গল্প :- #Selfish
পর্ব :- ০৩
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: তারপর আমি স্যারকে আবার সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে কলেজের বাহিরে চলে আসি।
কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে আবারও সেই কাজের খুঁজে বাহির হই।
তারপর সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমি ছোট একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে পাট টাইম জবের একটা চাকরি পেয়ে যাই।
আজ আমি অনেক খুশি কারন আজকে আমার জীবনটা যেন সম্পূর্ন পাল্টে গেলো। আজকে হয়তো আল্লাহতালা আমার উপর তার অশেষ রহমত দান করেছেন।
আর মনে মনে একটা কথাই ভাবছি আল্লাহতালা হয়তো এত দিন আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
যাই হোক এসব ভাবতে কখন যে বাড়িতে এসে গেছি বুঝতেই পারি নাই।
বাড়িতে এসে সামান্য কিছু খাবার খেয়ে বাড়ী ওয়ালার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। তখনি দেখি বাড়ীওয়ালা আঙ্কেল আমার ঘরের দিকেই আসছেন।
আমি তাকে দেখে সালাম দিয়ে কিছু বলতে যাবো। তার আগেই তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন….
–আরে বাবা কাব্য গতকাল তুমি পড়াতে আসলেনা যে?আবার দেখলাম অনেক রাতে বাড়িতে ফিরছো। কাল কি কোন সমস্যা হয়েছিল?(চিন্তিত.হয়ে)
–না আঙ্কেল তেমন কোন সমস্যা হয় নাই। আসলে হয়েছিল কি….
(তারপর আমি তাকে সব কিছু খুলে বললাম)
–খুব ভালো করেছো বাবা। মানুষ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসবে এটাই তো মানুষর ধর্ম ও মনুষ্যত্ব।
কিন্তু আমরা মানুষরা তো এখন শুধু টাকা অার ক্ষমতার লোভে আমরা আমাদের মনুষ্যত্ব বিবেক বিকিয়ে বা শেষ করে ফেলেছি।
(বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন)
যাই হোক বাবা আমি যে জন্য তোমার কাছে এসেছিলাম। বলছিলাম কি বাবা তুমিতো এখন রাজুকে পড়াতে যাবে।
–হ্যা আঙ্কেল….
আমিতো সেই জন্যই বাসা থেকে বের হলাম।
আর আঙ্কেল আপনাকে দেখে কেমন যেন মনে হচ্ছে আপনি আমাকে আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন।?
–তুমি ঠিক ধরেছো।
আসলে তোমাকে যে কি ভাবে কথাটা বলি।
–আঙ্কেল আপনি বিনা সংকোচে বলতে পারেন। যদি আমাকে আপনার ছেলের মত ভাবেন।
–আসলে বাবা হয়েছে কি।
আমার এক বন্ধুর মেয়ে আমাদের এখানে থাকতে এসেছে।
আর তুমি যে ঘরটাতে থাকো ও প্রত্যেক বার এখানে আসলে ঐ ঘরেই থাকতে ভালবাসে। যদি তুমি……
–ঠিক আছে আঙ্কেল আমাকে কিছু দিনের সময় দিন।আমি অন্য অন্য জায়গায় না হয় একটা থাকার ব্যবস্থা করবো।
(মন খারাপ করে। আসলে এখান থেকে আমার কলেজ ও অফিস একটু কাছেই হয় তাই মনটা খারাপ হল)
–আরে বাবা তোমাকে আমি চলে যেতে বলছি না।
তুমি তো আমাদের বাড়ির উপরের ছোট ঘরটায় কিছু দিন যদি থাকতে। তাও যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
–ঠিক আছে আঙ্কেল আপনি যা ভালো মনে করেন।আসি আঙ্কেল।
তারপর আমি ওনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজুকে পড়াতে যাই।
আর রাজুকে পড়ানো শেষ করে আমি আবার রুমে.ফিরে এলাম!
এসে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না বাড়িতে কোন আত্নীয় আসলে তাদেরকে তো সাধারনত গেষ্ট রুমে থাকতে দেওয়া হয়। তাহলে..?
