#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
মারসাদ ও আদিরা স্টুডেন্টের বাড়িতে যাওয়ার সময়ও দুজনের কেউই একটুও কথা বলে নি। মারসাদ গম্ভীর মুডে আছে। আদিরা সেটা লক্ষ্য করে ভাবছে মারসাদ রেগে আছে। টিউশন থেকে ফেরার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। মারসাদ সামনে এগিয়ে দেখছে রিকশাওয়ালা মামারা কতোটুকু এসেছে। কিছুক্ষণ আগে এক পশলা ঝুম বৃষ্টি হয়ে গেছে। ভাগ্যিস টিউশন শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি থেমে গেছে। আদিরা ইতস্তত করছে মারসাদের সাথে কথা বলতে কারণ সে ক্ষমা চাইতে চায়। আদিরা ভাবনায় মগ্ন কিভাবে কথাটা তুলবে। এরইমধ্যে আচমকা মারসাদের কন্ঠস্বরে আদিরা চমকে উঠে। আলো আঁধারিতে মারসাদ সেটা দেখতে পেলো না। মারসাদ বলল,
–যে দুইজনের রিকশা করে এসেছিলাম তাদের একজনের রিকশার চাকা নাকি বৃষ্টির মধ্যে কোথাও আটকে গেছে। চাকাতে নাকি প্রবলেম। আর রাত ৯টা বাজে। এখন এখানে খুব একটা রিকশা পাওয়া যায় না জানোই তো। তাছাড়া বৃষ্টির দিন। আমার সাথে এক রিকশায় বসতে তোমার প্রবলেম হবে?
আদিরা কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। মারসাদকে আর কষ্ট করতে দিতে চাইলো না। আদিরা বলল,
–ঠিক আছে ভাইয়া।
মারসাদ ও আদিরা দুইজন পাশাপাশি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে। বর্ষণের কারণে রাস্তা স্যাঁতসেঁতে তাই রিকশার প্যাডেল মন্থর গতিতে চলছে। নিরবতা ভেঙে আদিরা অপরাধী কন্ঠে বলে,
–সরি ভাইয়া। আমার উচিত হয় নি ভর্তার আইটেমগুলোতে এতো ঝাল দেওয়া। আপনি ঝাল খেতে পারেন না তা আমি জানতাম না। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।
মারসাদ আদিরার দিকে না তাকিয়েই নিঃশব্দে হাসে কিন্তু অন্ধকারের বুকে তা আদিরার আড়াল রয়ে যায়। আদিরা মারসাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত জবাব আশা করছে। আদিরার মেসের কাছে এলে আদিরা রিকশা থেকে নেমে যায়। রিকশা এরপর মারসাদের হোস্টেলের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলে আদিরা মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর মেসের ভেতরে চলে যায়। আদিরা মেসের ভেতরে প্রবেশ করার পর মেসেজ টোন টুং করে বেজে উঠে। বিছানায় ব্যাগটা রেখে মোবাইলের মেসেজটা দেখে।
“মুখে আ*গুন লাগিয়েছ তো এখন সেটা নেভানোর দায়িত্বও তোমার। পরে একদিন আবার চেয়ে নিবো। সো স্মাইল প্লিজ!”
আদিরার মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে। সব মনখারাপ কর্পূরের ন্যায় উড়ে গেছে তার।
_______
সুমি ও মৌমি মিলে আজ রাত্রির চায়ে একটা ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিয়েছে। ক্যান্টিন থেকে সুমি চা আনার সময় পথিমধ্যে মিশিয়ে এনেছে। আধাঘণ্টার মধ্যে রাত্রির ঘুমে চোখ বুজে আসছে। রাত্রি হাই তুলতে তুলতে বলল,
–কীরে ভাই! চা খেয়ে দেখি ঘুম আসছে।
সুমি রাত্রির কথায় তাল মিলিয়ে ঘুমের ভান ধরে বলে,
–আমারও ঘুম আসছে। চা খেলাম রিফ্রেশমেন্টের জন্য কিন্তু এখন ঘুম আসছে। কীরে মৌমি তোর ঘুম আসছে না?
