পতিতা বউ – পর্ব ৩৭

0
262

#পতিতা_বউ

৩৭তম পর্ব

প্রেগন্যান্সি রেসাল্টের কীটের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। দাগগুলোর উপরে বার বার চোখ বুলাচ্ছে সে। আজ কত দিন পর তার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মা ডাক শোনার জন্যে এতদিন তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে সে অবশেষে সে কন্সিভ করেছে।

খবর শুনে সোহানও বেশ খুশি। নুহা এসে ডক্টর এর সামনে বসলো। ডক্টর নুহার উদ্দেশ্যে বললো,

>>কংগ্রাচুলেশনস মিসেস আফসার। ফাইনালি আপনি কন্সিভ করতে পেরেছেন। যেহেতু প্রেগন্যান্সিতে অনেক কম্পলিকেশন্স ছিলো সো আপনি রেগুলার চেক-আপ করাতে আসবেন। আর কিছু টেস্ট করে যান আজকে পড়শু নাগাদ রিপোর্টস আমি মি: আফসার এর কাছে পাঠিয়ে দেবো নাহয়। আপনার আসার প্রয়োজন নেই।

>>জি ডক্টর আসি তাহলে।

নুহা টেস্ট গুলো করিয়ে হস্পিটাল থেকে বেড়িয়ে গেলো। সোহান নুহাকে বললো,

>>তো আমি মামা হচ্ছি নাকি চাচা?

>>মামা হও আমার তো ভাই নেই তুমি নাহয় আমার ভাই হও।

>>হ্যা দ্যাটস গ্রেট ইউ নো আব্বু-আম্মু ও একটা মেয়ে পেয়ে বেশ খুশি হবেন।

চলো আইস্ক্রিম খেতে খেতে যায়।
দু’জনেই আইস্ক্রিম স্টল থেকে আইস্ক্রিম নিলো খেতে। অনিমার জন্যেও কিনে নিলো।

>>নুহা অনুর জন্য শপিং করার ছিলো। তুমি কালকেও আসতে পারবে প্লিজ?

>>ঠিক আছে।

নুহা আর সোহান দু’জনেই সোহানের বাসাই গেলো। নুহা রাতে ফিরলো একেবারে ডিনার করে। অনিমা নুহাকে ছাড়তেও চাইছিলোনা অসুস্থ বলে তাও এক প্রকার বলে কয়ে চলে এলো। বাসাই এসেও বেশ কিছুক্ষণ অনিমা নুহার সাথে ফোনে কথা বলেছে। পৌছেছে কিনা, মেডিসিন খেয়েছে কিনা অনিমা একটু বাদে বাদেই সোহানের ফোন থেকে নুহা কে ফোন করে করে জেনে নিয়েছে।

বেশ ক্লান্ত থাকায় নুহা সেদিন ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় ১১টা নাগাদ আফিফ ঘরে এসে পৌছায়। ৪দিন এর সেমিনার সে তিনদিনের মধ্যেই চলে এসেছে। নুহাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এক প্রকার না বলে এসেছে আফিফ। নাহিদা তখন ব্যাল্কুনি তে দাঁড়িয়ে ছিলো। আফিফকে দেখে নিচে নেমে এলো।

আফিফ ঘরে ঢোকা মাত্রই সে আফিফ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললো,

>>বাবা মাত্র দিন দিন পরে দেখেও মনে হচ্ছে যেন তিন জনম পর দেখেছি তোকে।

>>এতটা মিস করেছো ছোট মা। আচ্ছা দেখি বসতে দাও খুব টায়ার্ড আমি। আর নুহা কোথায়?

