পাথর_হৃদয়ে_ফুল Writer – Nodi Karim পর্ব – ৫

0
110

#পাথর_হৃদয়ে_ফুল
Writer – Nodi Karim
পর্ব – ৫

[ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ]

হ্যালো বলতেই।শিহাব বলে ওঠে-

_ভাই আপনি কি মেয়েটাকে বলেই থেমে যায় শিহাব।
আরিয়াত বিরক্ত হয়ে বলে মাঝ রাতে ফোন দিয়ে মজা করছিস যা বলবি সরাসরি বল। নাহলে রাখ

_ভাই মানে আপনি কি আরহা ম্যাম কে পছন্দ করেন?

_হোয়াট তুই আমাকে চিনিস না শিহাব?ওই মেয়েটাকে আমি পছন্দ করবো আমি?এই আদিয়াত আবরার চৌধুরী। আমার জীবনে কখনো কোনো নারী আসবে নাহ,আর ওই মেয়েতো নাই।আমাকে টাকা নিয়ে অহংকার দেখায়, ওর ফ্যামিলিকে এক তুরিতেই আমি রাস্তায় বসাতে পারি।শুধু আহনাফ খানের মেয়ে বলে কিছু বলি নি।
আদিয়াত রেগে গিয়ে বলে।

_ভাই ভুল হয়ে গেছে,আসলে আপনি তো কোনো মেয়ের দিকে তাকান না ভালো করে।কিন্তু আরহা ম্যামের দিকে আপনার তাকানো দেখে ভেবেছিলাম। আবার ওয়াসরুমে গিয়ে আপনি আরহা ম্যামকে সাবধান ও করলেন বিপদ থেকে তাই।
কিন্তু ভাই আমি তো ছিলাম আপনার সাথেই ম্যাম তো জানতো না আপনি কে,তাই আপনাকে জরিমানা দিতে চেয়েছিলো। শিহাব মিনমিন করতে করতে কথাগুলো বলতেই
আরিয়াদ ধমক দিয়ে বলে

_আরহা ম্যাম আরহা ম্যাম না করে ফোন রাখ আমি ঘুমাবো বলেই ফোন রেখে দেয়।

__________

দুপুর ২ টা,
যে যার কাজে ব্যাস্ত।কেউ কারো দিকে ঘুরে তাকানোর সময় নেই। মাথার উপরের সূর্য টা যেনো তাপ ডেলে দিচ্ছে।চারদিকে গরমে সবাই অতিষ্ঠ, একটু পানির জন্য তৃষ্ণান্ত।আরহা আর্সি আর তুর্বী আজকে লং ড্রাইবে বের হয়েছে সেই সকাল নয় টায়। তাদের প্লান আজকে সারা দিন ঘুরা-ঘুরি করা। আরহা অনেক বছর পর দেশে এসেছে তাই নিজের শহরটা ঘুরতে চায়।তার সাথে সঙ্গ দিয়েছে আর্সি আর তুর্বী। আজ কোনো গার্ড নিয়ে আসে নি অনেক কষ্ট করে পাপা আর মাম্মামকে ম্যানেজ করেছে আরহা।

_আরু চল কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক এখন।তারপর আবার ঘুরবো,
আর্সির কথায় তুর্বী মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলে-

_আমার অনেক ক্ষিদে ও পেয়েছে আরু পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে চল।

_তোর তো কাজই একটা সারাদিন খাই খাই করা।এই তুই একটু আগেই না পিজ্জা খেলি এর মধ্যে তোর ক্ষিদে ও পেয়ে গেছে। বইন একটু কম কম খা দিন দিন তো মোটা হয়ে যাচ্ছিস কেউ তোকে বিয়ে করবে না বেশি মোটা হলে। আর্সির কথায় তুর্বী রেগে গিয়ে বলে-

_তোর কি আমি আরো খাবো। কে বলেছে আমাকে কেউ বিয়ে করবে না?তোর জামাইর থেকে আমার জামাই বেশি সুন্দর হবে দেখিস।
আর্সি আর তুর্বীর কথায় আরহা বিরক্ত হয়ে বলে-

_ফাজিলগুলো থাম,তোদের আমি এখনি বিয়ে দিয়ে দিবে। রাস্তার মোরে যে পাগলটা বসে থাকে না তোদের জামাই হিসেবে সে পারফেন্ট।

