ছোট সাহেবের অত্যাচার – পর্ব ১৫

0
560

ছোট সাহেবের অত্যাচার
Writer:Bushratuzzaman Shoya
Part:15
.
ছোট সাহেবকে এই কথা বলার সাহস নেই যে আমি ছোট সাহেবকে ভালোবাসি।আমি এক দৌড়ে নিচের ওই ঘরে চলে আসলাম।নিচের ওই ঘরে আমার একটা জিনিস রয়ে গেছে।আমার মার ছবি রয়ে গেছে।আমি আমার মার ছবিটা আমার হাতে নিলাম।আমার খুব কান্না পাচ্ছে।মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম।কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম,,,,,,
—— আজ যদি মা বেঁচে থাকত তাহলে মা যে কত খুশি হত যে আমার একটা ভালো পরিবারে বিয়ে হচ্ছে।মা আমি তোমায় খুব মিস করছি।তুমি কেন আমায় একা রেখে চলে গেলে।বাবাও যদি থাকত তাহলে বাবাও খুশি হত।আমি কত দুর্ভাগা যে আমার কাছে বাবার কোন ছবি নেই।আমি তো এইটাই জানি না আমার বাবা বেঁচে আছে কিনা।
আমি আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।খালাআম্মা পিছন থেকে এসে বলতে লাগলেন,,,,,
—— সত্যি আজ যদি মরিয়ম বেঁচে থাকত তাহলে অনেক খুশি হত।তোর মা অনেক খুশি এই বিয়েতে।তুই কাঁদছিস কেন আমি আছি না তোর আর একটা মা।তুই কাঁদিস না আর।
—— মা।
—— এইভাবে আর বসে না থেকে মরিয়মের ছবি নিয়ে পুষ্পিতার ঘরে যেয়ে কালকের জন্য প্রস্তুতি নে।
—— জ্বি মা।
ঠিক ওই সময় ছোট সাহেব এই ঘরে আসলেন।ছোট সাহেব এসেই বলতে লাগলেন,,,,,
—— মা আমি বাইরে যাচ্ছি।
—— যা।সাবধানে যা।
—— কিন্তু আমার বাইকের চাবি কোথায়??এই ছোঁয়া তুই আমার বাইকের চাবি দেখেছিস??
—— হুম ছোট সাহেব।আপনার পকেটেই রয়েছে।
ছোট সাহেব উনার পকেটে হাত দিলেন।পকেটে হাত দিয়ে দেখেন বাইকের চাবি পকেটেই রয়েছে।উনি কোন কিছু না বলে সোজা চলে গেলেন।মা বলতে লাগলেন,,,,
—— তোকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারে না আবার বলে আমার পাশে ওকে মানায় নাকি।পাগল একটা।আমায় একটা কথা বলবি মা।
—— জ্বি মা।
—— তুই কিভাবে বুঝিস যে প্রান্তিকের জিনিস ওইখানেই রয়েছে।
—— কারন আমি যে উনাকে ভালো,,,,,,
—— ভালোবাসিস।দেখ দেখ মেয়ের লজ্জা কে দেখে।
আমি লজ্জা পেয়ে এই ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।সোজা পুষ্পিতার ঘরে গেলাম।ছোট সাহেব বাইক নিয়ে বের হয়ে চলে গেলেন।ছোট সাহেব উনার বন্ধুদেরকে নিয়ে ওই তাহফিফের কাছে গেল।তাহফিফ ছোট সাহেবকে দেখে বলছে,,,,
—— প্রান্তিক এইখানে তুই কি করছিস??
—— খুব নজর বেড়েছে তাই না তোর।
—— মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস???
