যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ৪

0
679

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ০৪
.
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বিকাল হয়ে যায় আমার। উঠেই মেহেরুন আর আমি চলে যাই নতুন ভাবীর সাথে দেখা করতে। হল রুমের মতো একটা বড় রুমে নতুন ভাবীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে এখনও মেহমানরা বসে আছে। আমাকে সেখানে দেখতেই এক আত্মীয় হাসি-মুখে বলে উঠেন,

—” আরে! মীরা না তুই? কয়েকদিন আগে ছবি দেখেছিলাম। ছবির থেকেও তো বেশি পিচ্চি তুই!”

উনার কথা শুনে সবাই এবার আমার দিকে তাকালেন। আমি মুচকি হাসলাম। মেজো চাচী হাসি-মুখে এগিয়ে এলেন আমার দিকে। আমাকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,

—” এখন আসার সময় হয়েছে তোর? কালকে এলি না কেন? ঢাকায় থেকেও তো বাসায় আসতি না। মেজো চাচীকে কি আর ভালো লাগে না তোর?”

জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই মাথা নাড়ালাম আমি। মৃদু কণ্ঠে বললাম,

—” কখনো না! তুমি তো আমার বেস্ট চাচী! পরীক্ষার জন্য কালকে আসতে পারি নি। নাহলে তো কালই চলে আসতাম! এমন কথা বলার সুযোগও পেতে না তখন!”

মেজো চাচী হেসে দিলেন। সরে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে নতুন ভাবীর পাশে বসালেন। আমি সালাম দিলাম ভাবীকে। তিনিও জবাব দিলেন। এর মধ্যে একজন হঠাৎ-ই বলে উঠলেন,

—” কত্তদিন পর আসলা এখানে! তোমার বড় চাচা যদি ওইরকম আকাম না করত তাইলে সবার আলাদা থাইকতে হইতো না। তোমার চাচা মরেও যেন শান্তি দিয়ে যায় নাই কাউকে। সবাই আগেও যেই আলাদা এখনও তা!”

কথাটা শুনে নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার। অন্য কেউ আমাদের পরিবারের সদস্যকে এমন বলবে তা মোটেও ভালো লাগে না আমার। যেমনই হোক চাচা ছিল সে আমার!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তবুও ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসার চেষ্টা করলাম। অতঃপর কোনোমতে সেখান থেকে বেড়িয়ে একাই চলে এলাম ছাদে। নতুন ভাবীর সাথেও তেমন কথা হলো না আর! তখন ছোট হলেও কিছু কিছু পুরোনো কথা মনে আছে আমার। সাথে আব্বুর থেকে শোনা কিছু ঘটনা!

আমার আর মেহেরুনের বয়স তখন ১০বছর। ইয়াসিন আর আবদ্ধ ভাইয়ার বয়স ১১ আর আব্রাহাম ভাইয়ার বয়স ১৩ বছর। আব্রাহাম ভাইয়া সব সময়ই আলাদা থাকতে পছন্দ করতেন। আমাদের সাথে তেমন মিশতেন না। সব সময় কোনো না কোনো কাজে লেগে থাকতেন উনি। হয়তো বই পড়তেন, ড্রইং করতেন অথবা ফুলে পানি দিতেন। তবুও রাঙামাটির ঠিক এই বাড়িটায় হাসি-খুশি ছিলাম সবাই। আমরা ঢাকার হলেও দাদাজান খুব শখ করে রাঙামাটির পাহাড়ের ওপর বিশাল এক বাড়ি তৈরি করেন। যেখানে আব্বুরা চার ভাই থাকতেন। ফুফির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তিনি চট্টগ্রামে চলে যান৷ ফুফির ছেলেই হলেন ইয়াসিন ভাইয়া। একে বারে না থাকলেও ফুফিরা সবাই ঈদে-পরবে আসতেন এখানে। তখন কি-না আনন্দ হতো আমাদের মাঝে! কিন্তু দশ বছর আগে এমনই এক ঈদে সবকিছু উলোটপালোট হয়ে যায়। ঐবার ঈদের পরের দিন এক তিক্ত সত্য সামনে আসে। বড় চাচী সন্তান জন্ম দেওয়ায় অক্ষম ছিলেন। তাই বড় চাচ্চু বহু নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। যা জানার পর সব ভাইয়েরা প্রতিবাদ করতে চাইলে বড় চাচ্চু বাজেভাবে কিছু কথা শোনান। রেগে গিয়ে মেজো চাচ্চু আব্রাহাম ভাইয়া আর আবদ্ধ ভাইয়াকে নিয়ে চলে যান ঢাকায়। আব্বুও আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে ঢাকায়ই এক ভাড়া বিল্ডিংয়ে উঠেন। ইয়াসিন ভাইয়াকে নিয়ে ফুফিও চলে যান চট্টগ্রাম! সাথে বড় চাচীও নিজ বাবার বাড়ি চলে যান একেবারে। বাকি রয়ে যায় বড় চাচ্চু আর ছোট চাচ্চু। ছোট চাচ্চুর আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেহেরুন আর ছোট চাচীকে নিয়ে বাধ্য হয়েই থাকতে হয় এখানে। তবে এক ঘরে থাকলেও বড় চাচ্চুর সাথে তেমন কথা হতো না কারো। একাকিত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল বড় চাচ্চুকে। কেননা আমরা কেউই যেতাম না রাঙামাটি, না যোগাযোগ করতাম বড় চাচ্চুর সাথে। ছোট চাচ্চুর সাথে যা একটু ফোনে কথা হতো! এরপর একসময় বড় চাচ্চু মারা যান। অভিমান ভেঙ্গে সব ভাইয়েরা আবারও রাঙামাটি যান নিজের বড় ভাইকে শেষবার দেখতে। তবে কোথাও না কোথাও একটুখানি অভিমান হয়তো রয়েই গেছে সবার। তাই তো ছোট চাচ্চু বাদে কেউই এখনও রাঙামাটির এই বাড়িটায় থাকে না!