_কি বলিস আমাদের মতো কিউটি কিউটি মেয়ের তুই পাগলের সাথে বিয়ে দিতে চাস।ছিঃ আরু ছিঃ এই তোর ভালোবাসা।
তুর্বী ন্যাকা কান্না করে কথাগুলো বললো।ওদের কথার মাঝেই আরহা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়। তাই আর কেউ কিছু না বলে রেস্টুরেন্টে ডুকে যায়।

একটি টেবিলের মধ্যে বসে আছে আরহা তুর্বী ও আর্সি।সবাই যে যার পছন্দ মতো খাবার অডার করেছে।খেতে খেতে টুকটাক কথা বলতে থাকে।এই মাঝেই আরহার চোখ যায় রাস্তায়,রেস্টুরেন্টের ভিতর থেকেই কাচ দিয়ে বাহিরের রাস্তা দেখা যায়।

একটা বাচ্চা ছেলে কত আর বয়স হবে নয় কি দশ,গায়ে পুরোনো ছেরা ফাটা গেঞ্জি পরা। একজন মহিলা তাকে মারছে আর ধমকাচ্ছে।বাচ্চা ছেলেটি কাঁদছে আর বার বার চোখ মুচ্ছো ।তার পাশেই পনেরো কি ষোল বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে যার হাতে বিভিন্ন খাবার।আরহা কিছু না ভেবেই রেস্টুরেন্টের বাহিরে গিয়ে বাচ্চা ছেলেটাকে জরিয়ে ধরে বলে

_কি সমস্যা এইটুকু বাচ্চা ছেলেকে আপনি এভাবে ধমকাচ্ছেন কেনো?
আরহার কথায় মহিলা আরহার দিকে ভালোভাবে তাকায়।দেখেন মেয়েটা সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরা,পায়ে সাদা ভিতর কালো রংঙের শু। লম্বা চুল গুলো জুটি করা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড় ঘরের মেয়ে।কিন্তু মহিলা ধমে যায় না কন্ঠে তেজ নিয়েই বলে

_এই রাস্তার ছেলে আমার মেয়ের থেকে খাবার চুরি করে নিতে গিয়েছে।

_বিশ্বাস করেন আফা আমি চুরি করি নাই। আমার অনেক ক্ষিদা লাগছিলো, আজ কাম কইরা কোনো টাকা পাই নাই।টাকা না দিয়াই ক্ষ্যাদাই দিছে। এই আফা ডারে কইছি আমারে কিছু খাইবার দিবেন? আফায় আমারে বিস্কুটের প্যাকেটটা দিছে। আমি আতে নিতেই উনি আইয়া আমার আতের তোন বিস্কুট টা নিয়াই চোর কইয়া মা’রা ধরছে।কথাগুলো বলেই ছেলেটা কান্না করে দেয়।
ছেলেটার কথা শুনে মহিলা ধমকে আবার মারতে গিয়ে বলে

_তুই আবার মিথ্যা বলছিস কত বড় সাহস।
মহিলার পাশে থেকে তার মেয়ে বলে উঠে-

_আম্মু ও তো ঠিকই বলেছে আমিই দিয়েছি ওকে।তুমি তো আমার কথা শুনছোই না মারতেই আছে।
আরহা মেয়েটার কথার শুনে বলে-

_আপনার এতটুকু মেয়ে নিজের খাবার ওর সাথে ভাগ করে খেতে চেয়েছে।আর আপনি সামন্য এক প্যাকেট বিস্কুটের জন্য কিছু না শুনেই মারতে শুরু করেছেন।মানসিকতা ঠিক করুন, ওরা গরিব এতিম এজন্য ওরা চোর হয়ে গেলো? আপনাদের মতো কিছু নিচু মনমানসিকতার মানুষদের জন্য সমাজের এই অবস্থা। মহিলাটা মাথা নিচু করে রাখে, আরহা আর কিছু না বলে বাচ্চাটাকে নিয়ে হাটতে হাটতে বলে।

_তোমার না কি?

_আমার নাম রাকিব
আচ্ছা রাকিব চলো আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো কি খাবে বলো?