কথাটা বলে মৌমির দিকে একটা চোখ টিপ দেয়। মৌমি হা করে সুমির কথা শুনছিল। কারণ তার তো ঘুম আসছে না। আর ঘুমের ঔষুধ তো শুধু রাত্রিরটাতে মেশানো হয়েছিল। সুমির চোখ টিপ দেখে মৌমি দাঁড়ানো থেকে একটু হেলে পরে। যেমনটা ঘুম আসলে দাঁড়ানো থেকে পরে যাওয়া ধরে তেমন। মৌমি চোখ হাত দিয়ে ডলে বলে,
–আসলেই। তবে কম কম।
রাত্রি হাসতে হাসতে বলল,
–কম কম বলেই তো তুই পরে যাচ্ছিলিস! আজকে জলদি ঘুমাবো চল। তাহলে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল কমবে।
ওরা তিনজন রুমের লাইট নিভিয়ে নিজেদের বেডে শুয়ে পরে। সুমি ও মৌমি ঔষুধ খায় নি তাই তারা ঘুমাবে না। আধাঘণ্টা পার হলে সুমি নিজের বিছানা থেকে উঠে মোবাইলের ফ্লাশলাইট অন করে মৌমিকে ডাক দেয় হাত দিয়ে। মৌমি আচানক ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে চিৎকার করতে নিবে তার আগেই সুমি হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে। এরপর মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফিসফিস করে শা*শানো স্বরে বলল,
–এই তুই ঘুমাস কেন? কাজ করতে হবে ভুলে গেছিস?
মৌমি ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বলে,
–রুম অন্ধকার আর ফোন তো চালাতে পারতাম না যদি রাত্রি বুঝে যায়! তাই অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রা লেগে গেছিলো।
সুমি হুঁশিয়ার কন্ঠে বলে,
–ঠিক আছে। তুই এবার কিছুটা দূরে লাইট নিয়ে দাঁড়াবি আর আমি রাত্রির মোবাইলের লক খুলতে ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিবো। যেমনেই হোক জানতে হবে রাত্রি কার সাথে যোগাযোগ রাখছে।
মৌমি ও সুমি তাদের কাজে লেগে পরে। সুমি রাত্রির ফোনের লক খুলে ফেলল এরপর ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে কল লিস্টে ঢুকে। মৌমি ভীতু স্বরে বলে,
–আচ্ছা রাত্রি বুঝে যাবে নাতো? বুঝে গেলে তো প্রবলেম হয়ে যাবে।
সুমি মৌমির বোকা বোকা কথায় বিরক্ত হয়ে মৌমির মাথায় একটা ঠু*য়া মা*রে তারপর বলে,
–এজন্যই আশিক ভাই তোকে বারেবারে মাথায় ঠু*য়া দেয়। আরে ভাই! রাত্রি বুঝবে কেমনে? আমরা কী ওই ছেলেকে কল করবো নাকি! জাস্ট নাম্বারটা নিবো। আর সুন্দর করে হিস্টোরি ক্লিয়ার করে দিবো। অবশ্য না করলেও হবে। ওর লাস্ট হিস্টোরি কল লিস্টেই ছিল। তুই ভবিষ্যতে একজন ভিপির বউ হবি হোক তখন সেটা প্রাক্তন ভিপি। আর আমাদের বন্ধুও ভিপি হবে। একটু তো সাহসী হ।
মৌমি আর কিছু বলে না। সে বারবার রুমের ভিতরে নজর রাখছে রাত্রি উঠে গেলো কীনা। সুমি রাত্রির ফোন থেকে সবচেয়ে বেশি কল হিস্টোরিওয়ালা নাম্বারটা কালেক্ট করে নেয়। রাত্রির ফোনে সেটা “jaan” লিখে সেভ করা। সুমি সেটা দেখে মুখ বাঁকালো। কাজ শেষ হওয়ার পর আস্তে করে ফোনটা যথাস্থানে রেখে দিলো। এরপর নাম্বারটা মারসাদকে সেন্ড করে দিলো।
সুমি ও মৌমি এখন নিজেদের টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ছে। প্রায় ঘন্টাখানেক পড়ার পর হঠাৎ রাত্রির ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে সুমি ও মৌমি একে অপরের দিকে তাকায়। সুমি গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওই নাম্বার থেকে কল। সুমি মৌমির দিকে তাকিয়ে চোক টিপ দিয়ে দাঁত বের করে হেসে কলটা রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে ভেসে আসে,
–আমার রাতপাখিটা কী করে?
