ফুলকৌড়ি (৩৭) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
384

#ফুলকৌড়ি
(৩৭)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

গাঢ় শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর।চারপাশটা ঠান্ডায় যবুথবু অবস্থা।ক্ষনে ক্ষনে যেনো হাত-পা বরফ হয়ে আসছে।সেই হীম-পড়া শীতের ভোরে বাড়ি থেকে রেডি হয়ে বের হচ্ছে কৌড়ি।শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায়।আজ থেকে তার ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা শুরু।এবাাড়ি থেকেই নিজ গ্রামে গিয়েই পরিক্ষা দিতে হবে তাকে।আর যাওয়ার উদ্দেশ্যে এই শীতের হিমশীতল সকালে তাকে রওনা হতে হচ্ছে।অথচ বাড়িতে থাকলে সবকিছু কতো সহজ হতো তার।নিরাপদ জার্নি হতো।সময়-মতো সুন্দর সুস্থ মস্তিষ্কে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে পরিক্ষা দিতে যেতে পারতো।না টেনশন থাকতো,এতো জার্নি করে ঠিকমতো সময় কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবে কি-না?আর না মানসিকভাবে তাকে এতোটা এলোমেলো থাকতে হতো!আফসোস নিজের বাড়ি-ঘর সব থাকতেও কতোদূর থেকে জার্নি করে তাকে পরিক্ষা দিতে হচ্ছে।
আবার মাথার মধ্যে চতুর্দিকের ভাবনায় ছড়ানো-ছিটানো।তন্মধ্যে সব ভাবনার মুল হয়ে দাঁড়িয়েছে,সেই মানুষটাকে নিয়ে।

‘খেয়ে গেলিনা!তবে আমি ইভানকে বলে দিয়েছি,একটু বেলা হলেই যেনো তোর খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।

কথাটা বলে তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন।—আমি খাবার দিয়ে দেবো?নিবি?

নীহারিকা বেগমের কথায় ভাবনা কাটলো কৌড়ির।স্মিথ হাসলো।অমায়িক স্বভাবের অসম্ভব অদ্ভুত ভালো এই নারীটা এই তিনমাসের মধ্যে কতো আপন হয়ে গেছে।আপন হয়ে গেছে কোথায়,তাকে আপন করে নিয়েছে মানুষটা।কেমন নিজ সন্তানের মতো আপন।নীহারিকা বেগমের গলা জড়িয়ে ধরলো কৌড়ি।ফের বিগলিত বিনয়ী গলায় বললো।

‘এতো সকালে খাওয়া যায়,নাকি খেতে ভালো লাগে?আর পরিক্ষার টেনশনে আমার মাথাসহ পেটটাও ভরা।একটুও খেতে ইচ্ছে করছেনা বড়মা।তাই খাবার দিয়ে নষ্ট করো না।আমার ক্ষুধা লাগলে আমি অবশ্যই ইভান ভাইয়াকে বলে কিছু একটা কিনে খেয়ে নেবো।তাই অযথা টেনশন নিওনা তুমি।আর খাবারও দেয়া লাগবে না।তুমি শুধু দোয়া করো,আমার পরিক্ষাটা ভালো হয় যেনো।

‘অযথা টেনশন?তোরা সন্তানেরা যে কবে বুঝবি বাবা মায়েদের এই অযথা টেনশন ঠিক কি?যাই হোক, নিজেরা মা বাবা হ তারপর ঠিকই বুঝবি মা বাবাদের এই অযথা টেনশন ঠিক কি?আর ইভানকে বলে বাহিরে খেয়ে নিবি কতো,সে তো আমি জানি!তোকে চিনিনা বুঝি!তবে বেলা হলে আমি ফোন দিয়ে ইভানকে খাবার কিনে দেওয়ার জন্য বলে দেবো।এবার বের হ,দেরী হয়ে যাবে।রাস্তাঘাটে কতো জ্যাম থাকে।যতো সকাল সকাল বের হবি ততোই ভালো।

ফের নিজের থেকে কৌড়িকে ছাড়িয়ে,মমতার নজরে তারদিকে তাকালেন তিনি।আঙুল ছুয়ে দিলেন কৌড়ির গালে ফের মায়ামায়া আদূরে গলায় বললেন।–আর দোয়া।সে তো আমার পেটের সন্তান,আমার পিঠের সন্তান, আমার আগলে রাখা সন্তান,আমার নিয়ন্ত্রাধীন সকল সন্তানদের জন্য সর্বসময়ে তাদের ভালোটা আমার মনস্তাত্ত্বিকে জপতে থাকে।আমার দোয়ায় সবসময় আমার বাচ্চারা ভালো থাকুকু,ভালো রাখুক ওদের প্রভু,মঙ্গল হোক, এই কামনায় থাকে।আর মায়ের দোয়া প্রভু সহজে বিফলে ফেলেননা,তোর পরিক্ষাও আল্লাহর রহমতে ভালো হবে।একদম টেনশন নিবিনা,কেমন?

