পতিতা বউ – পর্ব ৩৪

0
252

#পতিতা_বউ

৩৪তম পর্ব

অনিমা কে সোহান কোলে নিয়ে বেড রুমের দিকে এগিয়ে যায়। তার পিছে পিছে নুহা ও যায়। সোহান অনিমা কে শুইয়ে দেয়। মেয়েটার চোখ মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে আছে। বেশ সুন্দরি না হলেও মেয়েটা কিন্তু ঢের মায়াবি। শ্যামবর্ণের মেয়েরা মায়াবী হয়ই বটে। নুহার দরজা লাগানোর শব্দে সোহানের ধ্যান ভাঙলো। সে সোফায় গিয়ে দুই হাত একত্র করে কপালে ঠেকিয়ে বসে পড়লো। নুহা কিছুক্ষণ অনিমার কাছে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এক হাতে ফোন নিয়ে সে রাফিকে কল করার ট্রাই করলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হয়নি। নুহা ভালোভাবে জানে রাফি অনিমাকে খুব ভালোবাসে আর অনিমা ও রাফিকে। যদিও তাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই। তবে রাফির জেদের কারণেই এমন টা হয়েছে। আর তার কোন কারণই নেই। নুহা অনিমার কাছ থেকে উঠে সোহানের পাশে যেয়ে বসে তার বাহুতে হাত রাখতেই সোহান মাথা তুলে। তারপর আবার নিরব হয়ে বসে থাকে। নুহাই শুরু করে,

>>রাগের মাথায় বেশ বড় ভূল করে ফেলেছো সোহান। তুমি জানোও না তুমি বাহিরে কি বলে এসেছো। আর তোমার ধারণাও নেই এর জন্য অনু কতটা লাঞ্ছিত হতে পারে।

>>তুমি ওই মহিলার কথা কি শোনোনি নুহা? কেমন আজে বাজে বকছিলো উনি। মেয়েটা তার মা-বাবা হারিয়ে শোকে কাতর তার উপর এসব। আমি যদি স্ট্যান্ড না নিতাম তবে হয়তো ওকে আরো কিছু শুনতে হতো।যা আমি চাইনি। ওকে বলা কথা গুলো আমার নিজেরই শুনতে কষ্ট হচ্ছিলো তাহলে একবার ভাবো ওর উপর কি যাচ্ছে?

>>তা বুঝেছি সোহান। কিন্তু তুমি যে বললে তুমি ওর বাগদত্তা ওকে আজ তুলে নিয়ে যাবে এসব তুমি জেদের বশে বলে বেশ ভূল করে ফেলেছো। তুমি যাদেরকে চুপ করিয়েছো এসব বলে তারা এর কারণে আরো হাজারটা কারণ পেয়ে যাবে অনুকে কথা শোনানোর।

>>আর যদি আমি ওদেরকে কথা বলার সুযোগই না দেয় তোহ?

>>মানে?

>>যা বলেছি তা যদি সত্যি করে দেয়?

>>ভেবে বলছো তো এইসব? আর অনুর ও একটা মতামত আছে। যদি সে না মানে?অনিমার তো এটাও মনে হতে পারে যে তুমি তার উপর দয়া দেখাচ্ছো?

>>সে সব আমি জানিনা নুহা।অনু এসব দয়া ভাবলেও আমার কাছে এসব দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আমি অনুকে এসব মানুষের মাঝে ফেলে ওকে লাঞ্ছিত হতে দিতে পারবোনা। ট্রাস্ট মি নুহা আমি অনুকে খুব ভালো রাখবো। আমি আজই ওকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নিবো।

সোহান তার ফোনটা বের করে সোজা তার মা কে কল দেয়। সোহান তার মা কে সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর তার মা নিজেই তাকে উৎসাহ দেয়। তার ও আসার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু দেশের বাহিরে থাকায় তারা আসতে পারেনি। সোহানের এই সিদ্ধান্ত টা তার মা-বাবা দু’জনেই মেনে নেয় সাচ্ছন্দে।

সোহান ফোন রেখে এসব নুহা কে বললো। নুহা ভেবে নিলো হয়তো আল্লাহ তায়ালা এটিই চান। সোহান আর তার মা-বাবা যথেষ্ট ভালো তা বোঝাই যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে অনিমা ভালো থাকবে।
সোহান রুম থেকে বের হয়ে যায় দাফন-কাফন এর ব্যবস্থা করার জন্য। অনিমা ছাড়া তাদের আর কোনো সন্তান ছিলোনা। এসব কার্য করার জন্য কেউই নেয়। আর সোহান নিজেও চাই এসব সামলে নিতে।