_আফা সত্যি আমারে খাওয়াইবেন?
_হ্যা
_আফা আমার বন্ধু গো ডাইকা আনমু?
-আচ্ছা আনো আমি ওই টেবিল টায় আছি।আরহা হাত দিয়ে ডান পাশের টেবিলটা দেখায়।
.
.
.
আরিয়াত একটা গুরুত্বপূর্ন মিটিং সেরে কাছে যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে ডোকার সময় আরহাকে দেখে।কৌতূহল হয় তাই দাঁড়ায় আর আরহার মহিলাকে বলা সব কথায় শুনে,আরিয়াতের সাথে শিহাব ও ছিলো।আরিয়াত আর না দাঁড়িয়ে ভিতরে গিয়ে তার জন্য বুক করা টেবিল টায় বসে।তখনই দেখে ষোলো সতেরোটা বাচ্চা রেস্টুরেন্টে ডুকছে তাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে পথশিশু।আরিয়াত ফাস্টে অভাক হয় কারন এই রেস্টুরেন্টে এদের এলাও করা হয় না।পরে যখন আরহা গিয়ে বাচ্চাগুলোকে টেবিলে বসায় তখন বুঝে এদের আরহা এনেছে।

আরহা বাচ্চাগুলোকে টেবিলে বসতে হেল্প করে ওর সাথে তুর্বী আর আর্সি ও বাচ্চাদের হেল্প করে।

_তো বলো বাচ্চারা কি খাবে যার যতো ইচ্ছা খেতে পারো।
আরহা সবার পছন্দ মতো খাবার অডার দেয়।

খাবার আসতেই সবাই যার যার মতো করে ক্ষেতে শুরু করে।এদের মধ্যে কিছু বাচ্চা আছে পাঁচ ছয় বছরের যারা ঠিক ভাবে খেতে পারছে না।আরহা নিজের হাতে তাদের খাইয়ে দেয়।আবার তাদের ময়লা মাখে গালে চুমু ও খায় ঘৃনা না করে।
আরিয়াত এসব দেখে মনে মনে বলে-
_আমি তো ভেবেছি এই মেয়ের অনেক অহংকার টাকা নিয়ে।কারো সাথে ঠিক ভাবে মিশেই না কথা বলা দূর এখন তো দেখি ভিন্ন।
আরিয়াতকে এভাবে আরহার দিকে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে শিহাব বলে। কি ভাই বলেছিলাম না আরহা ম্যাম উপর দিয়ে যা দেখায় সে তেমন না। মন থেকে অনেক নরম এবং সরল ভাই।
আদিয়াত কিছু বলে না নিজের খাবার খেতে থাকে আর মাঝে মাঝে আরহাদের দিকে তাকায়।
.
.
.
আরহা বাচ্চাদের খাওয়ানোর মধ্যেই হঠাৎ চোখ যায় কর্নারের টেবিলে বসা আদিয়াতের দিকে।

_বাচ্চারা তোমরা খাও আমি এখনি আসছি।ওই তোরা ওদের সামলা আমি আসছি।আরহা হাত ধুয়ে আদিয়াতের টেবিলের সামনে গিয়ে বলে-

_আরে মিস্টার চৌধুরী যে বসতে পারি?
-সিওর
আদিয়াতের সামনে চেয়ারে আরহা বসে শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলে। মিস্টার চৌধুরীর সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে শিহাব।শিহাব একবার আদিয়াতেট দিকে তাকিয়ে বলে

_ওকে ম্যাম। বলেই শিহাব চলে যায়।

_মিস্টার চৌধুরী আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই আমি।
আদিয়াত খেতে খেতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
_ বলুন।

এখানে না কোনো নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে।
_আমার ইন্টারেস্ট নেই।
_কেনো।
আরহার কথায় আদিয়াত খাওয়া থামিয়ে থাস করে প্লেটে চামুচ রেখে বলে
-আপনার সাথে আমার পরিচয় একদিন হবে হয়তো।তাও কথা হয় নি তেমন,তো হুট করে কেনো আমি আপনার সাথে সময় নিয়ে এমন পরিবেশে কথা বলবো।আপনি কি আমার গার্লফ্রেন্ড। আপনি হয়তো জানেন না আমি মেয়েদের সঙ্গ পছন্দ করি না।সো বায় বলেই উঠতে নিতেই আরহা তাড়াতাড়ি সামনে এসে বলে।
_প্লিজ যাস্ট দুই ঘন্টা প্লিজ প্লিজ
_ওকে। বাট দুই ঘন্টা পারবো না যাস্ট ৩০ মিনিট।
_ওকে লোকেশন ******আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য
আদিয়াত আরহার কথায় উত্তর না দিয়েই হন হন করে হেটে চলে যায়
চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে পর্বটা অবশ্যই কমেন্টে যানাবেন।নতুন লেখা শুরু করেছি আপনারা উৎসাহ দিলে ভালো কিছু লেখার চেষ্টা করবো। লাইক কমেন্ট শেয়ার করেন যাতে সবাই পড়তে পারে😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here