#পতিতা_বউ
৩৮তম পর্ব
শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে রুমে ঢুকতেই নুহা দেখে পুরো রুম গুমোট হয়ে আছে পর্দা সব লাগানো। মাত্রই দুপুর গড়িয়েছে মাত্র । নুহা লাইট অফ করতেই বেডের উপর এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকা আফিফের কাপড়চোপড় গুলোর দিকে নজর যায়। সেই সাথে নাকে আসে তীব্র সিগারেট এর গন্ধ। নুহা ব্যাগগুলো বেড এ রেখে ব্যাল্কুনির দিকে যায়।
আফিফের অবস্থা দেখে সে খানিকটা থমকে যায়।
কাউচে বসে সামনের টেবিলে পা রেখে খালি গাঁয়ে বসে আছে সে। একহাতে সিগারেট আরেকহাতে এশ-ট্রে। কেমন যেন বেপরোয়া দেখাচ্ছে তাকে।
>>বয়ফ্রেন্ডের সাথে শপিং করা শেষ হলো অবশেষে?
আফিফের কণ্ঠে এমন একটি কথা শুনে ভড়কে যায় নুহা।
>>হুয়াট ডু ইউ মিন আফিফ?
আফিফ এবার টেবিলে সজোরে একটি লাথি মেরে সিগারেট টা ফেলে উঠে দাঁড়ায়। নুহাকে টেনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে গলা চেঁপে ধরে। নুহার হাশফাশ অবস্থা। আফিফ গম্ভীর গলায় বলে,
>>হুয়াট ডু আই মিন? তুই জানিস না আমি কি মিন করছি? সোহানের সাথে তো বেশ ভালোই রঙ করে বেড়াচ্ছিস।
>>তুমি যেমন টা ভাবছো তেমন টাহ নয় আসলে..
>>চুপ একদম চুপ..! তোর কললিস্ট,মেসেজ কনভারসেশন সব দেখেছি আমি।এত খাতির কিসের ওর সাথে? মাত্র ৪টা দিন এর জন্য একা করে দিয়ে গিয়েছিলাম আর তাতেই তুই টিকতে না পেরে অন্য কারো কাছে চলে গেলি। বাহ.! পতিতা ছিলিতো পতিতাই রয়ে গেলি। পতিতাগিরী তো তোর রক্তেই মিশে আছে। হাজার জনের অভ্যাস কি একজন দিয়ে পূরণ হয়?
আফিফের শেষের কথাগুলো একদমই শেষ করে দিয়েছে নুহাকে। সে আর নড়াচড়া ও করছে না। কিছু না জেনে না শুনেই কত কিছু বলে দিলো আফিফ। নুহার এখন ওকে কিছুই বোঝাতে ইচ্ছে করছে না। একদম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে সে। আফিফ নুহার গলা ছেড়ে তার বাহু শক্ত করে চেঁপে ধরে এবার। নুহা পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কি বলবে ও আর? আফিফের ভালোবাসা এতই ঠুনকো যে চোখে দেখা কেই মেনে নিলো। একবার পুরো কথা জানার চেষ্টাও করলোনা। বিশ্বাস তো তার মধ্যে নেই বললেই চলে।
আফিফের চোখ-মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
>>তুই আমার ভালোবাসার যোগ্যই নাহ রে। বল আমার চেয়ে সোহান কি বেশি..
আর কিছু বলার আগেই নুহা একটি চড় বসিয়ে দিলো আফিফের গালে। কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো,
>>তিন বছরের পরিচয়, আড়াই বছরের সংসার এই চিনলে তুমি আমাকে? তোমার মত ফালতু একটা লোককে আমি এতটা ভালোবেসেছিলাম যে আমাকে বিশ্বাসই করেনা। ছিঃ..!
আমার আর কিছু বলার নেই তোমাকে থাকো তুমি তোমার নিচু মানুষিকতা নিয়ে।
নুহা গিয়ে লাগেজ বের করে কাপড়চোপড় গুছাতে লাগলো। আর আফিফ গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। নুহা চলে আসলো সব ছেড়ে আবারো মহুয়া পল্লীতে। আফিফ তাকে একটা বারের জন্য ও আটকাইনি।
বর্তমানে….