এইতো কয়েকমাস আগেই বড় চাচ্চুর মৃত্যুর দু’বছর হলো। প্রতি মৃত্যু বার্ষিকে ভাইয়েরা মিলে সবাই রাঙামাটি এলেও আমি আর আব্রাহাম ভাই কখনও যেতাম না৷ এমনকি বড় চাচ্চুকে শেষবার দেখতেও যাই নি। উনারটা জানি না তবে আমার কেন যেন যেতে ইচ্ছে করত না! পাষাণ হৃদয় নিয়ে রয়ে যেতাম ঢাকায়! ফোনে ফোনেই যোগাযোগ করতাম সবার সাথে। এবং মেজো চাচ্চু আর আমরা একই শহরে বসবাস করলেও আব্বু-আম্মু অথবা চাচ্চু-চাচী বাদে কেউই কারো বাসায় যেতাম না। তারা আসলেই টুকটাক দেখা বা কথা হতো এই যা। দশ বছরের মাঝে আমার সাথে আব্রাহাম ভাইয়ার দেখা হয় নি কখনও। কেউ আগ্রহই প্রকাশ করে নি। এই এত বছর পর মেজো চাচ্চু সিদ্ধান্ত নেন আবদ্ধ ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান রাঙামাটিতে করবেন। এতে যদি পরিবারের সবাই এই ছোট্ট বাড়িটায় আবারও একসাথে হাসি-খুশি থাকে!

____________________

মেহমানরা চলে যেতে যেতে বিকাল ৫টা প্রায়! শীতকাল হওয়ায় সন্ধ্যা নেমে গেছে আকাশে। ক্লান্ত পায়ে রুমে ঢুকতেই মেজাজ বিগড়ে যায় দীঘির। আবদ্ধ সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন করছে। দীঘি যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। রেগে গিয়ে আবদ্ধর সামনে বরাবর কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় দীঘি। তাতেও যেন আবদ্ধের কোনো খেয়াল নেই। দীঘি এবার খানিকটা কেঁশে আবদ্ধের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে। এতে দীঘির দিকে একবার তাকিয়ে আবারও কাজে লেগে যায় আবদ্ধ। রাগের সীমা যেন অতিক্রম হয়ে যায় দীঘির। সোজা ল্যাপটপ বন্ধ করে সেটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে। আবদ্ধ বিরক্তি মাখা চেহারায় দীঘির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
—” আমার ল্যাপটপ দাও দীঘি!”
—” না! ”
—” কেন? ”

আরো রেগে গেল দীঘি। আবদ্ধ কিভাবে বলছে ‘কেন’ শব্দটা? আবদ্ধ কি জানে না? কেন জানে না? দীঘি তার বউ! তার জানা উচিত তার বউ কেন এমন করেছে। কিন্তু আবদ্ধ জানে না! জানার চেষ্টা পর্যন্ত করে নি। তারওপর সারাদিন একফোটা দেখাও দেয় নি দীঘির সাথে। আবার এখন কথাও বলছে এভাবে! অভিমানে মুখ ফুলিয়ে ফেলল দীঘি। তা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল আবদ্ধ,

—” সমস্যা কি? মুখ এমন করে রেখেছো কেন? এখন আবার কি করেছি আমি?”