বিমোহিত নজরে এতোসময় সামনের নারীটাকে দেখছিল কৌড়ি।এতো ভোরে,এই ঠান্ডায় কেউ এখনো উঠেনি।উঠেনি বলতে ভুল,উঠেছিলো।নামাজী ব্যাক্তিগন উঠে নামাজ পড়ে নিয়ে আবার শুয়েছে।শোয়ারই তো কথা।এতো সকালে এতো ঠান্ডায় কেউ কি আর নিজেদের আরাম বাদ দিয়ে জেগে বসে থাকবে।থাকার কথা নয়!অথচ এই মমতাময়ী নারীটা উঠে তার সবকিছু গুছিয়ে রেডি করে দিলো।খাবার না খেলেও,চা নাস্তা না খাইয়ে ছাড়িনি।কি অদ্ভুত সম্পর্ক।নেই রক্তের টান,নেই আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক।অথচ দূরের একটা সূত্র ধরে কতো মায়াময় এই সম্পর্ক।যেনো রক্ত নয়,আত্মীয়তাী নয় আত্মার সম্পর্ক।আত্মার টান।আর সেই আত্মার টানেই বুঝি বাধতে চেয়েছিলো,ওই মানুষটা তাকে।অথচ!হঠাৎই মন খারাপ হলো কৌড়ির। ড্রয়িংরুমে জ্বলতে থাকা বড় ঝকঝকা লাইটের আলোয় চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো,আশপাশ দিয়ে উপরনিচ সব জায়গায়।শূন্য!কেথাও কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই।আবারও উপরের দোতলার কাঙ্ক্ষিত রুমটার দিকে নজর দিলো কৌড়ি।নিঃশব্দ রুম।মনটা আরও বেজায় খারাপ হলো কৌড়ির।আজ চারটাদিন!
মানুষটা যে নীরব আচারন করছে তারসাথে,সেটা কি কখনো মানুষটার থেকে আশা করেছিলো সে।নাকি চেয়েছিলো তার মন?এই যে সে পরিক্ষা দেবে,সবাই তাকে কতো সাহস যোগাচ্ছে,কতো ভালোমন্দ কথা বলছে অথচ ওই মানুষটা তার ব্যাপারে কি নির্বিকার।সেই আগের মতো নির্জীব।বাড়িতে আছে।দু’বেলা তারসাথে দেখা হচ্ছে, অথচ না আগের মতো কথা বলার আগ্রহ দেখাচ্ছে!আর না তাকে দেখলে সেই দ্বিধাহীন নজরে তাকিয়ে থাকছে, আর না শুধুই তাকে খেয়াল করে মুগ্ধ নজরে দেখছে!যদিও এসব চায়নি চায়নি কৌড়ি।তবে তারপ্রতি অনাগ্রহী হোক এটাও তো মন চায়নি তার। এই অনাগ্রহতা সহ্য হচ্ছে না তার।মন পুড়ছে। ভালো লাগছে কিছু।সবকিছু যেনো বিষাদময় লাগছে।

‘কি হলো।যেতে হবে তো।থমকে দাঁড়িয়ে রইলি যে?

চমকাল কৌড়ি।মূহুর্তেই আবার নিজেকে সামলিয়ে নিলো।ভিতরে ভিতর দীর্ঘশ্বাস ফেলে জোরপূর্বক মুখে মৃদু হাসি টেনে বললো-কাওকে তো বলে যেতে পারলাম না।খারাপ লাগছে।

‘সবাই তো ঘুমে।এখন তুই নিশ্চয় এটা চাইছিস না,এই ঠান্ডায় সবাইকে ডেকে তুলে বলে যেতে।

কৌড়ি তড়িৎ মাথা নাড়ালো।ফের মুখে বললোো–না। কখনো না।

‘তবে ভেবেচিন্তে লাভ আছে?আর না মন খারাপ করে লাভ আছে?মন খারাপ করিসনা,সবাই ঘুমথেকে উঠলে দেখবি তোরসাথে যোগাযোগ করে নিয়েছে।তখন দোয়া চেয়ে নিস।

ভিতরে ভিতরে আবারও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কৌড়ি।মুখের মৃদু হাসিটা একটু প্রসারিত করে বললো–আচ্ছা। তবে যাই।

তড়িৎ কথা ধরলেন নীহারিকা বেগম।মিষ্টি ধমক দিয়ে বললেন–যাই কি!যাই বলতে নেই।বল আসি।আর খবরদার পরিক্ষা দিতে যাচ্ছো ভালো কথা,ওবাড়িতে থাকার চিন্তাভাবনা করবেনা কিন্তু একদম।দাদীআপা বলেছে,পরিক্ষার কেন্দ্রে এসে দেখা করে যাবেন।সেখান থেকেই দেখা করে কিন্তু চলে আসবে।বাড়িতে গিয়ে থাকার চিন্তা ভাবনা করবেনা একদম!ঠিক আছে?