রাশু খালার ডাকে ধ্যান ভাঙে আফিফের।
>>বড়বাবা?
>>হু খালা বলেন?
>>বউমণি এভাবে কোনায় গেলো? বেচারি কাদতাছিলো। তোমাগো কি ঝগড়া হোয়লো নাকি?
>>হু খালা।
>>দেখো বড়বাবা বউমণি রে ফিরাইয়া আনো। হেই বউত ভালা। আইচ্ছা হুনো নিচে কে একজন আইছে তোমারে খুঁজে কদ্দুর আহো।
>>আচ্ছা খালা তুমি যাও আমি আসছি।
ফোন বেজে উঠতেই নুহার ভাবনার অবসান ঘটে। নুহা চোখ মুছে,ফোন হাতে নিয়ে দেখে অনুর কল।
>>হ্যালো অনু?
>>হ্যালো নুহি শুননা।
>>হ্যাঁ বল শুনছি?
>>শুন আজকে সোহানের আব্বু-আম্মু এসেছে।তারা আবার আমাদের বিয়ে করাতে চাই বড় করে।পড়শুর পরেরদিন বিয়ে। কালকে থেকে নানাধরনের অনুষ্ঠান শুরু। তুই আগামী ৩-৪দিন এর জন্য চলে আয়।বুঝলি?
>>এত আগে কে..
>>দেখ নুহি আমি এত কিছু জানিনা। তুই আসবি ব্যাস আসবি। নাহয় আমি আর সোহান রাগ করবো।
নুহা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।সে বললো,
>>আচ্ছা আমি আফিফের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।
>>আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আগাম তোকে আসতেই হবে। দেখ আমার বোন নেই কোনো আমি এখানে একা যা আছে সব তুই ই বুঝলি।
>>জি বুঝেছি। যা এখন শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা কর।
>>করছিই তোহ বাই।
নুহা ফোনটা রাখতে বা রাখতেই দরজায় টোকা পড়লো,
>>কে?
>>আমি তোর মামুণি।আসমু?
>>হ্যাঁ মামুণি আসো।
শবনম বেগম দরজা ঠেলে ভেতরে আসলেন।হাতে একবাটি তেল। তা দেখে নুহা বললো,
>>সত্যিই মামুণি এর খুব দরকার ছিলো কতদিন তুমি এভাবে তেল লাগিয়ে বিলি কেটে দাওনা মিস ইউ সো মাচ।
তিনি নুহার মাথায় তেল লাগাতে লাগাতে বললেন,
>>জামাইর সাথে সব ঠিক আছেতো মা?
>>হ.হ্যাঁ মামুণি হঠাৎ এই প্রশ্ন করলা কেনো?
(একটু হচকচিয়ে)
>>না মানে তোর চেহারাছুরত কেমন জানি মন মরা হইয়া আছে। তোর শরীল স্বাস্থ্য ভালা তো?
>>হ্যাঁ মামুণি সব ঠিক আছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু কথা হলো গিয়ে তোমার নুহার এখন মা হতে যাচ্ছে তো তাই দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে।
>>কি?? কি কইলি মা? তুই পোয়াতি? আল্লাহ এতো সুন্দর আর খুশির এক্কান খবর দিলি রে মা.! (প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে)
শবনম বেগম নুহাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে দিলেন আবারো। নুহাও যেন তার মায়ের বুকে আসতে পেরে যেন পরম শান্তিতে আছে।
নুহা একবার আসার পর সেলিম গুন্ডা আবারো গণ্ডগোল করে। তাই আফিফ গত দুই বছরে তাকে এখানে একবার ও আসতে দেয়নি। দুই বছর মামুণিকে দেখেনি সে। মামুণির বুক পাইনি সে। কতটা কষ্টে ছিলো তা বলার বাহিরে। সেই সব জমানো কষ্ট আজ মিটিয়ে নিচ্ছে সে।
চলবে…
#Razia_Binte_SuLtan