ধুর আমিও না,,
তাদের আত্মীয় তারা তাকে কোথায় রাখবে সেটা তাদের বিষয়। এটা নিয়ে আমার না ভাবলেও চলবে।
সব কিছু গোছানো হয়ে গেলে আমি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
পরের দিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হলো।কারন আমার যা সামন্য জিনিস পত্র তা আঙ্কেলদের বাড়ির উপরের ঘরে উঠাতে হবে।
যাই হোক সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতেই পেটের মধ্যে খুধার কারনে মোচর দিয়ে উঠলো।
কিন্তু আজকে আমাকে না খেয়েই বের হতে হবে।
(কি করবো বলুন আমার জন্য এখন কে খাবার তৈরি করে বসে থাকবে)
তারপর কোন কিছু না খেয়েই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হতেই আন্টি বলে উঠল…।
–আরে বাবা কাব্য এই সময় কোথায় যাও। (আন্টি)
–এইতো কলেজে যাচ্ছি আন্টি। আপনি কি কিছু বলবেন।
–ওহ্ আমার তো মনেই ছিল না।
গতকাল রাত্রে তোমার আঙ্কেল আমাকে সব কিছুই বলে ছিলো। যাই হোক তা তুমি কি কিছু খেয়েছো।
–হ্যাঁ আন্টি।
এই মাত্রই খেয়ে বের হলাম।
(মিথ্যা কথা বললাম) আমি এখন আসি আন্টি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
–কিন্তু আমার তো মনে হয় না তুমি কিছু খেয়েছো।
(আমার দিকে তাকিয়ে বলল)
সকাল থেকে তো দেখলাম তোমার জীনিস পত্র উপরে উঠালে। আর তার কিছুক্ষণ পরেই কলেজে যাচ্ছো।তাহলে তুমি খাবার রান্না করলে কখন?
(এইরে ধরা পরে গেলাম,এখন কি করি।)
–না মানে আন্টি। আসলে হয়েছে কি??
–বুঝতে পেরেছি আর কিছু বলতে হবে না। আমার সাথে চলো কিছু খেয়ে তারপর কলেজে যাবে।
–থাক না আন্টি আমি না হয় বাহিরে খেয়ে নেবো।
–আমরা থাকতে তুমি বাহিরে খাবে কেন। আমি কি কখনো তোমাকে আর রাজুকে আলাদা চোঁখে দেখেছি।নাকি তুমি আমাদেরকে আপন ভাবতে পারো নাই।
–আন্টি আপনি এসব কি বলছেন। এখানে আমার আপনারা ছাড়া আর কোন পরিচিত মানুষ আছে যাদের আপন ভাববো। আর দেখুন আমার আজকে কলেজের প্রথম দিন। তাইই..…………
–আমি কি আর তোমার মা যে তুমি আমার কথা শুনবে। মা হলে ঠিকি শুনতে। (মুখটা কালো করে বললো)
–ঠিক আছে আন্টি আপনি আমার খাবার রেডি করুন।আমি আসছি।
(কি করবো বলুন। যখনি মায়ের কথা বললো। তখন বুকের ভিতর কেমন যেন খুব কষ্ট হচ্ছিলো)
তারপর আন্টি খুশি মনে আমাকে খেতে দিলো।
আর আমি চুপচাপ খেয়ে কলেজে চলে আসলাম।
কলেজে আজকে আসার পরও দেখছি সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি সে দিকে মন না দিয়ে মাথা নিচু করে নিজের ক্লাস খুজে নিয়ে শেষ ব্রাঞ্চে বসলাম।
সামনের দিকে অবশ্য বসার জন্যে অনেক জায়গা ছিলো। কিন্তু সবাই আমাকে দেখে এমন ভাবে বসেছে যে সেখানে বসতে যেন তাদেরই অসুবিধা হচ্ছে।
প্রায় ১০ মিনিট পর স্যার ক্লাসে এসে ক্লাস নিচ্ছিলেন।হঠাৎ করেই তিনি আমাকে দেখে বলে উঠলেন..
–এই লাষ্ট ব্রাঞ্জ স্টান্ড আপ। (স্যার)
(আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে গেলাম)
–তুমি কি এই কলেজের ছাত্র।(বলেই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে)(স্যার)
–হ্যা স্যার।নতুন ভর্তি হয়েছি।
–নতুন ভর্তি হয়েছো ভালো কথা। কিন্তু নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখছো। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি এখানে পড়তে নয় বরং……
–ক্ষেত স্যার ক্ষেত……
ক্ষেত মানে জমি চাষ করতে এসেছে।
(বাহির থেকে একটা মেয়ে বললো। হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে ক্লাসের বাকী সবাই ঐদিখে থাকিয়ে এক সাথে হাসতে শুরু করল)
–আরে মা তুমি….
মিরা তুমি আজ এত দেরি করলে যে।? (স্যার বললো)
–আর বলবেন না স্যার আজ রাস্তায় যা ট্রাফিক জ্যাম ছিলো। (মিরা)
(মেয়েটার গলার আওয়াজ শুনে আমার কেন যানি খুব চেনা চেনা লাগলো। মনে হচ্ছে এর আগেও কোথাও তার গলার স্বর আমি শুনেছি।
আমি. মেয়েটার দিকে তাকাতেই আমার হাত আপনা আপনি আমার গালে চলে গেল।
হ্যাঁ আপনারা হয়তো ভাবছেন আমার হাত গালে কেন গেলো?
