প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-১২

0
961

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-১২
*
*
সারাপথে সাদিফ ভাইয়ার একটা শব্দ পর্যন্ত শোনা যায়নি। জ্বরের কারণে উনি একদম নেতিয়ে পড়েছেন। এমনি তো সারাক্ষণ অফিসের কথা মিটিং এর কথা মোবাইলে বকবক করতে থাকেন। কিন্তু আজ একদম চুপচাপ আমার হাতে সাথে লেপ্টে রয়েছেন।

বাসায় পৌঁছাতেই,সাদিফ ভাইয়া গাড়ি থেকে আমাদের আগে নেমে দ্রুত বাসায় চলে গেলেন।
আমি আর জুমু উনার পিছে পিছে যাচ্ছিলাম।কিন্তু উনার যেই লম্বা লম্বা পা,ধপধপ করে ভিতরে চলে গেলেন।

খালামনিদের বাসার ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম সবাই লিভিংরুমে বসে কথা বলছে।
উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাদিফ ভাইয়া দ্রুত হেঁটে চলেছেন।কি হলো উনার আল্লাহ্ জানেন!
নিশ্চয়ই জ্বরের ব্যাপারটা উনি সবাইকে জানাতে চাচ্ছেন না।
আজব জ্বরের কথা জানলে কি সমস্যা???
সাদিফ ভাইয়া উনার জ্বরের কথা খালামণিকে বললে বলুক, না বললে আমিই বলে দিব।
,
নাস্তা করে উঠে যেই ভাবলাম সাদিফ ভাইয়ার জ্বরের কথা বলবো..অমনিই জুমু খালামণিকে বললো..

“মা,ভাইয়ার অনেক জ্বর উঠেছিলো গাড়িতে।ভাইয়া কি নাস্তা খেয়েছে”??

“কি বলিস??আমাকে তো সে কিছু বলে নি।আমাকে বলেছে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে,রুমে নাস্তা পাঠিয়ে দিতে।আমিও তা করলাম।এই ছেলে নিজের রোগবালায় কেনো লুকাতে চায় আমি বুঝি না।নিজেকে বেশি স্ট্রং ভাবে সে।নিজের দুর্বলতা দেখাতে সে রাজি না।আমি তো তার মা,আমার সামনে নিজেকে এত শক্তিশালী দেখানোর কারণ কি?কি এক ছেলে পেটে ধরেছি আমি”!!

“মা!!বন্ধ করো তো এসব কথা।ভাইয়ের কাছে যাও। ভাই এর জ্বর কমেছে নাকি কমেনি দেখো। আর দরকার পড়লে হাদিদ আঙ্কেল কে কল দাও”।

খালামণি সাদিফ ভাইয়াকে বকা দিতে দিতেই সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছেন।

জুমু চেয়ারে বসতে বসতে আমাকে বলল….

“মা আজ ক্ষেপেছে।ভাইএর প্রবলেম কি আমি বুঝিনা। সারাদিন কত স্ট্রেস নেয় সে একা। বিজনেস, পলিটিক্স,এগুলার মিটিং, সব তো তার একার সামলাতে হয়।শরীর খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক”।

“হ্যাঁ সেটাই।খারাপ লাগছে উনার জন্যে।সারাদিন তো মুখের আওয়াজ বন্ধ হয় না।আর আজ একদম চুপ।
ডক্টর আঙ্কেলকে এসে একটু চেকাপ করিয়ে নিতে বল”।

জুমু ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো..
“কি ব্যাপার আজ আমার ভাইয়ের জন্য তোর এতো দরদ।আমি তো ভাবতাম ভাই তোর শত্রু”।

জুমুর কথায় এমন কথায় আমি বেশ অবাক হলাম…
আসলেই তো উনি আমার শত্রু। তাও কেনো যেনো উনার জ্বরের ব্যাপারটা আমার হজম হচ্ছে না।মায়া লাগছে উনার জন্যে।

“শ.. শত্রু হয়েছে তো কি হয়েছে??মানুষ তো উনি তাই না??মানুষের জন্যে দরদ লাগাটা স্বাভাবিক।আর তুই এমন প্রশ্ন করছিস কেনো?? চড় দিবো একটা”!

