পতিতা বউ – পর্ব ৩৫

0
251

#পতিতা_বউ

৩৫তম পর্ব

সোহান লালের উপর সাদা পাড়ের একটি শাড়ি পাঠালে নুহা অনিমাকে শুষ্ক সাজে সাজিয়ে দেয়।
বিয়েটাও একপ্রকার মনমরা ভাবেই হয়।অনিমাকে বেশ জোর করেই কবুল বলানো হয়েছিলো।

বিয়ে শেষে সোহান অবশিষ্ট সব মেহমান কে বিশেষ অনুরোধ জানাই চলে যাওয়ার জন্য। সকলে নির্দ্বিধায় চলে গেলেও ফুফি বেশ ঝামেলা পাকায়। ন্যাকা কান্না কেঁদে বলে,

>>হায়রে বলে কি? আমার ভাই ভাবি মারা গেলো আর আমাকে কিনা বের হয়ে যেতে বলছে। এইদিন ও দেখা বাকি ছিলো। বলি কি আমি তো ঘরেরই মানুষ। আমি বরং থাকি।

সোহান রুক্ষ গলায় উত্তর দেয়,

>>আপনি কেমন ঘরের মানুষ আমার তা জানাই আছে। আপন মানুষ হলে নিজের ভাইয়ের মেয়ের নামে আজেবাজে বকতেন না। ভালোই ভালোই চলে যান নাহয় আমি জোরাজুরি তে নামতে বাধ্য হবো।

ফুফি এক প্রকার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে যান ঘর থেকে। অনিমা কান্না করতে করতে আবারো জ্ঞান হারাই। একে তো সকাল থেকে কিছু খাইনি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সোহান তাকে কিছু খেতেই মানা করেছে এমনকি নুহাকেও বলেছে অনিমাকে ঘর থেকে কিছু খেতে না দিতে।পড়ে সোহান বাহির থেকে কিনে আনলেও নুহা ও অনিমা খাইনি। সোহানের কিছু কথা আর এই অদ্ভুত আচরণ টাই নুহার বেশ খটকা লাগে। নুহা সুযোগের আশায় ছিলো এর রহস্য জানার জন্যে। সোহানই জানে তার এমন আচরণের কারণ।

সোহান অনিমাকে কোলে করে নিয়ে কারের পেছনের সীটে শুইয়ে দেয়। তারপর নুহা আর সে মিলে পুরো ঘরটাকে লক করে বাহিরে দারোয়ান রেখে যায় পাহারা দেওয়ার জন্যে।

নুহা ঘর থেকে গাড়ি ডাকাতে চাইলে সোহান মানা করে। সে নিজেই ড্রপ করে দিতে যাই নুহাকে। গাড়িতে সোহান ড্রাইভ করছে আর নুহা কিছুক্ষণ পেছনে অনিমার দিকে তো একবার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা জামে আটকে গেলো। সোহান জানে এই জ্যাম টা ভাঙতে বেশ সময় লাগবে। তাই সে স্ট্যারিং এ মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর নুহা বললো,

>>সোহান ঠিক আছো?

সোহান মাথা তুলে বললো,

>>হুম।

>>একটা কথা বলো তো আমায় তুমি এমন কেন বলেছিলে যে অনু ওখানে থাকলে তার লাশ ও কেউ পাবেনা?আর খাবারের বিষয়টি?

