পতিতা বউ – পর্ব ৩৬

0
250

#পতিতা_বউ

৩৬তম পর্ব

সোহান রুমে ঢুকতেই দেখে অনিমা কোথাও নেই। সে ব্যাল্কুনির দিকে পা বাড়ালে দেখে অনিমা দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো খোলা,শাড়ির আঁচল থেকে থেকে হাওয়ায় উড়ছে। একটু কাছে যেতেই অনিমার ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে। চুপ চাপ গিয়ে অনিমার পাশে দাঁড়ায়।
চাঁদের আলোয় অনিমার শুষ্ক মুখ টা মায়ায় ভরে আছে যেনো।

>>কেনো বাঁচালেন আমায় ফুফির ষড়যন্ত্র থেকে? আমাকেও যেতে দিতেন মা-বাবার সাথে।

অনিমার কণ্ঠে এমন কথা শুনে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তার দিকে তাকায় সোহান। অনিমা ও তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে পানির ধারা স্পষ্ট। সোহান বুঝে গিয়েছে গাড়িতে অনু সব শুনেছে।

>>আমার মত একটা অলক্ষুণে মেয়ের সাথে না জড়ালেও পারতেন। কেন এত মহান হতে গেলেন বলুন তো?এমনিতেও আমার লাইফের সবাই ই শুধু হারিয়ে যায়। প্রথমে নিজের মা, তারপর রাফি আর আজকে বাবা-মা।ফুফি ঠিকই বলেন। আজ যদি ফুফি যদি মেরে ফেলতো তবে তাই ভালো হতো।

সোহান অনিমাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,

>>এই মেয়ে আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাই নাহ আমি।
একটা কথা শুনে রাখো আমি অত মহান নয় যতটা তুমি ভাবো। আমি তোমার জন্যই করেছি সব। তোমার মধ্যেই আমার স্বার্থ জুড়িয়ে আছে। কারণ তোমাকে খুব ভালোবাসি অনু তাই আমি চাই যাতে তুমি খুব ভালোথাকো। তোমার উপর একটা আচড় ও পড়তে দেবোনা যতদিন আছি।

অনিমা সোহানের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছে। সোহানের বুকের স্থানে রাফির বুকটা থাকলেই বোধহয় বেশি ভালো হতো কিন্তু নিয়তি তে রাফি নেই। এমনকি সে কেমন আছে তা রাফি জানেও না। না কোনো খোঁজ, না কোনো খবর তবুও অবুঝ মন টা রাফিকেই চাই।
কিন্তু তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার ও আগলে রাখার মানুষটারো দোষ কি? অনিমা কি পারবেনা এতকিছুর বিনিময়ে সোহানকে একটু ভালোবাসতে?

ভাবতে ভাবতে অনিমা সোহানের বুকে জ্ঞান হারায়। সোহান অনিমাকে খাটে শুইয়ে দিতেই তার ফোনে। ফোনটা সে হাতে নিতেই দেখে নুহার কল। সে ফোনটা তুলে নেয়,

>>হ্যালো সোহান, অনু কেমন আছে?

>>এইতো আছে এইমাত্রই কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।

>>সকাল থেকে কিছু খাইনি হয়তো তাই। আচ্ছা কিছু কথা ছিলো অনুর ব্যাপারে।

>>হুম বলো শুনছি।

অতঃপর নুহা অনিমা আর রাফির ব্যাপারে সব খুলে বলে সোহানকে। সোহান নুহাকে আশ্বস্ত করে বলে,

>>পাস্ট সবারই থাকে নুহা। আমারো ছিলো,তোমারো ছিলো এমন অনুর ও আছে। আমি চাই না অনু আর ওর পাস্টকে নিয়ে কষ্ট পাক। আমি ওকে এসব থেকে খুব দূরে সরিয়ে নেবো। আই প্রমিজ আর কোনো কষ্ট পেতে দেবোনা ওকে।