“হ্যাঁ দে দে”।( জুমু আমার দিকে গাল এগিয়ে দিয়ে)

জুমুর গালের দিকে হাত এগিয়ে নিলেও আমি একটা কিসি দিলাম ওর গালে।
আর দুইজনই হা হা করে হাসতে লাগলাম।


এখন সবাই জেনে গিয়েছে সাদিফ ভাইয়ার জ্বর হয়েছে। সবাই উনাকে দেখেছেন সেবা করছেন।কিন্তু আমি,ভাবী আর জুরাইন লিভিংরুমে বসে আছি সেই কখন থেকেই।আমার একটুও যেতে ইচ্ছা করছে না উনার কাছে।উনার জ্বরের মুখটা আমার একটুও দেখতে মন চাচ্ছে না।
একটু পরেই দেখলাম ডক্টর প্রবেশ করছেন আর সাথে আছে রাফসান ভাইয়া।

“জ্বর মেবি বেড়েছে সাদিফের।উফফ! একটু উপরে উঠে দেখতে পারতাম!!ছেলেটা বড্ড পরিশ্রম করে।এত কাজ একা না করলেও হয়”।

ভাবীর কথা শুনে প্রচন্ড রাগ লাগলো সাদিফ ভাইয়ার উপরে।আসলেই তো।টাকার অভাব আছে নাকি উনার।যেমন কারবারি,তেমন অসুখ বাঁধিয়েছে।

“ঠিক বলেছো ভাবী।উনি আসলেই বেশি কারবারি।থাক বাদ দাও।উনার জ্বর আল্লাহ্ ভালো করে দিক এই দোআ করি।এই জুরাইন,যাও দেখো তো উপরের কি খবর”।

“ওকে আপি,যাচ্ছি”।
বলেই জুরাইন উপরে চলে গেলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর,সবাই নামলো উপর থেকে শুধু নানু,আর খালামণি ছাড়া।ডক্টর অনেক আগেই চলে গিয়েছেন।জুরাইন সে যে গেলো আর নামেই নি নিচে। নিশ্চয়ই গেমস এ ঢুকে গেছে সে।

ইতি আপু এসে বসলো আমার পাশে।আমি কিছু আস্ক করবো করবো ভাব নিলাম,অমনিই আপু বলে উঠলো..

“সিজন চেঞ্জ হচ্ছে এখন বারবার।তাই এমন জ্বর এসেছে হঠাৎ।সিরিয়াস কিছুই নেই।মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে ইন শাহ আল্লাহ্”।

আমি চুপ করে রইলাম।কেনো যেনো একটুও কথা বলতে মন চাচ্ছে না আমার।
কিন্তু ভাবী বলে উঠলেন…

” সাদিফের বেশি জ্বর এসেছে নাকি ইতি”???

“হ্যাঁ ভাবী।কিন্তু আল্লাহ্ ভরসা,ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে”।

উনার জ্বরের কথা আমার আর শুনতে মন চাচ্ছে না।তাই চুপচাপ উঠে জুমুর কাছে চলে গেলাম।

🌸

জুমু আর রাফসান ভাইয়া ফোনে কথা বলছে।আর আমি সাদিফ ভাইয়ার প্রোফাইল দেখছি।
কি সুন্দর ছেলেটা!এক একটা ছবিতে উনাকে দেখতে অনেক ড্যাশিং লাগছে।
কোনো ছবিতে পাঞ্জাবি পড়ানো,আর কোনোটাতে শার্ট – জিন্স পড়ানো,আবার কোনোটা জিম করছে এমন,এক একটা ছবিতে উনাকে এত সুন্দর লাগছে বলার বাহিরে।

উনার একটা পেজ আছে।ঐখানে উনি শুধু রাজনৈতিক কাজ শেয়ার করেন। সাদিফ ভাইয়ার চ্যারিটির কাজ,দান করা,ভোটিং এর কাজ সব দেন এই পেজে।

উনার আইডিতে মেয়েদের কমেন্ট না থাকলেও,পেজে মেয়েদের কমেন্টস এর অভাব নেই।
হেই হ্যান্ডসাম,কিউট, ম্যারি মি,ক্রাশ বয়,হেনতেন হাজারো কমেন্টস এমন।
কিন্তু সাদিফ ভাইয়া কোনো রিপ্লাই দেন না।এই জিনিসটা দেখে কেনো জানি ভালো লাগছে অনেক।
মেয়ে মানুষ কেমনে এমন লিখে!!লজ্জা নেই বুঝি এদের!

