অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী চতুর্থ পর্ব

0
290

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

চতুর্থ পর্ব

বাসায় এসে বেল বাজালো সারাহ্। সামিহা দরজা খুলে দিয়ে বলল,
“কিরে আপু, তোমার গালে কি হয়েছে?”

সারাহ্ উত্তর দিলো না। ভিতরে ঢুকে সোফায় বইগুলো রাখলো।

সামিহার দিকে তাকিয়ে মাথার হিজাবটা খুলতে খুলতে বলল,
“রাস্তায় পড়ে গেছিলাম।”

নার্গিস পারভিন বেরিয়ে এসে সারাহ্-র এ অবস্থা দেখে বলল,
“কি করেছো এসব?”
“তেমন কিছু না, আম্মু।”

সারাহ্ ডাইনিং এ গিয়ে বেসিনের উপরে লাগানো আয়নায় নিজের গালটা দেখছে। চামড়ার আ°স্ত°রণ উঠে গিয়ে জায়গাটা গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছে। একটু স্পর্শ করতেই জ্বা°লা করতে শুরু করলো। চোখ মুখ কুঁ°চকে গেল সারাহ্-র।

এমনসময় সারাহ্-র মনে হলো ফুটপাতে পড়ে যাওয়ার সময় ওর গালের কাছে ইমতিয়াজের হাতটা ছিল।

“তবে তো ওই লোকটার হাতেও ব্য°থা পেয়েছে, কে°টে গেছে বোধহয়।”
আনমনেই বলে উঠে সারাহ্।

“কোন লোকটা আপু?”

সামিহার কথায় চমকে উঠে সারাহ্ বলল,
“কই কেউ না।”

আর কিছু না বলে সারাহ্ নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে, জামা-কাপড় পাল্টে নিলো সে। কোমরে, হাতে, পায়ে বেশ ভালই ব্য°থা আছে। আজকে একটু জন্য বড়সড় দু°র্ঘ°ট°নার হাত থেকে বেঁচেছে।

সামিহা রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে এক পলকে সারাহ্-র দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ্ বেশ কয়েকবার ওকে দেখলেও তেমন পাত্তা দিলো না।

সামিয়া নিজ থেকেই বলল,
“কোন লোকটার কথা বলছিল আপু।”
“বললাম তো কেউ না।”
ধ°ম°ক দিয়ে বলল সারাহ্।

সামিহা মানলো না। আবার বলল,
“আরে তুমি কি শুধু শুধু বলছো নাকি? আমি স্পষ্ট শুনেছি তুমি কোনো লোকের কথা বলেছো। বলো কে?”

নাছোড়বান্দা মেয়ে সামিহা। শেষ পর্যন্ত সারাহ্ বলতে বাধ্য হলো, এ°ক্সি°ডে°ন্ট করতে করতে কিভাবে বেঁচে গেছে সে আর একটা লোক কিভাবে বাঁচিয়েছে ওকে।

আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সারাহ্ বলল,
“আল্লাহ্ সময়মত উনাকে পাঠিয়েছিল, না হলে কি যে হতো।”
“তুমি কি ওই লোকটাকে ভালো টালো বেসে ফেলেছো?”
“আরে না।”
হেলার সুরে বলে উঠে সারাহ্।

সামিহা হেলেদুলে বলে,
“নিজের ব্য°থা ভুলে কারো ব্য°থার চিন্তা করছো কেন তবে?”

সামিহার কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো সারাহ্। তারপর বলল,
“জীবন বাঁচিয়েছে, কৃতজ্ঞ আছি। তবে মাত্র এইটুকু সময়ে কাউকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসার যে অনুভূতি তা হুট করে অনুভব করা যায় না, (একটু থেমে) অনুভব করলেও তা সবার জন্য সবসময় হয় না।”

সামিহা ঠোঁট উলটে বলল,
“কৃতজ্ঞতা থেকে কি ভালোবাসা আসতে পারে না?”