প্রশ্নটি শুনে সোহান একবার পেছনে ফিরে অনিমার দিকে তাকাই। অনিমা এখনো অজ্ঞান আছে। তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে,

>>তখন যখন আমি মায়ের সাথে কথা বলে বের হয়েছিলাম অনিমার রুমের দুই রুম পরেই আমি ওর ফুফি আর ওর ফুফাতো ভাইয়ের কথা শুনতে পাই। কথা গুলো ছিলো এমন,
“ভাই ভাবি কে মেরে কি লাভ হলো বলতো? আমি তো শুনেছিলাম মেয়েও সাথে যাবে। তাহলে পুরো পরিবারই শেষ হয়ে যেত আর সম্পত্তি গুলোও সহজে হাতে চলে আসতো। কিন্তু এই মেয়ে তো রয়ে গেলো এখন দেখি আবার জামাই এসে জুঠেছে। এত কিছু করে কি লাভ বলতো সবই ভেস্তে গেলো। ”

এরপর উনার ছেলে বলে,

“আহা মা টেনশন নিও না। এত এত মানুষের ভীড়ে ওকে শেষ করা কোনো ব্যাপারই নাহ। এই ধরো ওর খাবারে কিছু মিক্স করে দিলেই হবে। সবাই ভাববে মা-বাবার শোকে আত্মহত্যা করেছে। আর যদি আজকে রাতে সুযোগ পাওয়া যায় তবে শেষ করে দিয়ে বাড়ির পেছনে পুতে দিলেই হবে। এত্তবড় প্রোপার্টি কোথাও গেড়ে দিলে কেউ কিচ্ছু জানবে না। তারপর বলে দিও পালিয়ে গিয়েছে কোথাও খোঁজ করার এমনিতেই কেউ থাকবেনা। তারপর পেপার্স গুলো হাতে পেলেই হয়ে যাবে শুধু সুযোগের অপেক্ষাই”

এইজন্যই আমি ওকে সারাদিন কিছু খেতে দেয়নি। তোমাদের রুমের সামনেও গার্ড দিয়ে রেখেছিলাম আমি তোমাদের সেফটির জন্য। আর আমি জানতাম অনু আজকে ওখানে থাকলে ওর খুব বিপদ হবে তাই ই তো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে টা করে ওকে নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে। অনিমাকে এসব বলা হয়নি। জানলে বেশ কষ্ট পাবে তাই আর বলিনি।

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে একটি নিঃশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণ পর আবার বললো,

>>আমার কি মনে হয় জানো নুহা আমি অনুকে ভালোবেসে ফেলেছি। ট্রাস্ট মি এর আগে কখনোই কারো জন্য এমন ফিল হয়নি। শুধু ওর ক্ষেত্রেই আমার সব ফিলিংস অন্যরকম।

সোহানের কথা শুনে নুহা যেন অনেক বড় আশ্বাস পেলো। আজকের ঘটনা গুলোই নুহা এটা বুঝতে পেরেছে যে সোহান নিঃসন্দেহে অনুকে সারাজীবন আগলে রাখবে। এটি ভেবে তার মনে এক প্রকার প্রশান্তি হচ্ছে। সে সোহানকে বলে,

>>তোমাকে অনেক অনেক থ্যাংকস সোহান। প্লিজ আজকের মতই সারাজীবন অনুকে আগলে রেখো। ওকে কখনোই কষ্ট দিও না। আমার তোমার উপর খুব ভরসা আছে। আর অনিমার হয়তো তোমাকে খুব সহজে মেনে নিতে পারবেনা কিন্তু আমি জানি তুমি ওকে তোমার ভালোবাসা দিয়ে ঠিক জিতে নেবে।

>>সেইটায় দোয়া করো প্লিজ আমি চাই অনু যেন সবসময় ভালো আর হাসিমুখে থাকুক। ওর আশেপাশে আমি কোন কষ্টকে ঘেষতে দেবোনা যতদিন আছি। ইন শা আল্লাহ।

এরই মধ্যে জ্যাম ছুটে গেলে সোহান গাড়ি স্টার্ট দেয়। আফসার ভিলার সামনে গাড়ি থামাতেই নুহা নেমে পড়ে। নুহা সোহানকে বিদায় দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়। এই দৃশ্যটি নাহিদা ব্যাল্কুনি তে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমনকি তিনি তার ফোনে বেশ কয়েকটি পিক ও তুলে নেয়। এই গুলোই কাজে দিবে নুহাকে সরাতে। এক ভেবে একটি বাঁকা হাসি হাসেন তিনি।

নুহা ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রাফি কল দেয়। নুহা কল টা পিক করার সাথে সাথেই রাফি সালাম জানাই,

>>আসসালামু আলাইকুম ভাবী।

>>ওয়ালাইকুম সালাম ভাই। সারাদিন এত কল দিলাম ধরলেনা যে?