এই কথাটি শুনে নাহিদা আরো ন্যাকা কান্না কেঁদে বললো,

>>বাবা বউমার ব্যাপারে তোকে কিছু বলার ছিলোরে।

>>কি বলবে ছোটমা বলো।

নাহিদা তার ফোনে তোলা পিক গুলো আফিফের হাতে দিয়ে বললো,

>>দেখ বাবা তোর বউ কতটা দুশ্চরিত্রা। তোর পুরোনো বন্ধু সোহানের সাথে তার মেলামেশা দিন দিন বাড়ছে। দু’দিন বেশ রাত করেই ফিরেছে। সেই ছেলেটা এসে দিয়ে যেত তাকে। আজকে তো তার বাসাতেও গিয়েছিলো এই দেখ। ছিঃ ছিঃ ছিঃ তোর পিঠপিছে কি কি রঙ করে বেড়ায় সে।

একেকটা পিক দেখে দেখে আফিফের মাথায় যেন আগুন উঠে গেলো। সোহানের কোলে নুহাকে দেখে তো আরোও বেশি। নাহিদা বুঝতে পারে তীর একদম পয়েন্টে লেগেছে। সে ন্যাকা কান্না কেঁদে কেঁদে আরো বাজে বাজে কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে আফিফ ফোনটা রেখে হাঁটা দেয় রাগের মাথায়।
রুমে গিয়ে লাইট অন করে নুহার ঘুমন্ত মুখের দিকে নজর পড়তেই যেন তার সব রাগ উঁবে গেলো। রাগ গুলো পানির ফোটায় পরিণত হয়ে ঝরতে লাগলো। আফিফ নুহার মাথার পাশে মেঝেতেই বসে পড়লো। নুহার মুখের সামনে উপচে পড়া চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছিলো এমন সময় সাইড টেবিলে থাকা নুহার ফোনে একটি মেসেজ আসে,

“সকাল ১০টাই চলে এসো টেরি শপিং মলে।”

মেসেজটা এসেছে সোহানের নাম্বার থেকে। তা দেখে আফিফ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে চাঁপা স্বরে বললো,

>>কেন করলে তুমি এসব নুহা? আমি কি তোমাকে সুখে রাখতে পারিনি?কোনদিন দিয়ে অপূর্ণতাই রেখেছি বলো। কেমনে পারলে তুমি আমার হাত ছাড়া অন্য কারো হাত ধরতে? নাকি তোমার পুরোনো স্বভাব এখনো পাল্টাইনি? হাজার হলেও পতিতা ছিলে তো। তা রক্তে মিশে আছে তাই না?

সেখান থেকে উঠে আফিফ বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। সোজা চলে যায় বারে। নাহিদা ব্যাল্কুনি দিয়ে দেখছিলো সব। সে জয়ী হয়েছে তা ভাবতেই আনন্দ লাগছে তার।

রাতে আর বাসাই ফেরেনি আফিফ। বার থেকে বেড়িয়ে কারেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে নুহা উঠে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজটা দেখে। ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি করে শপিং মলে চলে যায়। পৌছাতে একটু দেরি হয়ে যায়। এদিকে আফিফের ঘুম ভাঙার পর কালকের কথা মনে পড়তেই সে শপিং মলের দিকে গাড়ি ঘুরায়।

নুহারা শপিং মলে ঢুকে সর্বপ্রথম অনুর জন্য ফোন কিনলো। তারপর গেলো অন্যান্য দোকানে অনিমা আপন মনে ঘুরোঘুরি করে কিনছে। আর সোহান সব দিকেই নুহা কে আস্ক করে করে কিনছে অনুর পছন্দ হওয়ার জন্যে।

সোহান আর নুহা শাড়ির দোকানে শাড়ি দেখছিলো। পাশেই অনু থ্রিপিচ কালেকশন দেখছিলো আলাদাভাবে। তখনি আফিফ মলে ঢুকতেই সেদিকে চোখ যায়। নুহা আর সোহান বেশ হাসাহাসি করছিলো। সোহান নুহার গায়ে শাড়ি রেখে রেখে দেখছিলো মানায় নাকি। এটি দেখে আফিফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়াইনি সেখানে। সোজা বাসাই চলে। আসে।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here