তাহলে শুনুন মেয়েটা আর কেউ না গতকাল যে মেয়েটা আমাকে চড় মেরেছিল এ সেই মেয়ে)
–ঠিক আছে মা ভিতরে আসো।(স্যার)
–আর এই যে ক্ষেত বাবু। এটা তোমাদের কোন গ্রামের কলেজ নয় যে যখন যা হাতের কাছে পাবে তখন তাই পড়ে কলেজে আসবে। আজকের পর থেকে ভালো ভাবে কলেজে আসবে মনে থাকে যেন।
(স্যার আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো)
–আমি মাথা নারালাম।
–এখন বসে পড়ো। আর ডিয়ার স্টুডেন্ট, আজকে আমি তোমাদের কোন ক্লাস নিবো না।
আজকে আমি তোমাদের সবার পরিচয় জানবো। কারন তোমরা তো জানই আমাদের কলেজে কিছু রাজনৈতিক সমস্যার কারনে আমরা কিছুদিন তোমাদের ক্লাস নিতে পারি নাই।
তাই আমার মনে হয় এখানে যারা আজ উপস্হিত আছে। তারা হয়তো অনেকেই একে অপরের সম্পর্কে জানো না।
তাই প্রথম থেকে সবার পরিচয় জেনে নেই।
তারপর সবাই একে একে নিজেদের পরিচয় দেয়।
আর এতে মিরার ও পরিচয় জানতে পারি।
ওর বাবা ঢাকা শহরের সব চাইতে বড় মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির মালিক মো:জাহাঞ্জাগীর আলমের ১ম বা ২য় সন্তান।
আপনারা হয়তো ভাবছেন ১ম বা ২য় সন্তান কেন বললাম?
কারন ওরা নাকি জমজ বোন।
যাই হোক সব শেষে যখন আমার পরিচয় দেওয়ার পালা তখনি স্যার বলে উঠলো
–তুমি শুধু কষ্ট করে তোমার নামটা বলেই বসো।(স্যার)
কি আর করা মনটা খারাপ করে নিজের
নাম :- #কাব্য_আহম্মেদ (নীল) বলে বসে পড়লাম।
আর মনে মনে বললাম হায়রে দুনিয়ার মানুষ তোরা শুধু বাহিরের চাকচিক্যটাই দেখলি। ভিতরটা দেখলি না।
তারপর ক্লাস শেষ হলে আমার কর্মস্থলে আসি।
এখানে এসে মনটা একটু ভালো হয়ে গেলো। কারন এখানে কেও কারো টাকা পয়সা দামি পোশাক দেখে না। শুধু মানুষের প্রতিভা দেখা হয়।
এরপর থেকেই আমার নতুন জীবনের পথ চলা শুরু হয়।
এখন আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য নিজের অতিথ ভুলে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করা।
(আর এই নতুন জীবনে থাকবেনা স্বর্নার মতো কোন স্বার্থপর কোন মেয়ের স্থান)
সব কিছু ভুলে আমি পুনরায় পড়াশুনায় মন দেই।
আর নিয়মিত কাজও করি।
অনেক কষ্টে আমি আবার সেই আমি কে পুনরায় তৈরি করি।
কি আযব দুনিয়া যে আমি ছিলাম কোন এক কলেজের স্যারদের চোখের মনি।
কিন্তু সে আমি ই আজ অন্য কোথাও নিজেকে সবার সামনে ক্ষেত আর লেখাপড়ায় অমনযোগী ছাত্র হিসাবেই উপস্থাপন করলাম!!
আর মিরা?
ওর কাছে তো আমি প্রায় সব সময় ই অপমানিত হয়।
তারপর একদিন যানি না কি মনে করে আমি কলেজের পিছনে পুকুর পারের দিকে যাচ্ছিলাম।
তখনি কতকগুলো মেয়ের হাসাহাসি আর গলার আওয়াজ পেলাম।
মনে মনে ভাবলাম হয়তো মেয়ে গুলোও আমার মত এখানে একটু নিরিবিলি থাকতে এসেছে।
কিন্তু যখনি আমি ওদের প্রায় কাছাকাছি এসেছি।তখনি দেখি মিরা আর ওর বেশ কিছু বড়লোক বান্ধবী কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
তাই ওদের দেখে যেই আমি চলে আসবো।
তখনি আমি ওদের কিছু কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।আর কেন হলাম তা শুনুন…….
আমি যখনি ওখান থেকে চলে আসা ধরলাম তখনি হঠাৎ করেই মিরার বান্ধবী নীলা বলে উঠল…
–আচ্ছা তোরা বলতো আমাদের কলের সব চাইতে সুন্দরি মেয়ে কে???
–কে আবার আমাদের মিরা। আর তুই কি চোখেও দেখিস না ওর আগে পিছে কত বড় লোকের ছেলেরা ঘুরঘুর করে। (ওর এক বান্ধবী)
–ঐ থাম থাম শুধু কি বড়লোকের ছেলেরাই
আমাদের কলেজে যতো ছেলে আছে সবারি একই অবস্থা।
(ওদের মধ্যে অন্য একজন)
–নারে আমার তো মনে হয় না। আমাদের মিরা……
(এরপর নীলা কি আর বলতে পারে..! পড়তে চোখ রাখুন আমার প্রোফাইলে)
.
.
.
চলবে………………::::