সহসা কৌড়ি উত্তর দিতে পারলে।আজ কতোদিন বাদে সে নিজের শহরে পা দিচ্ছে!কতো পরিচিত অপরিচিত মানুষের সাথে দেখা হবে।নিজের শহরের রাস্তাঘাটা গাছপালা,আকাশ!আপন বাতাস!উফফ,কতোগুলো দিন পর দেখবে সে।ভাবনা মূহুর্তেই অন্যদিকে চলে গেলো তার।নীহারিকা বেগমকে বিদায় জানিয়ে লন এরিয়াতে গিয়ে দেখলো,শীতের ভারী জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে ইভান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ঘেঁষে চলেছে।মূহুর্তেই মনটা আবার-ও খারাপ হয়ে গেলো।বিচিত্র মন,অদ্ভুত এক আশা করেছিলো।তা বুঝি আশাতেই রয়ে গেলো।দোষ আর আশার কোথায়!দোষটা তো তার নিজের।পথটা তো সেইই এলোমেলো করে দিয়েছে।তবে আকাঙ্ক্ষিত মন কেনো আবার উল্টো পাল্টা চাইবে?আশা করবে?তবে পাগল মনটা সেটা বুঝলে তো।অবুঝ মনটা তো বলছে ওই মানুষটা তাকে কিছুতেই অবজ্ঞা করতে পারে না!কেনো জানি মানুষটার আচারনে,অদ্ভুত পাগলামোতে এই বিশ্বাসটা দৃঢ়রূপে মনে জন্মে গেছে তার।সেই মনোবলে কিছু একটা ভেবে আবারও পিছে ফিরলো সে।কুয়াশায় ঘিরে থাকা দোতলা বাড়িটা নিস্তব্ধ।দোতলার লন এরিয়ার দিকের বেলকনিগুলোও কেমন শূন্য, নিস্তব্ধ,নীরব।ঘুরেফিরে আরও একবার সেই কাঙ্ক্ষিত খোলা,স্তব্ধ বেলকনির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে এগোলো কৌড়ি।মূহুর্তেই বেলকনিতে পা রাখলো নিভান।এলোমেলো চুল।ফুলোফুলো চোখ।ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে চেয়ে রইলো কৌড়ির গমন পথে।মেয়েটার গায়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো সেই শালটা।মুখের হাসিটা যেনো আরও একটু প্রসারিত হলো নিভানের।দু-হাত ট্রাউজারের দুপকেটে গুঁজে বেশ নির্বিকার শান্ত নজরে কৌড়ির গাড়িতে উঠা দেখলো।ফের চমৎকার মৃদু হাসিটা ঠোঁটটা ছেয়ে,মৃদুস্বরে আওড়ালো।

‘বেস্ট অপ লাক,মাই ডিয়ার কৌড়িফুল।তোমার এক্সামসহ আগামী দিনগুলো খুব সুন্দর, শুভময় আর উচ্ছলতায় ভরপুর হোক।ওভাবে প্রতি কদমে কদমে তুমি তোমার ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও,নিভান সর্বদা তোমার মঙ্গলকামনাকারীনি সঙ্গ হয়েই থাকবে।কি ভাবছো, নিভান রাগে জেদে পড়ে তোমাকে আর চাইছে না বা চাইবে না সে?তোমার প্রতি সে আর আগ্রহ পাচ্ছে না?যদি এই ভাবনা মনে পুষে থাকো,তবে খুব ভুল ভাবছো।তুমি জানো-না, তোমাকে পাওয়ার আগ্রহটা নিভান ইহকালেও ছাড়বে না।ছাড়া সম্ভব নয় নিভানের।বরং তোমাকে পাওয়ার আগ্রটা নিভানের বেড়েছে।দিনকে দিন সেই বেড়ে চলা আগ্রহের তীব্রতা নেশাদ্রব্যের মতো শুধুই হ্রাস পেয়ে চলেছে,সেই নেশার তীব্রতা কিছুতে কমছেই না নিভানের প্রানপাখি।সেটা যদি তুমি একটু বুঝতে!একটুখানি বুঝতে!আর তোমাকে চাইছেনা বা চাইবে না নিভান?তবে নিভানের আগামী বেঁচে থাকার দিনগুলো চলবে কি করে?তুমি জানো কি!নিভান তোমাকে চাইছে তার প্রতি নিঃশব্দের নিঃশ্বাসে।শুধু তোমাকেই তার করে পাবার জন্য চেয়ে চলেছে সে।