এসব দেখতে দেখতেই আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি নিজেও জানিনা।

ইতি আপুর ডাকে ঘুম ভেংগে গেলো।শোয়া থেকে উঠে বসলাম।কিন্তু বড্ড ঘুম আসছে।রাজ্যর ঘুম যেনো আজকেই আসার কথা।

“ফুল..!!উঠ না বোন।তুই খাবার না খেয়ে কেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলি??ভাইয়া এই জ্বরের মাঝেও তোকে বকা দিয়ে চলছে”।

ভাইয়ার নাম শুনে আমার চোখ অটোমেটিকলি খুলে গেলো। ইতি আপুর ভাইয়া মানে তো সাদিফ ভাইয়া।

ওহ শিট!!উনার তো জ্বর ছিলো। আমার জ্বরের সময়,উনি কত সেবা করেছিলেন আমার। আর আমি উনাকে একবারও দেখতে যায়নি। কত স্বার্থপর আমি!!

“এই যে ভাবনার রাণী।ভাত খেয়ে নিন জলদি করে।এরপর সাদিফ ভাইয়াকে গিয়ে দেখে আসবো”।

আপুর কথায় আমি চোখ তুলে তাকালাম।খুব অবাক লাগলো ব্যাপারটা।আমি সাদিফ ভাইয়াকে নিয়ে ভাবছি আপু এটা কেমনে জানে!!
কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে অল্প করে ভাত খেয়ে নিলাম।কারণ ঘুম থেকে উঠলে আমার কিছুই খেতে মন চায় না।

ভাত খেয়ে চুপচাপ বেডে বসে রইলাম।পাশে জুমু গভীর ঘুমে।ইতি আপু ব্যালকনিতে রাফিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।

“বাবু চল।ভাইয়াকে দেখে আসি”।
মাথা তুলে ইতি আপুর দিকে তাকালাম।ইতি আপু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর মিটমিট করে হাসছে।

“কি হাসছো কেনো??ভাইয়া কি বেশি আদুরে কথা বলেছে”??

আমার কথায় ইতি আপু চোখ বড় করে বললো…

“ফুল!!বেশি দুষ্ট হয়েছিস।চল আমার সাথে”।

আমি ইতি আপুর পিছে পিছে যেতে লাগলাম।

নক করতেই সাদিফ ভাইয়া দুর্বল কণ্ঠে বলে উঠলো ..

“কে”!

“আমি ভাইয়া। ইতি”।

“কাম ইন”

সাদিফ ভাইয়ার পারমিশন পেয়ে আমরা দুইজন ভিতরে গেলাম।আর উনি বেড সাইড থেকে ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলো।এতক্ষণ আধাঁরের মাঝেই শুয়ে ছিলো এই লোক। ভয় লাগে না বুঝি এমন আধাঁরে থাকতে!!

গুটি গুটি পায়ে ইতি আপুর সাথে হেঁটে উনার কাছে গেলাম।অবশ্য দাঁড়িয়ে আছি আমি আর ইতি আপু ভাইয়ার পাশে বসে আছে।

ল্যাম্পের আলোতে সাদিফ ভাইয়ার মুখটা বড্ড মলিন দেখাচ্ছে।আর সাথে জ্বরের কারণে তার নাক লাল হয়ে আছে।চোখটা ভালো করে বুঝা যাচ্ছে না।

ইতি আপু সাদিফ ভাইয়াকে ওষুধ দিয়ে দিলেন।আর উনি শোয়া থেকে হালকা উঠেই ওষুধ খেয়ে আবার শুয়ে পড়লেন।

“রাফিদ কল দিচ্ছেন।শেফা তুই বস একটু।আমি আসছি”।
আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে ইতি আপু চলে গেলো।

আমিও ইতি আপুর পিছে চলে যেতে নিলেই সাদিফ ভাইয়ার দুর্বল কণ্ঠে থেমে গেলাম…

“ফুল..!এইদিকে আয়।আমার আসে বস”।

আমি পিছে ফিরতেই উনি আবারো বলে উঠলেন…

” এই আসো না। আমার পাশে বসো”।

সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি তো সাত আসমানে উঠে গেলাম। সাদিফ ভাইয়া আমাকে “তুমি” করে ডেকেছেন??

