পতিতা বউ – পর্ব ৩৩

0
247

#পতিতা_বউ

৩৩তম পর্ব

খুব সকালেই আফিফ বের হয়ে গেলো। আর ভার্সিটির টাইম হতেই নুহা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। গেইট দিয়ে ঢুকতেই নুহার সাথে অনিমার দেখা হয়ে গেলো। সে নুহা কে বললো,

>>চল আজকে ক্লাস না করে ঘুরতে যায়।

>>না না দরকার নেই।

>>প্লিজ চল না আজকে মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে তাই আজকেই সুযোগ পেলাম। কতদিন ঘুরে বেড়াই না আমরা। (মন খারাপ করে)

>>আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে মুখ টা এভাবে না লটকালেও পারতি। হুম চল যাই।

>>ভার্সিটি বাঙ্ক দিয়ে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে তাই না?
হঠাৎ কারো গলা খাকানো আওয়াজে এই কথা গুলো শুনে নুহা আর অনিমা ভীত হয়ে পড়লো। পেছন ফিরে দেখলো সোহান দাঁড়িয়ে আছে চোখ মুখ লাল করে। নুহা ভীত গলায় বললো,
>>আ.সলে এমন কিছুনা। সরি সোহান।

>>আই এম প্রফেসার সোহান গট ইট। আর আমি নিজ কানে স্পষ্ট শুনেছি।
সোহান একপ্রকার চিল্লিয়ে এসব বলাতে নুহা আর অনিমা রীতিমত কাঁপতে লাগলো। তাদের অবস্থা দেখে সোহান ফিঁক করে হেসে দিলো উচ্চস্বরে। নুহা আর অনিমা আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হাসতে হাসতে সোহান বললো,

>>ওহ গড তোমরা কতটা ভীতু। আরেহ আমি তো মজা করছিলাম।

অনিমা বিরক্তির স্বরে বলে উঠলো,
>>কিসের মজা এসব হুহ। আমার তো কাঁপুনি ছুটে গেলো। এত সিরিয়াস লুক দিয়ে আবার বলে নাকি মজা করছে। যত্তসব।

>>আরেহ আরেহ রাগ করছো কেনো। জাষ্ট চিল। তো কোথায় যাবে তোমরা?

>>এখনো ডিসাইড হয়নি প্রফেসর সোহান। (নুহা সামান্য রেগে)

>>আরেহ ভাবি রাগ করছো কেনো আমি ফান করেই বললাম এটা। আচ্ছা তোমরা যদি মাইন্ড না করো তবে আমি বেস্ট একটা প্লেস সাজেস্ট করতে পারি। কিন্ত আমাকেও সাথে নিতে হবে।

>>প্রফেসর মানুষ স্টুডেন্ট দের সাথে ঘুরবেন হুহ?(অনিমা একটু ভাব নিয়ে)

>>ভাইরে তোমাদেরকে এক কথা বললাম আরকি আর তোমরা তো আমার পিছেই লেগে গেলে।

এবার নুহা আর অনিমা সোহানের মুখ দেখে হাসিতে ফেঁটে পড়লো। এবার সোহান মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই অনিমার ফোনে একটা কল আসলো। সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার বাবার কল,

>>হ্যালো বাবা?

ওপাশ থেকে অচেনা একজন বললো,
>>হ্যালো আপনি কি এই ফোন এর মালিকের মেয়ে?

হঠাৎই অনিমার বুকটা ধক করে উঠলো,
>>হ্যাঁ এই ফোনটা আমার বাবার। আপনার কাছে কেনো?

ওপর পাশ থেকে কি বলা হয়েছে নুহা আর সোহান তা জানেনা। হঠাৎই অনিমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। সে রীতিমত ফুঁপাতে লাগলো। নুহা আর সোহান অনিমার এমন অবস্থা দেখে বললো,

>>অনু কি হয়েছে এমন করছিস কেনো?

অনিমার গলায় কথা আটকে আসছে। সে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,

>>নুহা মা আর বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। আমাকে নিয়ে চলনা হসপিটালে..