নিভানের শান্ত নজরটা এখনো লন এরিয়ার কালো রঙের গাড়িটার খোলা জানালায়।ফ্রন্ট সিটে চুপচাপ বসে আছে কৌড়ি।ইভান যেনো কিছু গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত।গাড়ির ভিতরে ঢোকেনি এখনো সে।কানে ফোন, সঙ্গে কারও সাথে ফোনালাপ চলছে তার।কিছু একটা মনে পড়তেই নড়েচড়ে দাড়ালো।ঘরে ফিরবে ভেবে ফের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নজর দিলো আবারও।ভুলেও এদিকওদিক তাকাচ্ছে না কৌড়ি।মাথা নিচুকরে হাতের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মনেহচ্ছে। মন খারাপ তাহার তবে!কারণটা কিছুটা আচ্ করতে পেরে আবারও অদ্ভুত হাসিতে ছেয়ে গেলো নিভানের ঠোঁট।স্পষ্ট স্বরে গান না গাইলেও গুনগুনিয়ে সুর তুললো।

Ishq bhi tu hai pyar bhi tu hai
Tu hi meri mohabbat hai
Saans mein teri saans mein le loon
Teri agar ijazat hai

গুনগুনানোর সুরটা বাড়িয়ে পা বাড়ালো রুম।বেডের পাশের ল্যাম্পটেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে ধপ করে আধশোয়া হয়ে পড়লো বেডে।ফের ইভানের হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে ঢুকলো।সেকেন্ডের মধ্যে দক্ষ হাতে টাইপ করলো।

‘সাবধানে নিয়ে যাবি।

সেন্ড করতেই সঙ্গে সঙ্গে দুটো টিকচিহ্নে গোলাকর ঘরটা পূর্ন হয়ে গেলো।তারমানে ইভানের ফোনে কথা বলা শেষ।মূহুর্তেই রিপ্লাই এলো।

‘যথা আজ্ঞা বড়ো সাহেব।তোমার মতো দক্ষ ড্রাইভার নই,তবে আমি জানি, আমি আমার দাদাভাইয়ের জান, কলিজা,প্রানপাখি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি।আর তাকে কিভাবে নিয়ে যেতে হবে,রাখতে হবে।সেটাও খুব ভালো করে জানি।সো,আমার প্রতি বিশ্বাস ভরসা রাখতেই পারো।

ঠোঁটের মৃদু হাসিটা বিস্তৃত হলো নিভানের।মেসেজে লেখা শব্দগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষন।ফের পুনরায় মেসেজ আসতেই সেদিকে নজর দিলো– আমার জায়গায়,তোমার যেতে ইচ্ছে করছেনা?

সুগভীর শান্ত চোখ দুটো মেসেজের শব্দগুলোয় আঁটকে রইলো।ফের সময় নিয়ে উত্তর দিলো।–অমূল্য কিছু পেতে গেলে কিছু ইচ্ছেদের বিসর্জন দিতে হয়।মনের ছোটো ছোটো চাওয়া পাওয়া ছাড়তে ইচ্ছে না করলেও ছাড়তে হয়।তাতে মঙ্গলজনক কিছু পাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

মেসেজ দেখে চমৎকার হাসলো ইভান।ফের মজার ছলে রিপ্লাই দিলো।–‘তোমার মনে হয়না,তুমি রোমিও টাইপ প্রেমিক হয়ে গেছো?

মেসেজ দেখলো নিভান।তবে মেসেজের উত্তর না দিয়ে লিখলো।–দেরী হয়ে যাচ্ছে।গাড়ী ছাড়।আর সাবধান, খুব সতর্কতার সহিত গাড়ি চালাবি।আর কোনো সমস্যা হলে সেকেন্ড সময় অপব্যয় করবিনা,আমাকে জানাবি।

ফোনের সময়ের দিকে তাকালো ইভান।ভাবলো আসলে আর সময় ব্যয় করা উচিত হবেনা।নিভানকে বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে উচ্ছল মুখে একবার কৌড়ির দিকে তাকলাো।মেয়েটা চুপচাপ,শান্ত হয়ে বসে আছে।নজর তার ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন বাগানের দিকে।

‘কি মন খারাপ?

একটু চমকে ইভানের পানে তাকালো কৌড়ি। সময় নিয়ে মুখে জোরপূর্বক মৃদু হাসি টেনে সহসা মাথা নাড়ালো।মুখে কিছু বললোনা।মৃদু হাসলো ইভান।ফের বললো—তবে আমার জায়গায় দাদাভাইকে আশা করোনি,বলছো?

ধ্বক করে বুকের ভিতরে ধাক্কা দিয়ে উঠলো।সেই ধাক্কার ঢেউয়ে নোনাজ্বল এসে ভীড় করতে চাইলো চোখে।তবে তা সফল হতে দিলোনা কৌড়ি।কারনে হোক বা অকারনে এরকম ছিচকাদুনি মেয়ে তো সে কখনোই ছিলো-না।তবে ইদানীং কথায় কথায় কেনো মন খারাপ হয়!আর তার রেশ কাটাতেই চোখে নোনাজল ভরে যায়।কেনো?শান্ত নজর এলোমেলো হলো কৌড়ির।নিজেকে যতসম্ভব ঠিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে বললো।

