প্রেমমানিশা – পর্ব ১২

0
236

#প্রেমমানিশা(১২)

বাড়ি নীরব, চারদিক সুনসান। শোনা যাচ্ছে না কোনো কাক পক্ষির ডাকও। ছুটির দিন হলেও সকলে তাদের কাজেই ব্যস্ত। মিস্টার আমান তার নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। শায়খ তার অফিসের কাজ নিয়ে বসেছে বহু আগেই। ছুটির দিন বলেই হয়তো তার ব্যস্ততা আরও বেশি। মিস্টার আশরাফ আর সানাহ্ লাইব্রেরী ঘরে বিভিন্ন বই নিয়ে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত। অন্যদিকে মিসেস রাহেলা রান্নাঘরে রান্না করতে ব্যস্ত।

মিসেস রাহেলার হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিচ্ছে রহিমা আপা। রহিমা আপা সাহায্য করাতে মিসেস রাহেলার কাজ এগোলেও কাজের কোনো শেষ নেই তার। ছুটির দিনে তার কাজ যেন আরও এক ধাপ বেড়ে যায়। এই তো একটু আগেও সবগুলো ঘর রহিমা আপাকে নিয়ে ঝাড় দিয়ে এলেন। ফুলির মাকে ঘরের জানালা মোছার কাজে লাগিয়েছেন আর লিপির মাকে ঘরের ফার্নিচার মোছার কাজে লাগিয়েছেন। তবুও যেন অনেক কাজ এখনও বাকি।

আজ রাহেলার মন যেমন আনন্দে ভরপুর তেমনই আবার বিষণ্ণও। রাহেলার বিষণ্ণতার কারণ হলো তার শাশুড়ি। মানুষটা দুই বছর আগেও তাদের সঙ্গে ছিল। মানুষটা সঙ্গে থাকলে মনে হতো সময় কত তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায় আর এখন মনে হচ্ছে জীবন যেন তার আপন জায়গাতেই থেমে আছে।

রাহেলার শাশুড়ি মা ছিলেন মিসেস আঞ্জুমান। মিসেস আঞ্জুমান যখন ছিলেন তখন রাহেলাকে ঘরের কাজকর্মে এতটা জড়িয়ে যেতে হতো না। দুই শাশুড়ি বৌমা মিলে হাতে হাতে কাজ করে ফেলতেন। আবার ঈদ উৎসবে দুজনে মিলে কিছু কাজের মানুষ সঙ্গে করে পুরো বাড়ি ধোয়া মোছার কাজ চালাতেন।
অবশ্য এখন আর এসব হয় না। এখন সব কাজ রাহেলাকেই করতে হয় তবে এসব কাজের মধ্যেও রাহেলা তার আনন্দ খুজে পান। কথায় আছে ‘ সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে। ‘

মা-বাবাহারা মেয়ে রাহেলাকে তার শাশুড়ি আঞ্জুমান বেশ ভালই আগলে রেখেছিলেন। তাদের সংসার চলছিল বেশ অনাড়ম্বরে কিন্তু দুঃখের কালো ছায়া তখনও তাদের পিছু ছাড়েনি তাই হয়তো দুই বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী হয়েই মারা গেলেন মিসেস আঞ্জুমান।

মা বাবার পর শাশুড়িকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন রাহেলা তবে সেই সময় তাকে আগলে নেন মিস্টার আমান। নিজে মা বাবাহারা হয়েও অনাথ স্ত্রীকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখেন। এটাই হয়তো একজন স্ত্রী হিসেবে রাহেলার পরম পাওয়া।

ভাসুর, দেবর, স্বামী আর সন্তানহীন জীবন এখন রাহেলার বেশ ভালই কাটছে। বলা চলে অনাড়ম্বরে কাটছে। শাশুড়িকে হারানোর দুঃখও কাটিয়ে উঠেছে রাহেলা। তবে মাঝে মাঝে তার কথা হুট করে মনে পড়ে যায়। আর যখন মনে পড়ে তখন বাঁধনহারা চোখের নোনাজল যেন বেড়িয়ে পড়ে নিজ গন্তব্যে।

‘ এই কোথায় আপনারা ? যে যা করছেন সব ছেড়ে ছুড়ে এখন খেতে আসুন…… দেরী করলে আমি সব ফ্রিজে রেখে ফ্রিজ লক করে দিবো ‘ মিসেস রাহেলা খাওয়ার টেবিল সাজাতে সাজাতে বললেন।