“ভাইয়া!!!আপনি আমাকে তুমি করে ডাকছেন কেনো”?

“তোকে আমি কতবার ডাকবো??কানে শুনতে পারছিস না”??(রাগী সুরে)

আমি আস্তে আস্তে উনার পাশে গিয়ে বসলাম।

“এই জ্বরের মাঝেও রাগ কমে না আপনার??ভালো লাগছে এখন”?

“উহু। সাদিফের রাগ কমে না।তোর জন্যে তো একদম ই না”।

“আপনি আমাকে এত ঘৃণা করেন কেনো হুই”?

“ভালো লাগে তোকে ঘৃণা করতে তাই।না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলি কেনো?? কার কথা ভাবছিলি বলতো”..?

“যার কথায় ভাবি।আপনার কি??আপনি আপনার বউ এর কথা ভাবেন”।

আমার কথায় সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে এক টান দিলেন।আর আমি উনার বুকের উপর পড়লাম। জ্বরে উনার শরীর গরম হয়ে আছে।আর উনার স্পর্শে আমার মনে হচ্ছে আমি কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যাবো।

“ডোন্ট ইউ ডেয়ার।মেরে দিবো একেবারে।এরপর নিজেও শেষ হয়ে যাবো।আমি জানি এমন কাজ তুই কখনো করবি না।আমি তোকে বিশ্বাস করি। আই বিলিভ ইউ বাবুই”।

সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার বুক ধুক ধুক করতে লাগলো।

মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছে না। এমন সিচুয়েশন এ আমি কখনোই পড়িনি। কিই বা বলবো উনাকে আমি।
দরজায় নক পড়তেই আমি উনার বুকে আমার দুই হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে উঠে বসলাম।

কিন্তু সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে রেখেছেন।

সাদিফ ভাইয়া “কাম ইন” বলার সাথে সাথেই ইতি আপু প্রবেশ করলো রুমে।

“ভাই,অনেক রাত হয়েছে।ঘুমিয়ে যাও তুমি।ফুল চল,লেট হচ্ছে”।

আমি হাত আমার হাত ছুটাতে চাচ্ছি, কিন্তু সাদিফ ভাইয়া হাত ছাড়ছেন না আমার।

“একটু পরে আয় নিতে।শেফার সাথে কথা আছে কিছু”।

আমি তাড়াহুড়া করে বলে উঠলাম…

“কোনো কথা নেই।আমি আসছি আপু।ওয়েট”!!

ইতি আপু কিছু বলতে যাবে কিন্তু সাদিফ ভাইয়া বলে উঠলো….

“ইতি!!!কি বললাম?? ও একটু পরে আসবে বলেছি না”।

সাদিফ ভাইয়ের ধমকে ইতি আপু কিছু না বলে হাসতে হাসতে চলে গেল।

“আজব আপনি কি ছোট বাচ্চা?? কিছুই বুঝেন না??
সবাই ঘুমাচ্ছে এখন। কেউ যদি আমাকে আপনার রুমে দেখে তাহলে কি ভাববে?? আপনার লজ্জা বোধ নেই, কিন্তু আমার তো আছে তাই না”।

আমার কথার তোয়াক্কা না করে সাদিফ ভাইয়া বলে উঠলো…

“আই ডোন্ট কেয়ার। আমি থাকতে তোর কোন চিন্তা করতে হবে না। যে কারণে আটকালাম তোকে,
কোচিং এর ঐ তিন ছেলে কি বলেছিল ঠিক করে বল”।

এই জ্বরের মাঝেও ওই তিন ছেলের কথা উনার মাথা থেকে যায়নি। বাহ্হ্হ কি ব্রেন উনার!!!

“আরে কিছুই বলেনি। জাস্ট জানতে চেয়েছিল সাদিফ ভাই আর ইমরান ভাইএর বোন কারা”!!