সারাহ্ হাসলো। বলল,
“কৃতজ্ঞতা আর ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা এই পার্থক্য টুকু বুঝিনা, তাই ভালোবাসা শব্দটাকে খুব মূল্যহীন করে ফেলেছি। এখানে ওখানে, যাকে তাকে ভালোবাসি বলি আমরা।”
“এত কঠিন কথা বলো না তো আপু। ভালো লাগে না।”
সামিহা কিছু গাল ফুলিয়ে চলে যেতেই সারাহ্ মুচকি হাসলো।
______________________________________

তানজিমকে নিয়ে বাসায় ফিরেছে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা দরজা খুলে তানজিমকে বলল,
“কাগজপত্র সব ঠিকঠাক মতো জমা দিয়েছো?”

ভিতরে আসতে আসতে তানজিম বলল,
“জি আপু।”
“আর কিছু কি লাগবে?”

একটু ভেবে বলল,
“আ…আপাতত এরকম কিছু বলেনি।”
“ফ্রেশ হয়ে নাও।”

তানজিম রুমের দিকে যাওয়ার সময় মৃত্তিকার কথা শুনলো,
“আপনার হাতে কি হয়েছে?”

ইমতিয়াজ কিছু বলার আগেই তানজিম বলে উঠে,
“মহামানব হতে গিয়েছিল, নিজে ম°রে আরেকজনকে বাঁচাতে গেছিল।”
“তানজিম, চুপ কর।”

ইমতিয়াজের ক°ড়া ভাষায় বলা কথাটাতে তানজিম আরো কিছু বলতে গিয়েও বলে না, চুপচাপ নিজে রুমে চলে যায়।

হাফ হাতা শার্ট থাকায় ইমতিয়াজের কনুই আর হাতের উল্টো পাশের ক্ষ°ত°স্থানটা মৃত্তিকা ঠিকঠাক মতোই দেখতে পায়, ঘন দাঁড়ির আড়ালে গালে সৃষ্টি হওয়া ছোট ক্ষ°তটাও দেখে। কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারে না, কারণ ইমতিয়াজ রুমে চলে গেল।

মৃত্তিকা তাড়াতাড়ি করে স্যাভলন আর তুলা নিয়ে ইমতিয়াজের রুমে নক করলো।

“দরজা খোলা।”

মৃত্তিকা মাথার ওড়নাটা একটু টে°নে নিয়ে ভিতরে গেল। ইমতিয়াজ কপাল কুঁ°চকে বলল,
“আপনি?”

স্যাভলন আর তুলাগুলো রিডিং টেবিলে রেখে মৃত্তিকা বলল,
“ক্ষ°ত জায়গাগুলো ওয়াশ করে নিবেন।”

ইমতিয়াজ কোন জবাব দিলো না। মৃত্তিকা চলে আসার সময় বলল,
“বড়মনি আগামীকালকে বাসায় আসবে।”
“কল দিয়েছিল?”
“জি, (একটু থেমে) আপনাকে গিয়ে নিয়ে আসতে বলেছে।”

ইমতিয়াজ মাথা নাড়লো। মৃত্তিকা বের হয়ে গেলে ইমতিয়াজ দরজা লাগিয়ে দিলো। স্যাভলন-তুলা টেবিলে পড়ে রইলো। ইমতিয়াজ এগুলো ছুঁয়েও দেখলো না। সে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা চুপিচুপি দরজা খুলে ভিতরে আসলো। লোকটা যে ক্ষ°ত জায়গাগুলো যত্ন নিবে না তা সে জানে। যত্ন নেয়ার মতো অবস্থায় সে নেই আর না তার যত্ন নেয়ার কেউ আছে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মৃত্তিকাকে দেখে একপ্রকার ধ°ম°ক দেয় ইমতিয়াজ।
“আবার কি করছেন এখানে?”

ভ°য়ে কেঁ°পে ওঠে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ এগিয়ে আসে। মৃত্তিকা বড়বড় চোখ করে বলল,
“আ… আপনার..”