খানিকক্ষণ বাদে সকলে একে একে নিজেদের জায়গায় এসে বসলো। রাহেলা নিজ হাতে সকলের পাতে খাবার দিয়ে নিজেও খেতে বসলো। আজ দুপুরের খাবার ভুনা খিচুড়ি আর আলু মুরগির তরকারি, সানার এই তরকারি বেশ পছন্দ।

সানাহ্ বাঙালি খাবারদাবার খুব কম খায় কেননা ছোটো থেকেই খানিকটা বিদেশি কায়দায় বড় হয়েছে সে। সানার মা আমরিন সানাহ্কে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি কায়দায় তৈরি হওয়া খাবার খাইয়ে অভ্যাস করেছিলেন। কিন্তু রক্ত আসলে কথা বলে। তাই হয়তো সানার বাবা আফজাল সাহেবের খিচুড়ি পছন্দ করার অভ্যাস সানাহ্ও পেয়েছে।

‘ কিরে সানাহ্ খিচুড়ি কেমন হয়েছে বললি না ? ‘ মিসেস রাহেলা অবাক হয়ে বললেন।

‘ ভালো হয়েছে মামী…… ঠিক আগের মতো ‘ সানাহ্ আলতো হেসে বললো।

সানার কন্ঠে থাকা মলিনতা সকলের কাছেই ধরা পড়লো । কেউ আর কিছু বলে সানার মনের বিষণ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করল না। অতঃপর সকলেই খাওয়ায় মন দিল। তবে ভাগ্নির এহেন বিষণ্ণতা মিসেস রাহেলাকে ক্রমশ চিন্তিত করে তুলছে। সানাহ্কে এমন বিষণ্ণ আগে কখনও দেখেননি তিনি। হ্যাঁ, সানাহ্ আগেও হুটহাট এরকম কাউকে কিছু না বলে মামার বাড়ি এসেছে ঠিকই কিন্তু কোনোদিন এরকম মনমরা হয়নি। সানার আজকের বিষণ্ণতা যেন জগতের সকল বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

মিসেস রাহেলার একবার মনে হলো কায়নাতকে ফোন করে সবটা জানা দরকার। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হলো মেয়েটা একটু শান্তিতে সময় কাটাবে বলে এসেছে। এখন সেই শান্তির মাঝে ব্যাঘাত অন্তত রাহেলার পক্ষে করা সম্ভব নয়। যা করার সানার মামারাই করবে। তাই কায়নাতকে ফোন করে সানার রাজশাহীতে থাকার ব্যপারটা জানানোর চিন্তা মিসেস রাহেলা তার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলেন।

পৃথিবী যেমন সৌরজগতের আপন কক্ষে ঘুরে ঘুরে জায়গা বদল করে, জীবনও তেমনই ঘুরে ঘুরে একেক সময় একেক রূপ নেয়। জীবনের এই গতি হঠাৎ কঠিন নিয়মের শিকলে বাঁধা পড়া মানুষকেও বদলে দেয়। সানাহ্ সবসময় কঠিন নিয়মের বেড়াজালে জড়িয়ে থাকলেও কখনও কখনও সেও নিয়মের জাল ভেঙে বেরিয়ে আসে। উড়ে যায় মুক্ত পাখির মতো। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকৃতির নিয়মে।

সানার চিরায়ত স্বভাব বলে বিপদে পড়ে এরকম পালিয়ে যাওয়ার মানুষ সানাহ্ নয়। তবুও সানাহ্ তার স্বভাব বদলে কখনও কখনও বিপদে শক্ত থাকার পরিবর্তে নরম কাচের চুরির মতো হালকা চাপে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়। পালিয়ে যায় কাপুরুষের মতো….কখনও কাছের মানুষদের কাছে কিংবা কখনও দূর দূরান্তে এক রাশ অচেনা মানুষদের মাঝে।

দিন গড়িয়ে আঁধার নেমে এসেছে ধরণীতে। চারদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন। রাতের আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। সম্পূর্ণ অন্ধকারের মাঝ দিয়ে শোনা যাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক সেই সঙ্গে দূরে কোথাও বেজে চলেছে এই রাত তোমার আমার। রাতের আকাশে চাঁদও দেখা দিয়েছে খানিকটা ছোট হয়ে, আভাস দিচ্ছে সামনেই পূর্ণিমার রাতের।