“আর তোকে কি বলেছে”??

“জুমু আর তাসফিয়াকে সামলানোর জন্য আমি কিছু কথা বললাম। দেন ওরা জিজ্ঞেস করলো আমি কার জিনিস! সাদিফের নাকি ইমরানের জিনিস?
পরে জুমু ওদের চুপ করিয়ে দিয়েছিলো। আপনি কিন্তু কোন মারপিট করতে যাবেন না। শরীর ভালো নেই আপনার”।

“এই কথাগুলো আমাকে কোচিংয়ে থাকতে বলিস নি কেন”??

“বলবো, আর আপনি গিয়ে ওদের মারবেন। এইতো”??

“চুপ কর একদম। এদের সাহস দেখছি খুবই বেড়েছে। একটা তো টাইট দিতেই হয়।আমার জানদের কিছু বলবে আর আমি ছেড়ে দিবো”???

“জানদের মানে?? আমি আর তাসফিয়া ও কি আপনার জান”??

“তাসফিয়া কে আবার??যা অনেক রাত হয়েছে।ফালতু বকিস না”।
বলেই উনি ইতি আপুকে কল করলো।আর আপু এসে আমাকে নিয়ে গেলো।

রোগী দেখতে এসে বাঁশ খেয়ে গেলাম। কারণ এটা তো সাদিফ ভাইয়া!!যে সর্বদা উল্টাপাল্টা কাজ করতে পারে।সেটা যেমন সিচুয়েশন হোক না কেন!

🌸

পরের দিন দুপুরের খাবার শেষে সবাই বাসায় চলে আসলাম।আর আমি কোচিং এর জন্যে রেডি হয়ে নিলাম।
মামী,জুরাইন খালার বাসায় কিন্তু নানু আমাদের সাথে চলে এলো।

আমি আর জুমু ড্রাইভারের সাথে চলে গেলাম কোচিং এ।

ক্লাসে ঢুকতে যাবো এমন সময় আদনান ভাই আসলো।

“ছেলেগুলো কিছু বলে ছিলো আমাকেই বলতে পারতে তোমরা। সাদিফকে কেনো বলেছো?
ও ফোন করে আমাকে অনেক গালি দিয়েছে।আমি জানলে ছেলেগুলোকে কালই কোচিং থেকে বের করে দিতাম।কিন্তু এখন সাদিফ তাদের বের করেছে তো করেছেই সাথে তাদের পলিটিক্স লাইফটা শেষ করে দিয়েছে”।(আদনান ভাই অসহায় ভাবে বললো)

“যা করেছে ভাই একদম ভালো করেছে।আপনিও জানেন, মেয়েদের সাথে উল্টোপাল্টা করলে এদের শাস্তি দিতে হয়।সো,আমার ভাই ঠিক করেছে”।
কথাটা বলেই জুমু আমার হাত ধরে ক্লাসে চলে এলো।

এভাবেই এক মাস কেটে গেলো। অবশ্য সেদিনের পর থেকেই সাদিফ ভাইয়া আবারো আমাদের কোচিং থেকে নিয়ে যেতেন।আমার হাতের অবস্থাও একদম ভালো হয়ে গেল।

নানু এখনো আমাদের বাসায় আছেন।কিন্তু মামী,মাম, জুরু চলে গেলো।কারণ জুরুর স্কুল খোলা।

কোচিং এ এখন ফাইনাল এক্সাম শুরু হতে যাবে।তাই কিছুদিন বন্ধ রেখেছে কোচিং।
যাতে সবাই ভালো প্রিপারেশন নিতে পারে।

প্রত্যেক সন্ধ্যা বেলায় জুমু আমার বাসায় চলে আসে। আমি আর জুমু মিলে প্রত্যেকদিন সেই পড়ালেখা করি।অনেক সময় জুমু আর আমি ডিনার করে পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে যায়।আর জুমুর বাসায় যাওয়া লাগে না।
এই কয়দিনে সাদিফ ভাইয়ার সাথে তেমন দেখা হয় নি।তবে কথা হয়েছে মেসেজে।
তাসিফ আমাকে অনেক বার মেসেজ করেছে।তার সাথে এড হওয়ার জন্যে।সে নাকি কিছু কথা বলবে আমায়।আমার এত কথা শোনার কোনো ইচ্ছা নেই তার।