প্রায় অনেক্ষণ পর অনিমার জ্ঞান ফেরে। নুহা তার পাশেই বসা ছিলো। অনিমা শোয়া থেকে উঠেই সামনের রুমে দৌড় দিলো। তার পিছে পিছে নুহা ও গেলো। অনিমা গিয়ে তার মা-বাবার লাশের সামনে ধপ করে বসে পড়লো।নুহা তার পাশে বসতেই সে এক ঝটকায় নুহাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কানতে শুরু করলো। নুহা অনিমাকে চেঁপে ধরে আছে তার দু চোখেও পানি। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

>>দেখলি নুহা মা-বাবা দু’জনেই চলে গেলো আমাকে একা ফেলে। আমি কি এতটাই খারাপ সন্তান যে আমাকে এতবড় শাস্তি দিলো। নুহা প্লিজ বলনা ওদের ফিরে আসতে আই প্রমিজ আমি একদম বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকবো। কখনো শয়তানি করবো না। মায়ের সাথে ঝগড়া করবোনা। ওদেরকে উঠতে বলনা নুহা। ও বাবা উঠোনা তোমার মেয়েটা একা ভার্সিটি কিভাবে যাবে তুমি না নিয়ে গেলে? মায়ের সাথে আমার জন্য ঝগড়া করবে কে? বাবা সত্যি বলছি আমি একদম ভালো মেয়ে হয়ে যাবো একটু ওঠো না….

অনিমা এক নাগাড়ে কাঁদতে কাঁদতে এসব বলতে থাকে। আর নুহা তাকে শান্তনা দিতে থাকে।

মাগরিবের আযান কানে ভেসে আসছে।
আসরের নামাজের সাথে অনিমার বাবা-মার দাফনকাজ সম্পন্ন হয়। সোহান দায়িত্বের সাথে সব কিছু করে।
অনিমা হাটুর সাথে মাথা ঠ্যাস দিয়ে বসে আছে। নুহা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
একটু পরেই সোহান এসে রুমে ঢুকতেই অনিমা উঠে তার গালে একটি সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতাই সবাই থ।

>>নিজেকে কি মনে করেন আপনি? আপনি খুব মহান এটাই দেখাতে চান তো? আপনি খুব দয়ালু। কি দরকার ছিলো আপনার ফুফিকে বলার যে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন আজকেই? এসব কোন ধরনের অসভ্যতা? আমাকে কি মনে করেন আপনি? আমি কারো দয়ার পাত্র হতে চাই নাহ। চলে যান আপনি দয়া করে। আমি করবোনা আপনাকে বিয়ে।

অনিমার কথা বার্তায় সোহানের মাথায় রক্ত উঠে যায়। সে অনিমাকে একটি থাপ্পড় দিয়ে দেয়। অনিমা থাপ্পড়ের চোটে পড়ে যেতে নিলেই সে তার দুই বাহু চেপে ধরে বেশ কড়াভাবে বলে,

>>ফুফিদের বাজে বাজে কথা শুনতে বেশ ভালো লাগে তোর তাই না? কিন্তু আমার সহ্য হয়নি। তোকে যখন অলক্ষী অলক্ষুণে এসব বলছিলো তখন আমার সহ্য হচ্ছিলোনা। আমি ভালোভাবেই জানি তুই এখানে পড়ে থাকলে তোর লাশ ও কেউ খুঁজে পাবেনা। তুই কাদের মাঝে আছিস তুই জানিস না। আমি কাপড় পাঠাচ্ছি চুপচাপ পড়ে নে। বিয়েটা আজকেই হবে এক্ষুণিই হবে। তোর কোনো কথা শুনতে আমি বাধ্য নয়। আজকে তুই এই বাড়ি থেকে আমার বউ হয়েই যাবি আমার সাথে। এটাই আমার লাস্ট কথা।

অনিমা এক দৃষ্টে সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এসব কথা শুনতে তার বেশ অসহ্য লাগছে। নিজেকে বেশ অসহায় মনে হচ্ছে তার। মা-বাবার সাথে তার লাশের খাটিয়া উঠলেই বেশ ভালো হতো হয়তো। সোহান অনিমাকে ছেড়ে দিতেই সে বসে পড়ে নিচে। সোহান নুহার উদ্দেশ্যে বলে,

>> আমি কাপড় পাঠালে ওকে রেডি করে দিও। আর ওকে চোখে চোখে রেখো।

এইটুকু বলে সোহান বের হয়ে যায়। অনিমা আবারো বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকে। আর বলতে থাকে,

>>কি থেকে কি হচ্ছে এসব আমার সাথে নুহা?মা বাবা আমাকে সাথে নিয়ে গেলোনা কেনো?
নুহার কাছে এসবের কোনো উত্তর নেই। সে শুধু অনিমাকে শান্তনা দিয়েই যাচ্ছে।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

[এই গল্পটাও একদিন পর পর দেবো।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here