#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_০৭
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
রায়ান প্রভাকে কোলে নিয়ে চলতে লাগল। অনেক খোঁজার পর রায়ান জঙ্গল থেকে বের হবার রাস্তা খুঁজে পেল এবং প্রভাকে নিয়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে এলো। তারপর কিছুদূর হেটে যেতেই তাদের সাথে দেখা হলো সৌভিক ও অনুরাধার। অনুরাধা প্রভাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। বলতে লাগল,”তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি প্রভা? জানিস তোর জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।”
রায়ান রাগী স্বরে বলে,”এতই যদি চিন্তা হচ্ছিল তাহলে নিজের বান্ধবীর খেয়াল রাখো নি কেন? আজ যদি ওর বড় কোন বিপদ হয়ে যেত তাহলে এর দায় কে নিত?”
অনুরাধাও রেগে গেল রায়ানের এমন কথা শুনে। তেতে উঠে বলল,”আমার বান্ধবীকে নিয়ে তোমাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। আর তুমি ওকে কোলে নিয়েছ কেন? নামাও ওকে কোল থেকে।”
প্রভা বলল,”তুই চুপ কর অনু। উনি যা করেছেন আমার ভালোর জন্যই করেছেন। আমার পায়ে চোট লেগেছে।”
সৌভিক অনুরাধাকে বলল,”এই মেয়ে তুমি কি দিয়ে গড়া হ্যাঁ? আমার বন্ধু তোমাদের এত বড় উপকার করল আর তুমি ওকে ধন্যবাদ না দিয়ে কথা শোনাচ্ছ?”
অনুরাধা কিছু বলে না। সে সত্যিই অনেক লজ্জিত। আবিরও সেখানে চলে আসে। সে অন্য দিকে প্রভাকে খুঁজতে গিয়েছিল। প্রভাকে সুরক্ষিত দেখে আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”থ্যাংকস গড। তুমি একদম ঠিক আছো।”
প্রভা আবিরের দিকে তাকায়। আবিরও তাকায় প্রভার দিকে। প্রভাকে এভাবে রায়ানের কোলে দেখে আবিরের মোটেও ভালো লাগে না।
~~~~~~
প্রভা টেন্টের মধ্যে রেস্ট নিচ্ছিল। তার পাশেই ছিল অনুরাধা। সে প্রভাকে অনেক কথা শোনাচ্ছিল এভাবে হুট করে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ার জন্য। কিন্তু প্রভা সেসব কথায় কান না দিয়ে আবিরের কথা ভাবতে থাকে। আবিরের চোখে সে নিজের জন্য আজ অনেক দুশ্চিন্তা দেখতে পেয়েছে। প্রভা বুঝতে পারে না এই দুশ্চিন্তার কারণ কি। এছাড়া আবিরের চোখমুখ দেখে সে এটাও বুঝেছে যে তাকে রায়ানের কোলে দেখে আবির মোটেও খুশি হয়নি। এইসব ব্যাপার প্রভাকে অনেক ভাবাচ্ছে। তাহলে কি আবিরও প্রভাকে পছন্দ করে?
অনুরাধা প্রভাকে চুপ থাকতে দেখে বলে,”তুই চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল।”
“আমি কিছু ভাবছি।”
“কি ভাবছিস তুই?”
“আজ আবির ভাইয়ার চোখে আমি আমার জন্য দুশ্চিন্তা দেখেছি।”
“সেটা তো আমিও দেখেছি। আজ তো আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আবির ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন। তোকে ঐ ছেলেটার কোলে দেখে কি পরিমাণ রেগে গিয়েছিল।”
“তুইও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিস?”
“করেছি তো। আমার মনে হয় এবার তোকেই দুই পা আগাতে হবে। আবির ভাইয়ার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করতে হবে তোকে।”
প্রভা কিছু বলতে যাবে এমন সময় টেন্টের মধ্যে প্রবেশ করে রায়ান। তার হাতে একটা মলম। রায়ান এসে প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”তোমার পায়ের অবস্থা এখন কেমন?”
“জ্বি, আগের থেকে ভালো।”
রায়ান তার দিকে মলমটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই মলমটা পায়ে লাগিয়ে নাও সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এটুকু বলেই রায়ান বেরিয়ে যায়। রায়ান বেড়িয়ে যেতেই অনুরাধা বলে,”আচ্ছা, এই ছেলেটা তোর এত কেয়ার করছে কেন রে?”
প্রভা বলে,”আমার মনে হয় উনি খুব ভালো মনের মানুষ। তাই সবসময় আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন।”
“আমার কাছে তো ব্যাপারটা অন্যরকম লাগছে?”
“কিরকম?”
“আচ্ছা এই ছেলেটা তো আবির ভাইয়ার বন্ধু তাইনা?”
“হুম।”
“এবার আমি ব্যাপারটা বুঝলাম।”
“কি বুঝলি?”