দিন পেরিয়ে আঁধার নেমে এলেও ফারহান আর মিস্টার কবিরের অনুসন্ধানের সমাপ্তি ঘটেনি,তাদের অনুসন্ধান এখনও চলমান। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সানাহ্কে খোঁজা হয়নি । পুরো ঢাকা শহরের ওলি গলি সব খোঁজা হয়েছে। সানাহ্দের ঢাকা শহরে যত আত্মীয় স্বজন আছে সবার বাসায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তবে সকলেই বিরস মুখে নেতিবাচক উত্তর জানিয়েছেন। দুই দিন পরপর সানাহ্কে নিয়ে খোঁজাখুঁজিতে আত্মীয় স্বজনেরাও বেশ বিরক্ত।

অবশেষে সারা শহরে খোঁজা শেষেও যখন সানাহ্কে কোথাও পাওয়া যায়নি তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই প্রকৃতির নিয়মে বাড়ি ফিরে এসেছেন মিস্টার কবির আর ফারহান। দুজনেই বড় ক্লান্ত সারাদিনের ব্যস্ততায়। এইদিকে মিসেস কায়নাত নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়েছেন, আশপাশে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তবে ফলাফল শুন্য।

এর মধ্যে বাড়িতে আরেক প্রস্থ চিরুনি তল্লাশি হয়েছে যার ফলে সানার ঘরে একটা চিঠির খাম পাওয়া গেছে যার উপর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘ মিস্টার ফারহান ছাড়া কারোর জন্য পড়া স্ট্রিকটলি প্রোহাইবিটেড ‘। এই লেখা দেখে আর কেউ খামের ভিতরে কি আছে পড়ে দেখার সাহস করেনি। তবে সকলে এটা বুঝে গেছে খামে নিশ্চই ফারহানের জন্য চিঠি আছে যেটা আর সবার জন্য পড়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

বাড়ি এসে যখন ফারহান আর মিস্টার কবির সোফায় বসে জিরিয়ে নিতে ব্যস্ত তখন অতসী এলো দুই গ্লাস শরবত নিয়ে। শরবত দুটো ফারহান আর মিস্টার কবিরের কাছে দিয়ে সে অন্তর্ধান। খানিক বাদে অতসী ফিরে এলো হাতে একটা খাম নিয়ে। বাদামী রঙের কাগজী খাম……

অতসী খামটা এনেই ফারহানের দিকে বাড়িয়ে দিল। ফারহান সোফার গাঁয়ে হেলান দিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছিল কিন্তু অতসীকে দেখেই উঠে বসলো। অতসীর বাড়িয়ে দেওয়া খামটা হাতে নিল।ফারহানের দৃষ্টি হাতে থাকা খামের উপর। অতসী ফারহানের এহেন দৃষ্টি লক্ষ্য করে বললো ‘ আপাই আপনার জন্য চিঠি রেখে গেছে ‘।

চিঠি দেখে যে ফারহান বড়ই অবাক হয়েছে সেটা তার চোখ মুখের ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ফারহান তার অবাক ভাব কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটিয়ে উঠে ধীরস্থির হাতে খাম খুলে চিঠি জোড়া বের করল। খামে একটা নয় দুটো চিঠি, জোড়া চিঠি। সানাহ্ ফারহানকে কি এমন লিখেছে যে দুটো পাতা ভরে গেছে। কৌতূহল মেটাতে ফারহান চিঠি খুললো….

শ্রদ্ধাস্পদেষু কবি সাহেব,
অবাক হচ্ছেন ? অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি কি জানেন আপনারা যেদিন আমাদের বাড়ি আপনার আর আমার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে এলেন সেদিন আপনি আমাকে যেই প্রশ্ন করেছিলেন তার উত্তর আমার জানা ছিলো ? জানার কথা নয় কারণ আমি আপনাকে বলিনি। আমার ব্যাপারে এমন অনেক কিছুই আছে যা আপনি জানেন না আর হয়তো জানবেনও না। আপনি আমাকে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে যতটা অজ্ঞ মনে করেন ততটা আমি নই। হয়তো আপনার থেকে কম জানি কিন্তু জানি……যতটা জানলে একজন সাধারণ মানুষ হওয়া যায়।