>>আসলে ভাবি একটু ব্যস্ত ছিলাম। এতবার কল দেওয়ার কারণ টা কি? কিছু কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?

>>আমি ঠিক আছি কিন্তু..

>>কিন্তু কি ভাবি?

নুহা রাফিকে সব খুলে বলে। অনিমার বাবা-মা মারা যাওয়ার থেকে অনিমার ফুফির ষড়যন্ত্রের কথা এমনি সোহান আর অনিমার বিয়ের কথা পর্যন্ত। সব শুনে রাফি কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ বাদে সে গম্ভীর গলায় বললো,

>>সোহান ভাই বেশ ভালো মানুষ উনি অনুকে খুব ভালো রাখবে। অনু বেশ সুখে থাকবে ভাবী। আমার দেওয়া কস্ট গুলোও তাকে ভুলিয়ে দেবে তুমি দেখো। আচ্ছা ভাবী রাখি আল্লাহ হাফেজ।

নুহা কিছু বলার আগেই রাফি কল কেটে দিলো।
রাফি কল টা কেটে দিয়ে একটি সিগারেট হাতে নিয়ে ব্যাল্কুনি তে দাঁড়ায়।সন্ধ্যার ভেনিস শহর টা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। একদম কোলাহল মুক্ত। চারপাশেই হু হু নিরবতা। রাফির ভেতরেও কেমন যেন নিরব হয়ে আছে। রাফির পুরোনো কথা গুলো মনে পড়ছে।
সেদিন কলেজে একদম লালরঙা একটি থ্রি-পিচে দেখেই রাফী অনিমার প্রেমে পড়ে যায়।রাফি ওর খোজ নেয়। মা-বাবার আদরের মেয়ে বিধায় বাবা থাকে প্রতিদিন ড্রপ করে যেত ভার্সিটি তে। অনিমার চাল-চলন,কথা_বার্তা, বাচ্চামো ব্যবহার সব কিছুই রাফির মনে ধরে ছিলো।এরপর সে একপ্রকার ভয় দেখিয়ে আর জোর করেই অনিমার সাথে রিলেশনে গিয়েছিলো। প্রথম প্রথম অনিমা ভীত থাকলেও পরে সে ও বেশ ভালোবেসে ফেলে রাফিকে।

রাফি দেশ ছাড়ার আগে অনিমাকে বলেছিলো তার সাথে চলে যেতে কিন্তু অনিমা সবসময় তার মা-বাবাকে বেশি প্রাধান্য দিতো। তাই রাফিকে সে বলে মা-বাবার সাথে বিয়ের কথা টি বলতে। সেদিন কি কারণে যেন অনিমার বাবা-মা রাজি হননি। রাফি অনিমাকে বলেছিলো সব ছেড়ে তার সাথে চলে যেতে কিন্তু অনিমা যায়নি। তাই রাফি একপ্রকার জেদ করেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে।
মাঝে মাঝে অনিমা কল দিয়ে কিছু বলতোনা শুধু রাফির ভয়েজ শুনেই কল কেটে দিতো। কিন্তু রাফি একদিন তা বুঝতে পেরে সিম চেঞ্জ করে ফেলার পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে।
রাফি জানে সে অনিমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। মেয়েটার দোষ ছিলো সে তার মা*বাবাকে বেছে নিয়েছিলো। আর আজকে তাদেরও হারিয়ে ফেলেছে। আল্লাহই জানে সে কতোটা কষ্টে আছে।
এসব ভেবে রাফি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো সিগারেট টানাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan৩৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here