—— ইদানিং তুই একটু বেশিই মেয়েদের দিকে নজর দিচ্ছিস।আর এইবার তুই ভুল মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিস।কারন ও শুধু আমার।
—— কার কথা বলছিস তুই??ওই ছোঁয়া নামের মেয়েটা।ওই মেয়ে শুধু আমার।আমার মনের ভিতর একদম গেঁথে গিয়েছে।
ছোট সাহেব তাহফিফের শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলেন,,,,,
—— এই একদম তুই ওর দিকে নজর দিবি না।ও আমার হবু স্ত্রী।যদি আর একবার নজর দিস তাহলে তোর চোখ উঠিয়ে ফেলব।কথাটা যেন মনে থাকে।
তাহফিফকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছোট সাহেব বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলেন।
বাবা অফিসে বসে রয়েছেন।বাবা যেন কি চিন্তা করছেন।তারপর মোবাইল হাতে নিলেন।একটা নাম্বার ডায়াল করলেন আর ফোন দিলেন।আর নাম্বারটা এই দেশের না অন্য দেশের।ওই পাশ থেকে রিসিভ করল।বাবা বলা শুরু করলেন,,,,
—— হ্যালো ফওয়াদ।কেমন আছ??
—— ভালো আফজাল।তুমি কেমন আছ???
—— ভালো।আমার ছোট ছেলে প্রান্তিকের বিয়ে দিচ্ছি তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।
—— কবে থেকে বিয়ে???
—— এক সপ্তাহ পর থেকে মেহেদীর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।আর কালকে হল সঙ্গীত।
—— আচ্ছা আমি আসব।আমার ছেলে তো বাংলাদেশেই আসছে।আমি ওর সাথে এসে যাব।
—— ঠিক আছে খোদা হাফেজ।
—— খোদা হাফেজ।
আমি পুষ্পিতার ঘরে চলে আসলাম।বিছানায় যেয়ে বসলাম।পুষ্পিতা ঘরে নেই।আজকে যে কি গরম।গরমে থাকতেই পারছিই না।যাই শাওয়ারটা নিয়ে আসি।আমি ওয়াশরুমে গেলাম।
শাওয়ারটা অন করে দিলাম।ওফ এখন একটু ঠান্ডা লাগছে।শাওয়ারটা অফ করে দিলাম।তোয়ালে দিয়ে শরীর আর চুল মুছে নিলাম।হাই আল্লাহ এ কি সর্বনাশ জামা আনতে একদম ভুলে গেছি।এখন কি করব।
বুঝে উঠতে পারছি না কি করব।তারপর মাথায় একটা বুদ্ধি আসল।আমি তোয়ালেটা আমার শরীরে পেঁচিয়ে বের হয়ে আসলাম জামা নেওয়ার জন্য।
ছোট সাহেব বাসায় চলে এসেছেন।উনি এক কাজের জন্য পুষ্পিতার ঘরে আসছেন।আমি যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলাম ঠিক তখন উনি পুষ্পিতার ঘরে ঢুকলেন।আমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেললেন।উনি তো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছেন।
আমি তো লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে জামাটা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।জামাটা পড়ে এসে বের হলাম।বাইরে এসে দেখি ছোট সাহেব এখনও মুখ হা করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।আমার এখনও লজ্জা করছে।এত হা করে থাকলে তো মুখে মাছি ঢুকবে।
আমি একটা কাশি দিয়ে ছোট সাহেবকে বলতে লাগলাম,,,,
—— ছোট সাহেব।আপনি এইখানে কোন কিছুর কি দরকার ছিল।
—— হু।পুষ্পিতা কোথায় রে??
—— জানি না ছোট সাহেব।
—— ও।তুই এই ঘরে কি করছিস???
—— মা আপু বলেছে বিয়ের এই কয়েকদিন এই খানে থাকতে।
—— ও।
ছোট সাহেব পুষ্পিতার ঘর থেকে চলে গেলেন।আমি লজ্জায় মুখটা লুকিয়ে নিলাম।ঠিক ওই সময় পুষ্পিতা এই ঘরে আসল।আমাকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে বলতে লাগল,,,,,
—— কি হয়েছে ছোট ভাবি???এইভাবে হাসছ যে??