মৃত্তিকা থেমে যায়। ইমতিয়াজ বিছানায় বসে বলে,
“চলে যান।”

একটু বেশি সাহস দেখায় মৃত্তিকা। ইমতিয়াজের হাত টেনে নিয়ে স্যাভলন লাগিয়ে দেয়। এককালীন ছোট একটা ব্যা°ন্ডে°জও দিয়ে দেয়। তুলা নিয়ে গালে লাগাতে নিয়েই ইমতিয়াজের চেহারা দিকে নজর পড়ে মৃত্তিকার। রাগী চোখ তাকিয়ে সে। মৃত্তিকা হাতটা ছেড়ে দিলো।

“আপনাকে আমি চলে যেতে বলেছি কিনা?”

মৃত্তিকা মাথানিচু করে উঠে দাঁড়ায়। ইমতিয়াজ ব্যা°ন্ডে°জ খুলে ছুঁ°ড়ে ফেলে। স্যাভলনের বোতলটাও ছুঁ°ড়ে ফেলে দিলো। কাচের বোতলটা ভে°ঙে গুড়িয়ে গেল। মৃত্তিকা একটু কেঁ°পে উঠে সরে গেল।

রাগে সারা শরীর রি রি করছে ইমতিয়াজের। বলল,
“বের হন আমার রুম থেকে আর আমার সামনে আসবেন না।”

মৃত্তিকা বেরিয়ে গেল। হঠাৎ করে নিজের করা এমন কাজে নিজেই কিছু হতবাক সে। কিন্তু অজানা কারণে ইমতিয়াজের ব°কাটাতে ও কষ্ট পাচ্ছে। রুমের দরজা লাগিয়ে অঝোরে কাঁদছে মৃত্তিকা।

বাবার আদর না পাওয়া মেয়েটা কোনো পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারেনি কখনো, কাছে যাওয়ার চিন্তাও মাথায় আনেনি। ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীরা যখন প্রেমে মগ্ন ছিল, তখন সে পড়ায় মগ্ন ছিল। আজ কেন ইমতিয়াজে আ°স°ক্ত হলো সে? উত্তর সে নিজেও জানে না।

খেই তুলে মৃত্তিকা বলে উঠে,
“মাম, তুমি কোথায়?”

এদিকে ইমতিয়াজ নিজের চুল টে°নে ধরে বিছানার কোণায় বসে পড়লো। নিজে নিজেই বলল,
“কোনো নারী আমার কাছে আসাটা পছন্দ করতে না তুমি মিনা। তুমি থাকো বা না থাকো, আমার কাছে আর কেউ আসবে না।”
চোখের কোণে জমা পানিটা গড়িয়ে পড়লো।
______________________________________

সন্ধ্যার পর আহনাফ বেশ সুস্থ বোধ করছে। জ্ব°রটাও এখন নেই আর ক্লান্তিও কম। আফরোজা ওর বিছানা গুছিয়ে দিচ্ছে আর ও রিডিং টেবিলে বসে কোনো একটা নোট তৈরি করছে।

“এখন এসব পড়াশুনা না করলে হচ্ছে না?”

আফরোজা কথায় খুব একটা ভাবাবেগ হলো না। আহনাফ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। আফরোজা ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“কি খাবি এখন?”
“একটু পায়েস করতে পারবা?”
“কেন পারবো না?”

ভাইয়ের আবদার ফেলেনি আফরোজা। দ্রুতই রান্নাঘরে চলে যায়। দুধের বোতল ফ্রিজ থেকে বের করে ভিজিয়ে রেখে চাল ধুয়ে নেয়। রান্নার সময়ই জুহাইব এসে পাশে দাঁড়ায়।

আফরোজা একবার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হলো?”
“আমাকে ভুলে গেছো তুমি।”

আফরোজা প্রথমে কপাল কুঁ°চকে ফেললেও পরক্ষণেই হেসে বলল,
“হঠাৎ এমন কেন মনে হলো?”
“এই যে আমাকে আর সময় দেও না।”

চুলোয় বসানো পায়েসটা নেড়ে দিয়ে আফরোজা জুহাইবকে কাছে টে°নে বলল,
“ওতো পাত্তা আমি দিতে পারি না, এতোটুকুই পারবো।”
“এইটুকুই যথেষ্ট।”

“আফরোজা?”