‘আপনার যেতে ইচ্ছে না করলে,হাফিজ ভাইকে পৌঁছে দিতে বলতেন।আমার কিন্তু উনার সাথে যেতে কোনো অসুবিধা হতো না।উনিও কিন্তু নিজের বোনের মতো যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আমার।

আসলে মেয়েরা অদ্ভুত হয়,মনে এক কথা আর মুখে তাদের আরেক কথা।অথচ অভিমানী চোখ,গলার স্বর বলে দেয় ভিতরের কথা।অন্তরের জপে চলা কথা।কৌড়ির কথার উত্তরসরূপ ভিন্নবাক্য ছুড়লো ইভান।বললো।-‘দাদাভাই কে তুমি একবার বললে সে কিন্তু এই অসুস্থ অবস্থায়ও তোমাকে নিয়ে যেতে দ্বিতীয়বার ভাবতো না।

অভিমানের প্রগাঢ়তায় ছেয়ে গেলো মন।জপে উঠলো সে,’বলতে হবে কেনো।তিনি এতো বুঝদার,আর তার বেলায় এসে অবুঝ হয়ে গেলেন!অবুঝপনা শুধু তার বেলায় কেনো? মনেমনে যে অভিমান জমলো,সেই অভিমান কথার স্বরেও ছড়ালো সে।বাহিরের পানে নজর স্থির রেখে বললো।

‘দেরী হয়ে যাচ্ছে ইভান ভাইয়া।গাড়ী ছাড়ুন।

সংগোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ী ছাড়লো ইভান।মেয়ে মানুষ বলতে তার সৃষ্টির জটিল জীব মনেহয়।তাদের মন বোঝা যে কতো কঠিন, এটা ইভান হাড়হাড়ে টের পেয়েছে।তন্ময়ীকে পেতে তার যা বেগ পোহাতে হয়েছে।
তারচেয়ে সাত রাজার ধন জয় করা সহজ মনে হয়েছে।আর এবার বুঝি দাদাভাইয়ের পালা।

নিজের অফিস কক্ষে বসে আছে নিভান।ফর্মাল ড্রেসআপে থাকলেও মাথায় এখনো সাদা গোলাকার সেই পট্টি জড়ানো।এই অসুস্থ অবস্থায়ও তাকে ইমার্জেন্সি অফিসে আসতে হয়েছে।সেটা নিয়ে মা- কতো হম্বিতম্বি করলেন।অফিস গোল্লায় যায় যাক।তুই এই অবস্থায় কিছুতেই বাড়ি থেকে বের হতে পারবিনা। সম্পূর্ণ সুস্থ হবি তারপর বাড়ির বাহিরে আর অফিস!এরআগে কোনো কিছু নয়।আর অফিস-টফিস তো নয়ই।আরও কতো কি?বাড়ির মোটামুটি সবাই তাতে ইন্ধন জোগালো।বাধ্য হয়ে না পেরে ছোটো চাচ্চু ক্লায়েন্টের সাথে কথা বললেন।যাদের জন্য নিভানকে অফিস যেতে হবে।অনেক বুঝিয়ে কথা বলেও কাজ হলো-না।তারা নিভান ছাড়া ডিল মানতে রাজী নয়।
বিধায় মা’কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাধ্য হয়ে তারপর তাকে অফিসে আসতে হয়েছে।ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং শুরু হবে একটু পরে।অফিসে এসে নিজকক্ষে বসে নিজের পি-এ মৃদুল এবং শাহেদ সাহেবের সাথে,অফিস বিষয়ক কথা বললো কিছুক্ষণ। তারপর তারা নিজ দায়িত্বে চলে যেতেই মূহুর্তেই মাথায় এলো কৌড়ি।যদিও সারাদিন মেয়েটাই ঘুরেফিরে চলেছে তার মাথায়।বিশেষ চিন্তা মেয়েটা বাড়ি ফিরবে কখন?মেয়েটা পরিক্ষার হলে ঢোকার পর আরও দু’বার খোজ নিয়েছে নিভান।সাড়ে বারোটার পর থেকে আর খোজ নেওয়া হয়নি।এখন কয়টা বাজে?মূহুর্তেই হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো নিভান।প্রায় চারটা।এতোসময় বাড়িতে আসার অর্ধেক পথ মনেহয় চলে এসেছে।একটা খোঁজ নেওয়া দরকার! তখন বাড়ির ঝামেলা মিটিয়ে অফিসে এসে কথা বলতে বলতে কখন এতো বেজে গেলো খেয়াল হয়নি নিভানের।উফফ!তড়িৎ ফোনটা পকেট থেকে বের করলো।ইভান গাড়ী চালাচ্ছে ভেবে ফোনটা দেবে কি-না দ্বিধাদ্বন্দ্ব করেও ফোনটা দিলো।একবার কলে ফোনটা ধরলো না ইভান।বিষয়টা সাধারণ ভাবে নিলো নিভান।দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই রয়েসয়ে ফোন ধরলো ইভান।

‘কোথায় তোরা?বাড়িতে পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগবে?