দীঘি রাগ দেখিয়ে বলল,

—” বলুন কি করেন নি আপনি! সকাল থেকে আমি যে ছিলাম না সে খেয়াল আছে আপনার? একবার আমাকে দেখতেও গেলেন না কেন?”

আবদ্ধ অবাক হয়ে বলল,
—” তুমি আবার কোথায় গিয়েছিলে? আমার মতে তো তোমাকে মেহমান দেখতে চেয়েছিল বিধায় আম্মু হল রুমে নিয়ে গিয়েছিল।”
—” হ্যাঁ নিয়ে গিয়েছিল আম্মু। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, আমি যে সারাদিন আপনার সাথে ছিলাম না আপনার কি আমাকে একবারও দেখতে ইচ্ছে করে নি?”

আবদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,

—” কেন? দেখতে ইচ্ছে করবে কেন? আর কোই সারাদিন আমার সাথে ছিলে না? সকালেও তো ঝগড়া করলে আমার সাথে। এখনও করছো!”

দীঘি চোখ বড় বড় করে বলল,

—” আমি আপনার সাথে ঝগড়া করি? নাকি আপনি করেন?”

বলতে বলতেই গলা নরম হয়ে এলো দীঘির। করুণস্বরে আবদ্ধকে বলে উঠল সে,
—” আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না আবদ্ধ? আমিও চাই অন্যান্য বরের মতো আপনিও আমাকে একটু ভালোবাসেন। একটু কেয়ার করেন!”

আবদ্ধ কিছু না বোঝার মতো বলে উঠল,

—” কি বলছো তুমি? বুঝতে পারছি না।”

মুহুর্তেই চোখ সরু হয়ে এলো দীঘির। সে বুঝতে পারছে আবদ্ধ ইচ্ছে করে এমন কথা বলছে। বুঝেও না বোঝার ভান করছে সে। তাই দীঘি দাঁত কটমট করে আবদ্ধকে বলল,

—” ঢং করেন না? আমিও দেখবো আপনার এ ঢং কোথায় যায়! আপনি আমাকে একদিন না একদিন ভালোবাসবেনই। এর জন্য আমার যা করা লাগে আমি তাই-ই করব। দেখে নিয়েন!”

আবদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে ল্যাপটপ নিতে নিতে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

—” তোমার যা ইচ্ছে তাই কর! ”

কথাটা শুনে মুখ বাঁকালো দীঘি। আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। দীঘির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবদ্ধ মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,

—” পাগল মেয়ে একটা! ”

_______________________

কিছুক্ষণ পর দীঘি ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখে আবদ্ধ এখনও কাজ করছে। তার পাশেই খাবারের দু’টো প্লেট। হয়তো কেউ দিয়ে গেছে তাদের। ভ্রু দু’টো কুঁচকে নিলো দীঘি। ধপ করে আবদ্ধের পাশে বসে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে আবদ্ধের মুখের কাছে নিতেই মুখ সরিয়ে নিলো আবদ্ধ। বিরক্তি নিয়ে বলল,

—” সমস্যা কি? এমন করছো কেন?”

আবদ্ধ থেকে দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে দীঘি বলল,
—” দেখছেন না খাওয়াচ্ছি? চুপচাপ খান!”
—” মানে কি? ”
—” চুপচাপ খান। নাহলে কিন্তু ল্যাপটপ আবারও বন্ধ করে দেবো।”

আবদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। দীঘি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে খাবার আবদ্ধের মুখের কাছে ধরতেই আবদ্ধ আবারও মুখ সরিয়ে ফেলল। এতে দীঘি চোখ পাকিয়ে তাকালো আবদ্ধের দিকে। যার অর্থ- “না খেলে ল্যাপটপ ছুঁড়ে মারবো আমি!” বাধ্য হয়ে দীঘির হাতেই খেতে লাগলো আবদ্ধ। মুচকি হাসলো দীঘি! আবদ্ধের সাথে দীঘিও খেতে শুরু করলো এবার।

____________________

ছাদে অনেক্ষণ অতিবাহিত করে সন্ধ্যার আযান দেওয়ার আগে আগেই নেমে এলাম ছাদ থেকে। নিচে ড্রইংরুমে যেতে যেতেই হঠাৎ একটা রুম চোখে পরল। দরজা ভেরানো হলেও একটু ফাঁকা জায়গা দিয়ে টেবিলে অনেকগুলো বই পরে থাকা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই উপন্যাসের বই আমার দুর্বলতা। দূর থেকে টেবিলের বইগুলো অনেকটা উপন্যাসের বইয়ের মতোই লাগছে আমার। ইচ্ছে করছে বইগুলো নিয়ে এখনই পড়া শুরু করি। কিন্তু ভাবীর সাথে দেখা করার সময় মেহেরুন বলে ছিল এটা নাকি আব্রাহাম ভাইয়ার রুম। উনি যদি ভেতরে থাকে? পরক্ষণেই বই পড়ার লোভ সামলাতে না পেরে মাথার সব নয়-ছয় চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে সোজা ঢুকে গেলাম রুমের ভেতর। ধীর পায়ে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গিয়ে সেখান থেকে একটা বই হাতে নিলাম। হুমায়ুন আহমেদ এর ‘অপেক্ষা’ বইটি। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছিলাম হঠাৎ-ই পেছন থেকে কেউ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,