আব্বাস সাহেবের ডাকে দুজনে সরে যায়। ড্রইংরুম থেকে ডাকছেন উনি। আফরোজা একটু জোরে বলল,
“জি, বাবা।”
“এখন রান্নাঘরে কি করো?”
“আহনাফ পায়েস খেতে চেয়েছে, সেটাই বানাচ্ছি।”

আব্বাস সাহেব আর কিছু বললেন না। ছেলের ইচ্ছার উপর কোনোকালেই জোর°জবর°দস্তি করেননি উনি। এখন তো সামান্য পায়েসের ব্যাপার।

আফরোজার গালে ব°লি°ষ্ঠ পুরুষের ভারী ঠোঁটের স্পর্শ পেল, ধীরে ধীরে গভীরতর হয়ে হঠাৎ দূরে সরে গেল। আফরোজা হেসে মাথানিচু করলো, জুহাইব বেরিয়ে গেল।

পায়েস তৈরি হলো। সুন্দর দুইটা বাটিতে পরিবেশন করে জুহাইব ও আব্বাস সাহেবকে দিয়ে আসলো আফরোজা। আরেকটা বাটিতে করে নিয়ে আসে আহনাফের রুমে।

ছোট বাচ্চাদের সুজি খাওয়ানোর আগে যেভাবে নেড়ে ঠান্ডা করে ঠিক সেভাবে আহনাফের পাশে দাঁড়িয়ে পায়েস ঠান্ডা করছে আফরোজা।

একচামচ আহনাফের মুখে তুলে দিয়ে বলল,
“কেমন হয়েছে?”
“ভালো।”

ছোট করে জবাব দিয়েই আহনাফ পালটা প্রশ্ন করলো,
“ভাইয়ার ছুটি তো একমাসের ছিল?”
“হ্যাঁ, এজন্যই তো আগামী সপ্তাহে চলে যাবে।”
“তুমিও যাবা?”
“না, আরো পড়ে যাবো।”

আহনাফ কিছুক্ষণ আবারো চুপ করে শান্ত ছেলের মতো পায়েসটা খেয়ে নিলো। তারপর বলল,
“কাল ঢাকায় যাবো।”

ভূ°ত দেখার মতো চমকে উঠলো আফরোজা।
“হঠাৎ ঢাকায় কেন?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহনাফ বলল,
“আন্টি অসুস্থ, দেখতে যাবো।”

আফরোজা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
“তানজিম কল করেছিল, ওই বলল আন্টি অসুস্থ। যাবে আমার সাথে আপু?”
“ঠিক আছে, যাবো।”

আহনাফ আফরোজাকে জড়িয়ে ধরে। মাত্র ৯ বছর বয়সে মা হা°রানো ছেলেটা মায়ের জায়গায় বোনকে বসিয়ে নিয়েছে। আদরে আদরে বড় করেছে যে এই বোনটাই।
______________________________________

রাতে ইমতিয়াজ খেতে আসলো না। মৃত্তিকাও ডাইনিং এ আসেনি। তানজিম দুজনকে ডেকে ডেকে অবশেষে ১১ টা বাজে নিজেই খেয়ে নিলো। কাল বাবা-মা বাসায় আসবে, সন্ধ্যা থেকে তাদের রুম গুছিয়েছে সে।

রাত ১২ টায় পুরো ফ্ল্যাটটাতে ভূ°তু°ড়ে আঁধার নেমে এলো। মৃত্তিকা চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। তানজিমের কথায় নিদ্রা কাটলেও সারা দেয়নি।

ডাইনিং এ বসে পানি খেয়ে চেয়ে রইলো ইমতিয়াজের রুমের দিকে। সম্পর্কে তো লোকটা ওর বড়বোনের স্বামী হয়, যদিও তাহসিনার বিয়েতে আসার আগে কখনোই সে ইমতিয়াজকে দেখেনি। নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারছে সে। রাগ হয় নিজের প্রতি, হাতের গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রাখে।