কথাগুলো বলতে বলতে নিভানের মনে কেমন খটকা তৈরী হলো।রাস্তায় থাকলে তো,যানবাহনের শব্দ হবে।তবে ইভানের আশেপাশে এতো শুনশান কেনো?এতো নীরব।নিভানের কথায় হঠাৎই উত্তর দিতে পারলো-না ইভান।আমতাআমতা করে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো-না।সেটা বুঝে খটকা আরও দৃঢ় হলো নিভানের।সেই অনুযায়ী সহজ গলায় প্রশ্ন ছুড়লো।

‘কোথায় তুই ইভান?

দাদাভাইয়ের তীক্ষ্ণ ব্রেনের কাছে নিজের চালাকি খুবই নগন্য, তাই চালাকি না করে জড়ানো গলায় আমতা আমতা করে বললো– আমরা কৌড়িদের বাড়িতে দাদাভাই।

যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই করলো ইভান।
মূহুর্তেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো নিভান।চকমকানো গলায় মৃদু চেচিয়ে বললো–‘হোয়াট?

‘দাদাভাই আমার কথা না শুনে অশান্ত হবে না!প্লিজ দাদাভাই!

অথচ কথা শুনলোনা নিভান।মূহুর্তেই রাগান্বিত গলায় একের পর এক বাক্য ছুড়লো।—‘ইভান,তোরা ওখানে কি করছিস?আমি কি বলেছিলাম তোকে?আর ওরসাথে হাফিজ ভাইও যেতে পারতাে।সেখানে তোকে পাঠিয়েছি আমি।কেনো জানিস না?ও-তো বুঝতে চায়না আমাকে,তুইতো বুঝিস তবুও এই ব্লান্ডারটা কেনো করলি? কেনো ও-কে নিয়ে ওবাড়িতে গিয়েছিস ইভান?

নিভানকে ঠান্ডা করতো ইভান তড়িঘড়ি উত্তর দিলো–
‘দাদীআপা জোর করেছিলেন আসতে,বৃদ্ধা মানুষটা নাতনীকে দেখার জন্য আমাদের যাবার আগেই কেন্দ্রে গিয়ে বসেছিলেন।কৌড়িকে দেখে কতো কাঁদলেন। কৌড়ির পরিক্ষা শেষ হওয়া অব্দি উনি ওখানেই ছিলেন।কৌড়ি পরিক্ষা দিয়ে বের হতেই,ওকে বাড়িতে নিয়ে যাবার আবদার জুড়লেন।আমার কাছে বারবার তাকে নিয়ে যাওয়ার আকুতি করলেন।কৌড়ি-ও যেতে চাইলো।আমি আর না করতে পারি-নি দাদাভাই।আমি তোমার কথা রাখতে পারিনি, স্যরি দাদাভাই।

কিছুটা শান্ত হলো নিভান।ফের কিছু একটা মাথায় আসতেই তড়িৎ কঠিন গলায় বললো– মিথ্যা বলার বা কথা ঢাকার একদম একটুও ট্রায় করবিনা ইভান।শুধু কি দাদিআপা গিয়েছিলো,কৌড়ির পরিক্ষার কেন্দ্রে? নাকি অন্যকেউও?আর তারই আশ্বাসে তাকে বিশ্বাস করে ওবাড়িতে গিয়েছিস তাই না?

গলা শুকিয়ে এলো ইভানের।এই মানুষটাকে এতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন আর এতো চালাক হতে কে বলেছিলো!একটু কম হলে পারতো-না।এখন কি বলবে সে?মিথ্যা বলারও উপায় নেই।আর সত্য বললে যে দাদাভাইয়ের মেজাজ আরও তিনগুণ চড়ে যাবে।তাতে খারাপ ছাড়া ভালো তো মোটেই হবেনা!এটা ইভানের বেশ জানা।উফফ!

‘ইভান।নাহিদ নামের ওই ছেলেটাও গিয়েছিলো তাইনা?

নিভানের ভারী গলায় চমকালো ইভান।হৃদপিণ্ডের ধুকপুক তীব্র হলো।প্রানপাখিটা যেনো উড়ে যাওয়ার অবস্থা তার।কেনো যে সবার কথা মেনে এখানে আসতে গেলো।এখন জবাব পেতেই দাদাভাই ক্ষেপে যাবে।আর
দাদাভাই ক্ষেপে গেলে সে হোক বা কৌড়িকে।কারও রক্ষে থাকবেনা।

‘ইভান,আমাট প্রশ্নের উত্তর দে?

‘দাদাভাই প্লিজ।ওকে নিয়ে সুস্থ সমেত বাড়িতে ফিরলে তো হলো?

‘আমার প্রশ্নের যথাযথ এন্সার দে ইভান!