“আবির ভাইয়াই বোধহয় ওকে পাঠিয়েছে তোকে এই মলমটা দেওয়ার জন্য।”
“তাই?”
“তা নয়তো কি? নাহলে ঐ ছেলের কি ঠ্যাকা তোর এত কেয়ার করার? আসলে আবির ভাইয়া অনেক লাজুক প্রকৃতির তো। তাই নিজে না এসে তার বন্ধুকে পাঠিয়েছে তোর সাহায্য করার জন্য। এভাবেই নিজের ভালোবাসার মানুষটার খেয়াল রাখছে।”
প্রভা ভাবতে থাকে অনুরাধার কথাই হয়তো ঠিক। নাহলে কেনই বা রায়ান তাকে শুধু শুধু সাহায্য করবে।
~~~~
প্রভা ও অনুরাধা বাইরে বের হয়। একটু পরেই তাদের স্কুলের সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করবে। তারপর হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাইরে এসেই প্রভাদের সাথে দেখা হয় আবিরের। আবির প্রভাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি এখন কেমন আছ?”
“জ্বি, ভালো।”
“ওহ। নিজের খেয়াল রেখো।”
বলেই সুন্দর করে হাসি দেয়। প্রভা সেই হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুরাধা তাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এদেরকে পাশাপাশি কত সুন্দর লাগে। একদম রাব নে বানা দে জোড়ি।”
অনুরাধার ঘোর কা’টে সৌভিকের ডাকে। সৌভিক এসে তাদেরকে বলে,”তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? স্যার, ম্যাডামরা সবাই খেতে ডাকছে।”
অনুরাধা বিরক্ত হয়ে বলে,”হ্যাঁ, যাচ্ছি যাচ্ছি। প্রভা চল।”
আবির প্রভার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে প্রভা ও আবির। অনুরাধা আর সৌভিকও পাশাপাশি বসেছে। রায়ান বসেছে অন্য দিকে। অনুরাধা তো সৌভিককে নিজের পাশে দেখে অনেক বিরক্ত হচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে,”ভগবান! তুমি তো জানো এই ছেলেটাকে আমার সহ্য হয়না। তাও কেন বারবার এর সাথেই আমাকে থাকতে হয়?”
সৌভিক অনুরাধার কথা শুনে বলে,”আমারও কোন ইচ্ছা নেই তোমার পাশে বসার। তুমি চাইলে এখান থেকে উঠে যাও।”
“মামার বাড়ির আবদার যেন! আমি কেন যাব? যেতে হলে তুমি যাও।”
সৌভিক আর কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। কারণ স্যার ম্যাডামরা ততক্ষণে খাবার দেওয়া শুরু করেছে। আবির প্রভাকে বলে,”তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলো।”
আবিরের এমন ব্যবহারে প্রভা আরো বেশি করে মুগ্ধ হতে থাকে। সে যেন নিশ্চিত হতে থাকে যে আবির তাকে ভালোবাসে।
রায়ান দূর থেকে প্রভার দিকেই দেখছিল। প্রভাকে দেখে সে মনে মনে বলে,”এত মায়া কেন তোমার মধ্যে? তোমাকে যতই দেখি ততই বেশি করে তোমার মায়ায় ডুবে যেতে থাকি আমি। তোমায় দেখার তৃষ্ণা কমার বদলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তোমাকে যে করেই হোক আমি নিজের করে নেবো।”
খেতে খেতে অনুরাধার গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে থাকে। সৌভিক অনুরাধার দিকে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও জল খাও।”
অনুরাধা পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,”তুমি জল বললে কেন? তুমি কি হিন্দু?”
সৌভিক বলল,”হ্যাঁ, কেন?”
“আমিও হিন্দু।”
“তো কি করব? তোমার কপালে সিঁদুর পড়িয়ে বিয়ে করব?”
অনুরাধা রেগে গিয়ে বলে,”আমি সেটা কখন বললাম। তুমি কি এক লাইন বেশি বোঝো নাকি?”
সৌভিক হেসে দেয়। অনুরাধার সাথে ঝগড়া করতেও তার কেন জানি খুব ভালো লাগছিল। কিছুক্ষণ পর সৌভিক নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলে,”আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে এত ভাবছি কেন? কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে?”
অনুরাধাও সৌভিকের কথা ভাবছিল। আজ সকালে বাস থেকে পড়ে যাওয়ার সময় সৌভিকই তাকে বাঁচিয়েছে আবার প্রভাকে যখন খুঁজে পাচ্ছিল না তখন সে কাঁদছিল তখন সৌভিকই তাকে সামলাচ্ছিল এখন আবার পানিও খেতে দিলো। তাকে এত সাহায্য করছে কেন? অথচ সে সবসময় ছেলেটার সাথে ঝগড়া করে। অনুরাধার মনেও এবার সৌভিকের জন্য ভালো ধারণার জন্ম নেয়। সে ভাবে,”ছেলেটা একটু কড়া কথা বললেও মনের দিক দিয়ে খারাপ নয়।”
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)