ফ করে দিন।
আমি রাতের জন্য খাবার বসিয়ে দিলাম।
.
— জ্বি দাও।
.
.
.
উনারা নাস্তা নিয়ে চলে গেলেন।
সবাইকে সার্ফ করে দিলেন।
উনারা খাচ্ছেন আর বলছেন,,
.
— সুস্বাদু।
নিশ্চয়ই ছোঁয়া রান্না করেছে।
.
— এইরকম রান্না একমাত্র ছোঁয়ায় করতে পারে।
আর কেউই করতে পারে না।
.
— আরে তোমরাই তো সব খেয়ে নিচ্ছ।
আমাদেরকে তো দিচ্ছই না।
.
— নাও তোমরা।
.
— ওয়াও।
ভাবছি ওর কাছেই রান্না শিখব।
আমরা এত কিছু বলছি আর আপনি চুপ করে বসে রয়েছেন প্রান্তিক ভাইয়া।
.
— আমি আর কি বলব??
প্রতিদিনই তো ওর হাতে রান্না করা খাবার খাই।
প্রতিদিনই বলি ওয়াও টেস্টি।
আজকে না হয় বাদই দিলাম।
.
— ওয়াও।
.
— ছোঁয়া কোথায়??
.
— রান্নার ওইখানে রাতের জন্য রান্না করছে।
.
— ও আমি আসছি।
.
— তোমরা এখানে আর ওই মেয়েটা একলা।
যাও হেল্প কর।
.
— জ্বি জ্বি।
শেষ করে যাচ্ছি।
.
.
.
ছোট সাহেব আমার ওইখানে আসলেন।
আমি রান্না করছি।
উনি আমার কাছে যেয়ে বলছেন,,
.
— থেংকস রে।
এত সুস্বাদু নাস্তা সার্ফ করার জন্য।
.
— যেইটা আমার কাজ আমি সেটাই করেছি।
আমি তো আর আপনার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি না।
.
— ও।
.
— হুম।
.
আমার হাত ধরে টান ধরে মোচড় দিয়ে ওই পাশে ঘুরিয়ে বলছে,,
.
— আজকে তুই এমন কিছু করবি না যে যেটাতে আমাকে নিয়ে সবাই ফান করবে।
.
— না না করব না।
আমাকে ছাড়ুন আমার খুব ব্যথা লাগছে।
.
পিছনে দাঁড়িয়ে ওই মেয়েগুলো একটা কাশি দিল।
তখনই সাথে সাথে ছোট সাহেব আমাকে ছেড়ে দিলেন।
আমি আমার হাতটা বুলাতে লাগলাম।
.
খুব ব্যথা করছে আমার হাতটা।
মেয়েগুলো ছোট সাহেবকে বলছে,,
.
— আরে ভাইয়া।
আজকের রাতটা শুধু একটু সবুর করে থাকুন।
এর পর থেকে তো আপনারই থাকবে।
.
উনি মাথায় হাত দিয়ে চলে গেলেন।
আমি হাত বুলাতে বুলাতে আবার রান্না করা শুরু করে দিলাম।
মেয়েগুলো আমাকে জিজ্ঞাসা করছে,,
.
— তোমাদের রিলেশন কত দিনের??
.
— বেশিদিন না।
.
— অনেক ভালোবাস তাই না??
.
এই প্রশ্ন শুনে আমি একটু তাকালাম উনার দিকে।
আমি কি সত্যিই ছোট সাহেবকে ভালোবাসি।
আর কিছু না ভেবেই বলে দিলাম,,
.
— হুম।
অনেক।
.
.
.
তারপর আর উনারা কিছুই বললেন না।
আমার যেটার প্রয়োজন খুটিনাটি সেইটা এনে দিচ্ছেন।
অবশেষে আমার রান্না করা শেষ।
.
একজন মেয়ে বলে উঠল,,
.
— আরে তোমার ড্রেস আর সাজ তো নষ্টই হয়ে গেছে।
.
— হুম।
.
— আস তুমি আমাদের সাথে।
.
আমাকে উনারা একটা ঘরের ভিতর নিয়ে গেলেন।
ঘরের ভিতরে নিয়ে যেয়ে একটা ড্রেস দিল।
আর বলল যে পড়ে আসতে।
.
আমি ওয়াশরুমের ভিতরে যেয়ে ড্রেসটা পড়ে আসলাম।
গায়ে উড়না দিয়ে বের হলাম।
তাই উনারা আমাকে বলছেন,,
.
— আরে তুমি উড়না পড়ে এসেছ কেন??
.
— আমার তো এইসব ড্রেস মোটেও ভালো লাগে না।
.
— উড়না সরাও।
.
উনারা নিজেই উড়না সরিয়ে দিলেন।
আমার কেমন জানি আনকমফরটেবল লাগছে।
উনারা বলতে লাগলেন,,,
.
— কত সুন্দর লাগছে তোমাকে??
.
— তুমি চুলটা খুলে দাও।
তাহলে আরও সুন্দর লাগবে।
.
উনাদের কথা মত আমি চুলটা খুলে দিলাম।
তারপর বাইরে চলে আসলাম।
.
.
.
বাইরে এসে দেখি উনারা সবাই মিলে খুব আনন্দ করছে।
মেয়েগুলো সামনে যেয়ে বলছে,,,
.
— hey guys…
.
সবাই এইদিকে তাকাল।
ছোট সাহেব আমার দিকে তাকাল।
আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
.
সবাই যে যার মত করে নিজেদের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরছে।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
উনার এক বন্ধু উনার কাছে যেয়ে ধাক্কা দিল।
.
উনার হুশ ফিরল।
সবাই যে যার মত করে আনন্দ করছে।
ছোট সাহেবের কিছু বন্ধু আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
.
আমি নিজেকে সামলিয়ে চলতে লাগলাম।
ছোট সাহেব এই বিষয়টা খেয়াল করল যে তারা খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
ছোট সাহেব আমার পিছনে দাঁড়িয়ে গাড়ের ওইখান দিয়ে মুখ সামনে দিয়ে আমাকে বলছে,,,
.
— আমার কিছু ফ্রেন্ডস আছে অনেক লুচ্চা।
নিজেদের গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও অন্যের গার্লফ্রেন্ড এর দিকে নজর দেয়।
তুই সাবধানে থাকিস।
.
— হুম।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here