সুমির হাসি পেলো। মুখ চেপে ধরে হাসি কন্ট্রোল করে আছে। আবার অপরপাশ থেকে শোনা যায়,
–কী হলো? কথা বলবা না? রাগ করে আছো পাখিটা?
সুমি কন্ঠস্বর চেনার চেষ্টা করছে। কার কন্ঠস্বর হতে পারে? তবে কিছুটা শোনা কন্ঠস্বর লাগছে। ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তিটার সন্দেহ হলো। সে সন্দিহান হয়ে বলল,
–তুমি রাত্রি তো?
সুমির মনে হলো লোকটাকে আর প্যাঁচানো ঠিক হবে না। পরে নিজেরা ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। সুমি ব্যাঙ্গ করে বলল,
–না ভাইয়া! আপনার রাতপাখি তো ঘুমোচ্ছে। তার অক্ষিযুগলে নিদ্রাদেবী ভর করেছে যে। তার নামের মতোই সে এখন ঘুমিয়ে রাত্রীবিলাশ করছে যে!
খট করে ফোনটা কেটে দিলো। সুমি ঠোঁট উল্টে ফোনটা সামনে এনে দেখলো। মৌমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কে চিনতে পেরেছিস?
সুমি মুখ লটকে বলল,
–না তবে গলার স্বরটা চেনা চেনা লাগছিল। মনে হচ্ছে শুনেছি আর বেশ কয়েকবার শুনেছি। তবে অতোটাও না।
মৌমি ও সুমি দুজনেই হতাশ হলো।
_______
মারসাদ পরেরদিন মোবাইল অপারেটররে সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলো নাম্বারটা রেজিস্টার করা না। এখন সুমিই ভরসা। সুমি যদি সেই কন্ঠস্বর আবার কোথাও শুনতে পায় তবে জানতে পারা যাবে। এদিকে রাত্রি ক্লাসের পর সুমি ও মৌমিকে জিজ্ঞেসা করে,
–তোরা কালকে ওর ফোন রিসিভ করেছিলি?
মৌমি ঢোক গিলে। সুমি স্বাভাবিক ভাবে বলল,
–হ্যাঁ। তোকে কতোবার ডাকলাম যে তোর ফোন বাজছে কিন্তু তুই কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছিলি। পরে রিংটোন বন্ধ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে ফোনটা রিসিভ করি। তা কে তোর জান? নামটা তো বল? আমাদের থেকে লুকিয়ে জান ফানও বানিয়ে ফেলেছিস? কবে থেকে এসব?
রাত্রি সুমি কৌতুক মিশ্রিত কথায় লজ্জা পেয়ে গেলো। লজ্জায় লাল-নীল হয়ে বলল,
–মাত্র দুই মাস হলো। দুই মাস ধরে ফ্রেন্ডশিপ তারপর একটু একটু ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। আমাদের ভার্সিটিরই। আর ইয়ারমেট সে। নাম জানাতে পারবো না। সে মানা করেছে।
নাম না বলাতো সুমি চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল। রাত্রি যে এখন বলবে না তা সে জানে। কাল ফোনটা রিসিভ না করলে এটুকু ইনফরমেশনও জানতে পারতো না। সুমি ও মৌমি রাত্রিকে পিঞ্চ করতে থাকে রিলেশন নিয়ে।
চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।