গলা কাঁপলো তবুও সাহস জুগিয়ে উত্তর দিলো ইভান।
‘ হুম মিঃ নাহিদও গিয়েছিলেন। তবে দাদীআপা আশ্বাস দিয়েছেন,উনাকে দেখেও মনে হয়েছে উনি আর আগের মতো নেই।তারদ্বারা কৌড়ির কোনোরূপ ক্ষতি হবেনা,এটা আমারও মন বলছে।

‘মিঃ নাহিদ মাই ফুট।তারদ্বারা কৌড়ির ভালো হোক বা মন্দ।আমি চাইই-না কৌড়ি ওর আশে-পাশেও থাকুক।
সেখানে ও ভালো হয়ে যাক বা মন্দ থাকুক,আই ডোন্ট কেয়ার!কৌড়ি কোথায় ?

নিভানের দাঁতে দাত চেপে রাগান্বিত গলার কথাগুলো শুনলো ইভান।লোকটাকে তারও বিশেষ পছন্দ নয় তবে কি করবে সে।কৌড়ির উপর হক তার বাড়ির মানুষেরই তো বেশি, আগে।সেখানে কোন অধিকারে গলার জোর দেখিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে সে?দু-দিন মেয়েটাকে তাদের বাড়িতে রেখেছিলো বলে! দ্বিতীয়ত সত্যিই ছেলেটা-কে দেখে,তার আগের সেই অদ্ভুত চোখ লাললাল নেশাখোর টাইপ আর একগুঁয়ে ছেলেটা বলে মনে হয়নি।অথচ এই ছেলেটার জন্যই কৌড়ির বাড়িছাড়া।নিজ বাড়িঘর ছেড়ে,নিজের বাবার মতো আপনজনের শোকছায়ার দিনে,অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া।

‘ইভান।কৌড়ি কোথায়?

‘ওর একটা ক্লোজ ফ্রেন্ড এসেছিলো,মেয়েটার নাম বিথী। হয়তো তারসাথে কোথাও গল্প করছে।ওদের বাড়িতে একটা পুকুরঘাট ওদিকেই যেতে দেখেছিলাম বেশ কিছুসময় আগে।

‘আমি হোয়াটসঅ্যাপে কল করছি, আমাকে ইমিডিয়েটলি ও-কে দেখা!

ইভানের মনেহলো তার দাদাভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।একটু নয় পুরোটাই গেছে।কৌড়িকে নিয়ে তার দাদাভাই ভিষণ সিরিয়াস,এটা সে ইতিপূর্বে জেনে গিয়েছে।তাই বলে এতো সিরিয়াস।ভাবা যায়?এই তার সেই দাদাভাই,যার চিন্তাভাবনা ছিলো ব্যবসার উন্নতি। হাজারগন্ডা মেয়ে রিজেক্ট করেছে বিয়ের জন্য।সে আপতত বিয়ে করতপ চায়না।আর সেই বান্দা কৌড়িতেই পাগল হয়ে গেলো!তাও একটুআধটু নয়।একেবারে ছন্নছাড়া পাগল পাগলভাব যারে বলে!অদ্ভুত পরিস্থিতিতেও ইভানের মুখে হাসি ফুটলো।সেই হাসি মিলিয়ে গেলো,নিভানের হোয়াটসঅ্যাপ ফোনকলে।ফোনকল রিসিভ করার আগে আশেপাশে বিশেষ নজর দিলো ইভান।কোনো হৈচৈর উপস্থিতি নেই বাড়িটায়।পুরো বাড়ি নীরব।কৌড়ির চাচাতো ভাইবোনের সংখ্যা নিতান্তই কম।কৌড়ির বাবা বড় ছিলেন,উনার মধ্যেবয়সের একমাত্র সন্তান কৌড়ি।মেজো চাচার এক ছেলে এক মেয়ে।আর তার পরের চাচার দুই ছেলে।তারা নাকি ভিন্ন শহরে পড়াশোনা করছে।বছরে বাড়িতে মেহমানের মতোই আসা-যাওয়া তাদের।তারপরের জনের দুই মেয়ে এক ছেলে।মেয়ে দুজন বিয়ে দিয়েছেন।আর ছেলেটা কৌড়ির বছর খানেক বড়।সেও পড়াশোনা করছে গ্রাম ছেড়ে ভিন্ন শহরে।আর কৌড়ির ছোটো চাচারও দুই ছেলে।তারাও কৌড়ির বড়।আহসান আঙ্কেলের কোনো বোন নেই।সেটা ইভান জানে।বাবার সাথে সেদিন কৌড়ির দাদিআপার ফোনালাপ শুনেছিলো সে।ভদ্রমহিলা সেদিন কান্নারত গলায় বলেছিলেন-আমার একখান মেয়ে থাকলে,ওই ইয়াতিম অভাগী মেয়েটাকে তোমাদের কাছে কি পাঠানো লাগতো?কি দূর্ভাগ্য আমার,একখান মেয়ে নেই।আর ছেলেগুলো যার যার চিন্তায় ব্যস্ত।পরের ঝামেলা তাদের টানার সময় আছে!তাই তোমার আশ্রয়ে পাঠাতে হলো মেয়েটাকে।