>>সত্যিই শুনে খুব আশ্বস্ত হলাম। দোয়া করি যেন তোমরা ভালো থাকো। এবার ঘুমিয়ে পড়ো তুমিও রাখছি।

বেশ কিছুক্ষণ নুহা আর সোহান কথা বলেছে। এদিকে আফিফ বারবার ফোনে ট্রাই করেও নুহাকে পাইনি। ইউজার বিজি শুনে তার যেন মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছে। পরক্ষণে ভাবলো হয়তো রাফি অথবা অনিমার সাথে কথা বলছে।
আফিফ সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে আছে বিধায় নেট ওয়ার্ক তেমন নেই বললেই চলে। তাই আজ সারাদিনে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা হয়েছে নুহার সাথে। হাটতে হাটতে আফিফের চোখ যায় একটি দোকানের দিকে। পাহাড়ি সামগ্রীর দোকান। হাতে বানানো ক্লিপ,চুড়ি,মূর্তি,শো-পিস এসবই। আফিফ নুহার জন্য বেশ কিছু জিনিষ কিনে নেয়।

সকালে নুহা ভার্সিটির জন্য হতেই নাহিদা উবার হায়ার করে নুহার পিছু নেয়। নুহা মূলত অনু কে দেখতে সোহান দের বাসাতেই যাচ্ছে।
সোহান কল দিয়েছিলো অনিমা নুহাকে আসতে বলেছে। নুহা ফোনে যখন বললো,
>>হ্যাঁ আমি আসছি। তুমি লোকেশন টা মেসেজ করে দাও।

এটি নাহিদা শুনে। এইজন্যই নুহার পিছু নেয়। নুহার গাড়ি সোহানদের বাসার সামনে এসে থামে। নাহিদা একটু দূরে গাড়ি থামায়। নুহা গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ঢোকা পর্যন্ত নাহিদা ভীষণ চালাকি করে নিজের ফোনে একের পর এক পিক তুলে নিলো। এরপর বাহিরেই অপেক্ষা করতে থাকে।

কলিংবেল এর শব্দে সোহান এসে দরজা খোলে। সোহানের পেছন পেছন অনিমা ও আসে নুহা ঘরে ঢুকতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় অনু। নুহা অনুকে সামলে নিয়ে সোফায় বসাই। সোহান তাদেরকে তাদের মত ছেড়ে দিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অনিমা কেঁদে কেটে একাকার হচ্ছে। নুহা তাকে শান্তনা দিচ্ছে।
তিনজনেই শান্তভাবে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসল্প। নুহা আর সোহান টুকিটাকি কথাবার্তা বলছে।
হঠাৎ নুহার বমি বমি ভাব হতে লাগলেই সে দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বমি করার ফলে নুহার মাথা আর গাঁ ঝিমঝিম করছিলো। বাথরুম থেকে কোনরকম হেলতে দুলতে বেড়িয়ে পড়ে সে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলের সামনে আসতেই মাথাটা ভীষণ চক্কর দিয়ে ঊঠে তার। পড়ে যেতে নিলেই অনু ধরে ফেলে তাকে।

>>নুহা আর ইউ ওকে? (সোহান)

>>নাহ ভীষণ বমি পাচ্ছে আর মাথা টা ঘুরছে।

সোহান একটু ভেবেই নুহাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর অনুকে বললো,

>>আমি নুহাকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি। তুমি ঘরে থাকবে নাকি যাবে আমাদের সাথে?

>>নাহ আমি বরং থাকি আপনিই যান ওকে নিয়ে।

>>ঠিক আছে খেয়াল রেখো নিজের দরজা ভালোভাবে অফ করে নিও আসি।

সোহান নুহাকে কোলে নিয়েই বাহিরে চলে আসে। এই দৃশ্য দেখে নাহিদা যেন মেঘ না চাইতেও জল পেয়ে গেলো। সাথে সাথে কয়েকটি পিক তুলে নিলো। সোহান নুহাকে গাড়িতে করে নিয়ে হসপিটালের দিকে ছুটলো।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here