একটা কথা বলবো ? অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আমি নিজেই বলছি। আপনার কাছে আমাকে বিয়ে করার যেমন অনেক কারণ আছে তেমনই আমার কাছেও আপনাকে বিয়ে না করার অনেক কারণ আছে। এখন ভাবছেন তো আগে কেন রাজি হয়েছিলাম ? তার পিছনেও কারণ আছে। কারণটা হলো যে আমি…না থাক বলতে ইচ্ছা করছে না। এখন হঠাৎ বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারণটা বলি ? না এটা আপনার অজানা থাকবেনা কারণ এটা আমি আপনাকে বলবই।

আপনি কি জানেন পুরো দুনিয়া এমনকি আপনিও যাদের আমার মা বাবা হিসেবে জানেন তারা আমার বাবা মা নন ? জানার কথা নয়, আশা আন্টিও জানেন না। আমার বাবা মা হলেন স্বর্গীয় আফজাল করিম এবং আয়াত আমরিন । মানে আমার বর্তমান বাবার পরলোকগত ভাই এবং ভাবী। আমার বর্তমান মা বাবা একইসাথে আমার চাচা-চাচী ও খালা-খালু। অবশ্য আমার মামণি (আয়াত আমরিন) থাকতে মাকে আমি মিমি বলে ডাকতাম আর বাবাকে ছোট বাবা। আশা আন্টির যদি মাঝে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হতো তাহলে আন্টি জানতে পারতেন যে আমি মায়ের নিজের সন্তান নই,বোনের সন্তান। এটা হলো প্রথম কারণ আপনাকে বিয়ে না করার।

ও এখানে একটা উপমা ভুল হতে পারে। স্বর্গীয় কথাটা কি মুসলিমদের ক্ষেত্রে খাটে ? জানা নেই আমার……এমনকি উপমা কথাটাও সঠিক কিনা আমার জানা নেই। উহ গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে সব। আসলে জ্বরের ঘোরে লিখছি তো তাই। লিখতে পারছিনা তবুও লিখতে হচ্ছে।

বাবা কি আপনাকে আমার অসুস্থতার কথা বলেছে ? বলতেও পারে আবার নাও বলতে পারে। অবশ্য আমার অনুমান ক্ষমতা বলছে বাবা হয়তো নিজেকে দোষ দিচ্ছে নয়তো মাকে। যার বহিঃপ্রকাশ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ঘটবে।দেখলেন কি লিখতে কি লিখছি..… যতসব আননেসেসারি কথাবার্তা।

আমি হঠাৎ হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। এই অসুস্থতা যেই সেই অসুস্থতা নয়, মারাত্মক অসুস্থতা এই সময় মা বাবা না পারতে আমাকে ঘরবন্দী করে রাখে পাছে আমি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাই। এই সময় আমার খুব জ্বর উঠে, চোখ লাল হয়ে বিভৎস আকার ধারণ করে। কপালের রগ ফুলে উঠে আর অন্ধকার আরও প্রিয় হয়ে উঠে। এই জ্বর আমার যত বাড়ে, পাগলামিও আমার তত বাড়ে। অবশ্য এসব মায়ের কাছ থেকে শোনা। আমি যে অসুস্থ আমি যদি সেটা বুঝতেই পারতাম তাহলে আমার অর্ধেক রোগ আগেই সেরে যেত। এটা হলো আমার আপনাকে বিয়ে না করার দ্বিতীয় কারণ।

আমার ভয়ংকর অতীত আর অসুস্থতার কথা জানার পর কোনো ছেলেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে,তাই আপনি আমাকে রিজেক্ট করবেন আর সানাহ্ রিজেক্ট হওয়া পছন্দ করে না তাই আমিই আপনাকে রিজেক্ট করলাম। একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছেন ? লক্ষ্য না করলে আমিই বলে দেই, প্রথমে আপনি আমাকে রিজেক্ট করলেন আর এখন আমি আপনাকে। মামলা শোধ বোধ হয় গেছে। ওহ্ হ্যাঁ এটা কিন্তু আপনাকে বিয়ে না করার তৃতীয় কারণ।

মা আমার অতীত আর অসুস্থতা লুকিয়ে আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এটা মায়ের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হলেও ঘটনার ভয়াবহতা তাকে বুঝাতে পারিনি।কিন্তু আমি আপনাকে ঠকিয়ে বিয়ে করতে চাইনা আর এটাই আমার আপনাকে বিয়ে না করার শেষ কারণ।