এভাবেই আরো কিছুদিন চলে গেলো।ভাবীর এখন সাত মাস ওভার চলছে। কি যেনো একটা অনুষ্ঠান করতে হয় এই সময়ে।
তাই মা মামীদের, খালামনিদের আর ভাবীর বাবার বাসায় দাওয়াত করলেন।

নির্দিষ্ট দিনে সবাই দুপুরবেলায় চলে এলো।ভাবীর বাবারা আসবেন সন্ধ্যায়।

মায়ের কথা মতো,ভাবীকে একটা সুন্দর শাড়ি পড়িয়ে দিলাম ইতি আপু আর আমি মিলে।আর সাথে সুন্দর সিম্পল গয়না পড়িয়ে দিলাম।যা ইসলাল ভাইয়া এনেছে ভাবীর জন্যে।

ভাবীকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।আমরা তিনজনই ভাবীর সাথে কিছু ছবি তুলে নিলাম।এরপর আমি হাঁটু গেড়ে বসে ভাবীর পেটের উপরে আমার ছোট্ট মা অথবা বাবা যে হোক না কেনো, ওকে একটু আদর করে নিলাম।


ইসলাল ভাইয়া রুমে আসতেই আমরা তিনজন বের হয়ে গেলাম।ওদেরও তো প্রাইভেসি দরকার!!

রুমে গিয়ে আমি একটা লং কামিজ পড়ে রেডি হয়ে নিলাম।আর চুলগুলো বেনী করে নিলাম।
আস্তে আস্তে ভাবীর বাসার সবাই চলে এলো।এই কয়েকমাসে ভাবীকে দেখতে ভাবীর মা-বাবা আসলেও, ভাবীর দুই ভাই আর বড় ভাবী আসতে পারেনি।

ভাবীর ছোটভাই রাফসান ভাইয়ার সাথেই পড়ে।বড্ড হাস্যকর মানুষ উনি।কিছু বলতে নিলে আগে উনার দাঁতগুলো দেখিয়ে দিবেন।এরপর হে হে করে হাসবেন।

আজও একই। দেখা মাত্রই হেসে উঠলেন…

“হ্যালো কেশবতী।চুল তো আরো লম্বা হয়েছে মনে হচ্ছে”।

“হাই ভাইয়া।আপনি তো আসেন না আমাদের বাসায়।হঠাৎ আসলে ত এমনই লাগবে।বসেন আপনি।আমি কাজ করে আসি”।

ইতি আপু আর জুমু মিলে রাব্বী ভাইয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো।
রাব্বী ভাইয়ের সাথে কথা বলে ফিরতেই দেখলাম, সাদিফ ভাইয়া দুই হাতে নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পিলারের পাশে।

আমি ঐদিকে আর গেলাম না।ভাবী রুমে উনার মা,ভাবীর সাথে গল্প করছেন।আর মা,খালা কিচেনে।
আমি টেবিলে সব নাস্তা রাখছি।আর সাদিফ ভাইয়া এসে উনার হাতের নাস্তা গুলো রেখে গেলেন।

পিছনে চুলে কেউ ক্লিপ লাগিয়ে দিচ্ছে এমন মনে হতেই আমি পিছে ফিরলাম। সাদিফ ভাইয়া উনার হাতে চুলের ক্লিপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!

“তোর রুমে গিয়ে এটা নিয়ে আসলাম।চুল আটকা। ঐ রাব্বী তোকে কেশবতী কেন বলবে?
আর ও এইবাসায় না আসলে তোর এত সমস্যা কিসের”??(রাগী গলায়)

আজব তো!!এই লোক তো মহাপাগল।উনার জন্যে কি আমি এখন মেহমানদের সাথেও কথা বলবো না??
সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম…।

চলবে..🙂

গল্প কেমন হচ্ছে আমাকে জানাবেন অবশ্যই কমেন্ট করে।নাহলে আমি কিভাবে বুঝবো গল্প ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ?

হ্যাপী রিডিং 🙂❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here