“কেমন মেয়ে আমি, মামের শো°ক না কাটিয়েই একটা লোকের জন্য অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। মাম আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।”
কথাটা মনে মনে ভেবেই কেঁদে দেয় মৃত্তিকা।

অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিতে না চেয়েও দিয়ে দেয় সে। উঠে গিয়ে নিশব্দে ইমতিয়াজের রুমের দরজাটা একটু ফাঁক করে। ইমতিয়াজের পায়ের দিকটা দেখা যাচ্ছে। রুমের ফ্লোর পরিষ্কার মানে ভা°ঙা কাঁচের টুকরোগুলো সরিয়েছে সে।

“তানজিম?”

ইমতিয়াজের কন্ঠে ভ°য় পেয়ে যায় মৃত্তিকা। ও ভেবেছিল লোকটা হয়তো ঘুমিয়েছে।

“কিছু বলবে?”

মৃত্তিকা কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ভ°য়ে শরীরে কাঁ°পুনি হচ্ছে। চুলগুলো গুছিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে শুয়ে পড়ে সে।

ইমতিয়াজ উঠে এসে দরজা খুলে কাউকেই দেখে না। ডাইনিং এর লাইট জ্বালায়, কেউ নেই। তানজিমের রুমে গিয়ে বুঝতে পারে সেও ঘুমাচ্ছে।

ইমতিয়াজ বেরিয়ে আসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মৃত্তিকার কক্ষের দিকে। তারপর আবারো নিজের হাতের দিকে তাকায়।

“ব্যবহারটুকু পাওনা ছিল আপনার, মিউকো।”
কথাটা ভেবে আবারো নিজের রুমে পাড়ি জমায় সে।
______________________________________

ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকা যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয় আহনাফ৷ আফরোজা, জুহাইবও যাবে ওর সাথে।

সাদা শার্ট, কালো ফর্মাল প্যান্ট পড়েছে আহনাফ। শার্টের পকেটে নেয়া লাল গোলাপটা যেকারো নজর কাড়তে বাধ্য। তাহসিনার দেয়া কালো ঘড়িটাও বামহাতে শোভা পাচ্ছে।

আফরোজা বুঝতে পেরেছে আহনাফ তাহসিনার মাকে না তাহসিনার কবরটুকু দেখতে যাচ্ছে। আফরোজার দীর্ঘশ্বাসের পাল্লাটা ভারী হলো, তার ভাইয়ের জীবন কি শুধু স্মৃ°তি নিয়ে কাটবে।

কুমিল্লা থেকে ঢাকা চলে আসলো মাত্র ৩ ঘন্টায়। রাস্তায় তেমন জ্যাম নেই বললেই চলে। কাকরাইলের কাছাকাছি থাকা গো°র°স্তা°নের কাছে এসে আহনাফ গাড়ি থামাতে বলল।

আহনাফ নেমে গেল, আফরোজা আর জুহাইব গাড়িতেই বসে রইলো। ওকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দেয়া উচিত।

আহনাফ তাহসিনার স°মা°ধীস্থলে গিয়ে বসে পড়লো। পকেট থেকে ফুলটা বের করে সামনের গাছে রেখে বলল,
“মনে আছে এখান ওখান থেকে ফুল এনে তুমি এভাবে গাছে ঝুলাতে পছন্দ করতে।”

নিজে নিজেই হাসলো আহনাফ। চোখের কোণের পানিটুকু সরিয়ে বলল,
“তোমার পছন্দে সাদা শার্ট পড়েছি, কেমন লাগছে আমাকে? (একটু থেমে) কি আর বলবে? বলবে ভালো লাগছে, কিন্তু কালো প্যান্ট পড়েছো কেন?”

আহনাফ আপন মনে হেসে বলল,
“তোমাকে আর দেখবো না, এটা ভাবলেই বুকের বামপাশে ব্য°থা হয় তাহু। কেন হলো এমনটা আমাদের সাথে?”

আহনাফ বুকে হাত দিয়ে বসে রইলো। এ ব্য°থা আর কেউ অনুভব করবে না, ও কাউকে বোঝাতেও পারবে না।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here