—” এই যে মিস! কে আপনি? আমার রুমে ঢুকেছেন কেন? আবার পারমিশন ছাড়া আমার বইও ধরছেন।”

চমকে উঠায় হাত থেকে বই পরে গেল আমার। ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে সরি বলতে যাবো কিন্তু পেছনে ফিরেই আরেক দফা চমকে উঠলাম আমি। ভেজা চুল মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে একজন সুদর্শন ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। এটা তো সেই ট্রেনের ছেলেটা! কিন্তু সে এখানে কিভাবে? দেখে তো মনে হচ্ছে মাত্রই গোসল করেছে। কিন্তু এখানে গোসল করবে কেন সে? এই রুমেই বা কেন সে? গোসল করার জন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে এখানে গোসল করতে আসে নি তো? আরে ধুর! গোসল করার জন্য তো হোটেলও আছে। চট্টগ্রাম থেকে এত দূর আসবেন কেন? তাহলে কি উনি আমাদের পরিচিত কেউ? এর মাঝেই উনি গম্ভীর কণ্ঠে ভ্রু টাকে আরো কুঁচকে বললেন,

—” ঘুম কাতুরে মিস! তুমি? আমার রুমে কি করছ? আর এখানেই বা কিভাবে এলে?”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
—” এটা আপনার রুম? ”
—” হুম! কেন? ”

সাথে সাথে আপনা আপনিই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,

—” আব্রাহাম ভাইয়া? ”

উনি এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। গম্ভীর কণ্ঠটা আরো গম্ভীর করে বললেন,

—” তুমি আমার নাম চেনো কিভাবে? তোমাকে তো আমি আমার এ নামটা বলি নি। তাহলে জানলে কিভাবে? আর এখানেই বা এসেছো কিভাবে? কে তুমি?”

আমি উত্তর দিলাম না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখলাম তাকে। উনি ডান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে নিজের বিখ্যাত ডায়লগটা বললেন,

—” আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগছে মিস? ”

কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম আমি। উনি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে এবার কঠর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” উত্তর দাও নি এখনও! কে তুমি?”

আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
—” আপনার সেজো চাচ্চুর মেয়ে আমি আব্রাহাম ভাইয়া!”
—” সত্যি? ”

অবিশ্বাস্য কণ্ঠে কথাটা বলেই দু-তিন সেকেন্ড চুপ রইলেন উনি। পরপরই আবারও কঠর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আমার নাম রায়হান আহমেদ রেয়ান! আব্রাহাম শুধুমাত্র আমার ফ্রেন্ডসার্কেল, আব্বু-আম্মু আর কিছু সংখ্যক আত্মীয় ডাকে। তুমি ডাকবে না মিস! বুঝতে পেরেছো?”

মাথা উপর-নিচ নাড়ালাম আমি। উনি আবারও বলে উঠলেন,

—” আচ্ছা, তুমি কি সত্যিই মীরা? কেননা আমার জানা মতে সেজো চাচ্চুর মেয়ে কখনও আমাকে ‘আব্রাহাম ভাইয়া’ বলে ডাকতো না। ‘রেয়ান ভাই’ বলতো। সো, তুমিই যে মরুভূমি তার গেরান্টি কোথায়? এমনও তো হতে পারে তুমি এখানে বই চুরি করতে এসেছিলে আর ধরা পরে যাওয়ায় বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছো। এমন কি হতে পারে না?”

কথাটা শুনে কয়েক মুহুর্ত থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রথমত, ছোট বেলার কথা তার এখনও মনে আছে। সে যে আমাকে মরুভূমি বলে ডাকতো সেটাও পুরোদমে মনে আছে তার। কিন্তু রেয়ান তাকে বই চুরির অপবাদও দিয়েছেন। অর্থাৎ সে বই চোর? তার নিজের বাবা-মার আপন সন্তান হয়েও তাকে সন্দেহ করছে এই লোক! অনাথ করে দিয়েছে একদম! ভাবা যায়?

_____________________

চলবে…
(কোনো কিছু না বুঝলে জানাবেন। ধন্যবাদ…)
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here