অনিমা একদম কান্নায় ভেঙে পড়লো। নুহা অনিমাকে সামলে নিলো। সোহান নুহা আর অনিমাকে নিয়ে সেই হসপিটালে গেলো। অনেক খুঁজাখুঁজির পর অনিমার মা-বাবা কে খুঁজে পেলো তারা। কিন্তু যা শুনলো তাএ জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা কেউই। হসপিটালে আসার আগেই তারা মারা গিয়েছে। অনিমা পুরো হসপিটাল মাতিয়ে কাঁদছে। নুহা অনিমাকে সামলে নিচ্ছে আর সোহান সব ফর্মালিটি কম্পলিট করতে ব্যস্ত।

প্রায় দুপুর গড়িয়ে পড়ছে। ড্রয়িং রুমে অনিমার মা-বাবার লাশ রাখা। অনিমা একটু দুরেই জানালার ধারে বসে আছে এলোমেলো হয়ে আর কাঁদছে। নুহা তার পাশে বসে তাকে সামলাচ্ছে। সারা ঘরময় আত্মীয়স্বজনের কান্নায় মুখোরিত। সোহান দরজায় দাঁড়িয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। এইতো সকালেই মেয়েটা কত হাসিখুশি ছিলো হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎই মানুষজনের ভীড়ে একটি মহিলা চিল্লিয়ে উঠলো অনিমার উদ্দেশ্যে,

>>এই অলক্ষুণে মেয়েটার জন্যেই আজ আমার ভাই আর তার বউ মরেছে। এই মেয়েটা জন্মের সময় মা কে খেয়েছে এখন বাপ আর দ্বিতীয় মা কে খেয়ে ফেললো। বলি এখন শান্তিতে আছিস তো তুই?

মহিলাটি অনিমা কে দুবাহু ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এসব বলছে। আর আরো আজেবাজে বকছে। অনিমা যেন জিন্দালাশ হয়ে আছে। সোহানের হঠাৎই মেজাজ উঠে গেলো। সে গিয়ে অই মহিলার হাত থেকে অনিমা কে ছুটিয়ে নিয়ে বললো,

>>জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে আপনি এসব অলক্ষী অলক্ষুণে টাইপের ওয়ার্ড মোটেও ইউজ করবেন নাহ।

>>এই ছেলে কে তুমি হ্যাহ? আমি কি বলবো না বলবো তা কি তোমার কাছ থেকে শিখবো নাকি? আর এই মেয়ে নির্লজ্জ কোথাকার নাগর পাতিয়ে রেখেছিস তাই না?

>>আন্টি একদম আজে বাজে কথা বলবেননা আপনি। এসব কি কথা। নিজের ভাইয়ের মেয়ের প্রতি কেউ এমন বলে?

>>আমার যা ইচ্ছা আমি তা বলবো। এই মেয়েটা একটা অলক্ষী। আর তুমি কে গো বাপু? তোমায় তো আমাদের আত্মীয় মনে হয়না।

>>আমি ওদের ভার্সিটির প্রফেসর।

>>ছিঃ ছিঃ ছিঃ পড়ালেখা করতে গিয়ে দেখী নাগর জুটিয়েছে। এসব ফষ্টিনষ্টি করতে যাস ভার্সিটিতে তাই না?

এবার সোহান বেশ চেঁচিয়ে বললো,

>>আন্টি প্লিজ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবেন নাহ। আর কে আছেন এই ফালতু মহিলাটিকে নিয়ে যান এখান থেকে।

>>নাহ আমি চুপ থাকবোনা। বাহিরের একটা ছেলে যেচে এসে আমার সাথে গলা খাকাবে তা হয়না।এর বিহিত আমি করবোই। এই সবাই দেখ একটা নির্লজ্জ আর অলক্ষী মেয়ে।

পুরো বাড়ির মানুষেরা সবাই কানাঘুষা করছে এই বিষয়ে। নুহা আফিফকে কল করে অনিমার বিষয়টা জানিয়ে আসার সময় বেশ চিল্লাপাল্লা শুনতে পেলো।সে ঘরে ঢুকতেই দেখে সোহান বেশ চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে।

>> আন্টি অনেক হয়েছে। আপনি জানেন কিছু ওর আর আমার সম্বন্ধে? আমি অনিমার বাগদত্তা হয়। তাই আমি আমার হবু বউয়ের জন্য স্ট্যান্ড নিতেই পারি এতে আপনার কোনো সমস্যা থাকলে আমার কিছু করার নেই। আর হ্যাহ আমি আজকেই অনিমকে তুলে নিয়ে যাবো নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে। আপনাদের মত পশুদের মাঝে আর রাখবোনা ওকে।

সোহান রাগের মাথায় নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। সে কি বলেছিলো সে নিজেও জানেনা। সোহান এক হাত দিয়ে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।নুহা বুঝতে পারলো সোহান সব রাগের মাথায় বলেছে কিন্তু ও যা বলেছে তার ধারণাও নেই ওর। অনিমা নির্জীব প্রাণীর মত হয়ে আছে। কে কি বলছে এখানে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।অনিমার ফুফি ও বাকি সবাই সোহানের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।
অনিমা সোহানের বুকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here