—— কিছু না।
—— না না ছোট ভাবি।কিছু তো হয়েছে।বল আমাকে।ভাইয়াকে দেখলাম এই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে।ভাইয়া কি কিছু করেছে???
—— যা।
—— তার মানে ভাইয়াই কিছু করেছে।
—— যা পুষ্পিতা তু‌মি যে কি বল না।
আপু হাতে করে খাবার নিয়ে এসেছেন।দুপুরের খাবার।আপু টেবিলে খাবারটা রেখে আমাকে বলছেন,,,,
—— ছোঁয়া।নে খাবারটা খেয়ে নে।
—— এখনি।
—— হুম এখনি।আগে অনেক শরীরের অযত্ন নিয়েছিস এইবার আর নয়।
—— আপু আমার তো এখনও ক্ষুধা লাগে নি।
—— বললেই হলো।চট করে খেয়ে নে নইতো মার খাবি আমার হাতে।
—— ঠিক আছে।
আমি বাধ্য হয়েই খাবারটা খেয়ে নিলাম।আমার খাওয়া শেষ।আপু সব কিছু বাইরে নিয়ে গেল।পুষ্পিতা আমার পাশে এসে বসল।নানান গল্প বলতে লাগল।কিন্তু আমি শুধু ভাবছি ছোট সাহেবের কথা।এইটাই ভাবছি যে,,,,,
—— ছোট সাহেব আমাকে ওইসময় ওইভাবে দেখে কি ভাবলেন যে।এখন তো আমার উনার সামনে যেতেই লজ্জা করছে।আমি উনার সামনে যাব কি করে।
হঠাৎ করেই পুষ্পিতা বলে উঠল,,,,
—— ভাবি তুমি কোন দিকে মনযোগ দিয়ে রেখেছ।তুমি তো আমার একটা কথাও শুনছ না।
—— তুমি কি বলছিলে??আবার প্রথম থেকে বল।
—— যাও তোমাকে শুনতে হবে না।
—— আরে পুষ্পিতা তুমি রাগ করছ কেন???তুমি প্রথম থেকে বল।
—— ছোট ভাবি আই এম ইন লাভ।
—— কাকে পুষ্পিতা???
—— কানাডায় থাকে কিন্তু ওর বাবা বাঙ্গালি।ওর মাও বাঙ্গালি।
—— ভালো।
রাত হয়ে গেছে।আমি পুষ্পিতার সাথে বসে কথা বলছি।আর হাসছি।তার কিছুখন পর ছোট সাহেব আমাকে ডাক দিতে লাগলেন,,,,,
—— ছোঁয়া।
আমি উনার এক ডাক শুনেই দৌড়ে উনার ঘরে চলে গেলাম।আমি ছোট সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম,,,,,
—— ছোট সাহেব।আপনার কি কিছু লাগবে??
—— এই আমার ল্যাপটপ কোথায় রে???
—— দাঁড়ান দিচ্ছি।
আমি আলমিরার কাছে গেলাম।আলমিরার কাছে যেয়ে আলমিরাটা খুললাম।আলমিরা থেকে ল্যাপটপ টা বের করলাম।আমি বলতে লাগলাম,,,
—— এই তো ছোট সাহেব আপনার ল্যাপটপ।
—— এইদিকে নিয়ে আই।
আমি ছোট সাহেবের কাছে ল্যাপটপ নিয়ে যেতে লাগলাম।হঠাৎ করে পা পিছলিয়ে আমি ছোট সাহেবের উপরে পড়ে গেলাম।আমার চুল সামনে চলে এসেছে।ছোট সাহেব আমার চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছেন।আমি ছোট সাহেবকে বলছি,,,
—— এ কি করছেন ছোট সাহেব???
ছোট সাহেব আমার মুখে হাত দিলেন।
.
.
.
চলবে।
[বলবেন না যে ছোট হয়েছে।অনেক কষ্টে এইটুকু লিখেছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here