আজ আপনাকে আমার মামনি বাবাইকে নিয়ে দুটো মজার কথা বলবো । আমার যখন জ্বর উঠে তখন আমি বারান্দায় বসে থাকি। বিশ তারিখ রাতে আমার যখন জ্বর উঠেছিল সেদিনও বসেছিলাম। সেদিন বাবাই এসেছিল। আমার জ্বর হলে প্রায়ই বাবাই আর মামণি আসে অথচ আমি সুস্থ থাকলে আসেনা। সেদিনও বাবাই এসেছিল আর আশ্চর্যজনকভাবে এর আগের বারও বাবাইই এসেছিল। বাবাই এসে আমার কানে কানে তার প্রিয় গানটা গেয়েছিল,

এই রাত তোমার আমার
ঐ চাঁদ তোমার আমার
শুধু দুজনের

এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
কুহু কূজনে
এই রাত তোমার আমার….

আরও আছে তবে পুরোটা লিখলাম না। গানটা ইন্টারনেটে সার্চ করে শুনে নিবেন। আশা করি আপনি নিরাশ হবেন না। এবার আমার মামণিরটা বলি। মামনি যখনই আসতো তখনই একটা ছড়া কাটত। ছড়াটা আমার বেশ পছন্দ। অবশ্য এটা ছড়া না ছন্দ আমার জানা নেই। আপনাকে বলছি, আপনি বুঝে নিবেন। মামণি এই ছড়া তার বেচেঁ থাকাকালীনও শোনাত।

‘ মায়ের পরে স্থান যার
সে যে আমার দুটো মায়ের সমান,
তার ঋণের বোঝায় ক্লান্ত আমি
সে যে মায়েদেরই হৃদয় সমান।। ‘

এই ছড়া মামণি কাকে উদ্দেশ্য করে বলতো সেটা আগে জানা ছিলনা তবে এখন জানি। কিন্তু আমি আপনাকে বলবো না। পারলে নিজে বের করে নিন।

দেখেছেন চিঠি লিখতে লিখতে কত কি লিখে ফেলেছি। আমার এটাই প্রথম চিঠি। এর আগে কখনও কাউকে চিঠি লিখিনি। চিঠি লেখা নেশার মত। একবার শুরু হলে বন্ধ হতে চায়না, অনবরত চলতে থাকে কলমের কালি। এটাই কিন্তু আপনার কাছে আমার শেষ চিঠি নয়। মাঝে মাঝেই ইচ্ছা করলে হুট করে আপনাকে চিঠি লিখে চমকে দিবো তবে আপনার থেকে চিঠির উত্তর আমি প্রত্যাশা করি না।

এভাবেই চিঠি লিখতে লিখতে বছর ঘুরবে। আপনি বিয়ে করে ঘরে আমার থেকেও সুন্দরী বউ আনবেন। আপনাদের ঘর আলো করে সন্তান হবে। ঘরে ঢুকলেই বাচ্চার দুধের গন্ধ পাওয়া যায় এমন অবস্থা। এর মাঝেও আমার চিঠি লেখা চলবে।

তারপর আবার বছর ঘুরবে। আপনার বয়স হবে। আমি তখনও চিঠি লিখবো। এই চিঠি লিখা চলবে অনন্তকাল,আমার মৃত্যুর আগ অব্দি। যেদিন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন বুঝবেন আমি আর নেই।
পূর্বের কথায় আবার ফিরি। একদিন আপনার বিবি ঘর গোছাতে গিয়ে আমার আপনাকে লেখা চিঠিগুলো পাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করবে কে এই সানাহ্। তখন আপনি বলবেন আমার প্রাক্তন প্রেমিকা যার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল কিন্তু বিয়ে হয়নি।

আমাকে কিন্তু প্রাক্তন প্রেমিকা বলেই পরিচয় দিবেন। কেন? বলবো ? আমার সঙ্গে আপনার সম্বন্ধ করে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাই বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি আপনার প্রেমিকা।বিয়ে যেহেতু আমাদের হবে না তাই আমি আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা। প্রেমিকা না হলাম প্রাক্তন প্রেমিকাই সই। কারোর প্রাক্তন প্রেমিকা হতে হলেও যোগ্যতা লাগে।

পুনশ্চ: হুট করে আবার চিঠি লিখে চমকে দিবো।

ইতি,
সানাহ্

~ চলবে ইনশাআল্লাহ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here