বাচ্চাদের হৈচৈ না থাকায়, আশেপাশে চাচাদেরর বাড়িগুলোও নীরব।শান্ত একটা পরিবেশ।তিনজনের থাকার আবাসস্থল হিসাবে কৌড়িদের একতলা বাড়িটা বেশ মোটামুটি।তবে বাড়ি করা ভিটেমাটির অংশবিশেষ একেবারে ছোটো নয়।বড়সড় একটা পুকুরসহ,বিভিন্ন গাছপালায় ভরা বাড়িটা।বিল্ডিংয়ের পাশে ছোটোখাটো টিন দিয়ে ছাওয়া একটা রান্নাঘর।আর সেই রান্নাঘরে বিশেষ রান্নার আয়োজন করছেন কৌড়ির দাদিআপা।সাথে উনার দুই ছেলের বউ আছেন।তাদেরকে বিশেষভাবে ইভান না চিনলেও, কৌড়ি এবাড়িতে ঢুকতেই সবাই কেমন হামলে এসেছিলো।তখন কৌড়ির আলাপে জেনেছে সে।উনারা কৌড়ির চাচিরা।ঘর থেকে বেরিয়ে কাঁচা উঠনে পা রেখে রান্নাঘরের দিকে বিশেষ সতর্ক নজর ফেলে ইভান পুকুরঘাটের দিকে এগোলো।তারআগে ফোনটা রিসিভ করলো।নিভানের গায়ে ফর্মাল ড্রেস দেখেই তড়িৎ কিছু বলতে যাবে তারআগে নিভান বিবশ গলায় বললো।

‘ফোন রিসিভ করতে এতোসময় লাগে ইভান?

নিভানের কথায় ইভান গুরুত্ব না দিয়ে তখনের প্রশ্নটা করলো।

‘তুমি এই অসুস্থ অবস্থায় অফিসে কেনো?

আবারও চেয়ারে গা এলিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়েছে নিভান।সবকিছু নিয়ে মস্তিষ্ক যেনো তার ক্লান্ত।একটু স্বস্তি, শান্তি তার কোথায় মিলবে?সংগোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অদ্ভুত ক্লান্তিময় গলায় বললো।

‘আমি অসুস্থ এটা কি তোদের মাথায় আছে?থাকলে নিশ্চয় এই অবস্থায় আমাকে টেনশনে রাখতে ইচ্ছাকৃত ঝামেলায় জড়াতিস’না।অন্তত একটু স্বস্তি আর শান্তিতে থাকতে দিতিস আমায়।বাই দ্যা ওয়ে,ও-কে দেখা।

ইভান করলো আরেক গাধামি।সামনে না তাকিয়ে নিভানের কথার ধরন দেখে তড়িঘড়ি ব্যাক ক্যামেরা অন করলো।ফোনটা সরাসরি উঁচু করে পুকুরপাড়ের দিকে তাক করতেই তার চোখও চড়কগাছ।থতমত খেয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকাতেই নিভানকে শান্ত নজরে নিষ্পলক সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে,আত্মাটা ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করা শুরু করলো।দম আঁটকে এলো।হতভম্ব নজর একবার পুকুরের শান বাধনো ঘাটে বসার জায়গায় তো একবার ফোনের স্কিনে নিভানের মুখের দিকে ঘুরতে ফিরতে লাগলো।আজ তারদ্বারা শুধুই ব্লান্ডার হয়ে যাচ্ছে।
দাদাভাইয়ের অতি শান্ত নজর,কঠিন শিথিল মুখাবয়ব!পাক্কা কালবৈশাখী ঝড়ের আগমনী বার্তার পূর্বাভাস দিচ্ছে।উফফ,কি যে লেখা আছে কপালে কে যানে!
ধড়ফড়ানো মনে শুধু একটাই বাক্য আওড়ালো,আল্লাহ মাবুদ রক্ষে করো।

চলবে….

★আমি প্রচন্ড অসুস্থ ছিলাম।একটু নয় অনেকটা।হঠাৎ জ্বর তারপর সমস্ত শরীরে ব্যাথা। এরপর হঠাৎ বাম হাত অবশ অবশ ভাব।যেনো হাতে বল পাচ্ছিনা।তারপর সেই সাইডের পা।ভিষন খারাপ সিচুয়েশন ওার করেছি। এই একটা সপ্তাহ। আমি জানি আমার দেরীতে গল্প দেওয়া নিয়ে আপনার অধৈর্য্য এবং বিরক্ত। তবে আল্লাহ মাবুদ না কৃপা করলে,আমার কি করার।যাই হোক,আমার এই দেরীর কারনে পাঠকেরা চাইলেই আমার গল্প এবোট করতে পারেন।আমি এখনো শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নই।আর গ্রুপ কতৃপক্ষ চাইলেই আমার গল্প ডিলিট করে দিতে পারেন।আমি নিজের জন্য কখনোই কাওকে দোষারোপ করবো-না।উচিতও নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here