একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_42(Bonus) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
51

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_42(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালীকে বিদায় দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রায়ান সাহেব। প্রত্যুষ তাকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে। যেখানে তার নিজেরই বোনকে বিদায় দিয়ে একদমই ভালো লাগছিল না। ভীষণ কাঁদছিল সবাই।

এদিকে প্রণালী গাড়িতে বসে ছিল৷ তারও ভীষণ কান্না পাচ্ছে কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না। কারণ শান্ত নামক ঠকবাজের কাছে ঠকে যাবার পর সে প্রতিজ্ঞা করেছে জীবনে আর কোন পরিস্থিতিতেই চোখের জল ফেলবে না। জীবনে যাই ঘটুক, সেটাকে আর পাত্তা দেবে না। জীবন তাকে যেখানে ভেসে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবে। আর সর্বোপরি জীবনে আর কখনো কারো প্রেমে পড়বে না। কারণ ভালোবাসা শব্দটার উপর থেকে তার বিশ্বাস চিরতরে উঠে গেছে। এজন্যই তো এমন একজনকে বিয়ে করেছে যাকে সে ঘৃণা করে। অপ্রিয় হয়েই থাকুক। এমন অপ্রিয় ব্যক্তিরাই বুঝি ভালো। অপ্রিয় ব্যক্তিদের হঠাৎ বদলে যাওয়ার জন্য কাঁদতে হয় না৷ তাদের ব্যবহারেও কষ্ট পেতে হয়না। প্রণালী প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে একই সুরে প্রেমকে সে আর সুযোগ দেবে না তাকে কাঁদানোর। তাই কখনো ভুলেও কারো প্রেমে পড়বে না। প্রণালীর এসব ভাবনার মধ্যেই সমুদ্র হঠাৎ করে বলে ওঠে,”হ্যালো, মাই ওয়াইফ। আমাকে নিজের হাজবেন্ড হিসেবে কেমন লাগছে?”

প্রণালী এক শব্দেই উত্তর দেয়,”জঘন্য।”

“তাহলে বিয়েটা করলে কেন?”

প্রণালী নিরুত্তর। কথা বলতে তার একদম ভালো লাগছে না। এদিকে সমুদ্র প্রণালীর এমন কুল রিয়্যাকশন দেখে রেগে যায়। কোথায় সে ভেবেছিল মেয়েটাকে রাগাবে জব্দ করবে কিন্তু এখান তো মেয়েটাই নিরুত্তাপ থেকে তাকে রাগিয়ে দিচ্ছে। সমুদ্র প্রণালীকে রাগানোর জন্য বলে,”জানো, আমার না একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকেই ভালোবাসি। তোমাকে তো বিয়ে করেছি তো শুধু বাবার কথায়।”

“ভালো।”

সমুদ্র এবার আরো রেগে যায়। প্রণালীকে বেশ রেগেই বলে,”এসব জেনেও তুমি কোন রিয়্যাক্ট করছ না কেন? বাই এনি চান্স তুমিও কি কাউকে ভালোবাসো?”

সমুদ্রের কথাটা শুনেই প্রণালীর মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। তাকে হাসতে দেখে সমুদ্র বলে,”তুমি হাসছ কেন?”

“ভালোবাসি শব্দটার উপর আমার বিশ্বাস ভরসা কিছুই নেই। আরো ভালো করে বলতে গেলে ভালোবাসা এই শব্দটাকেই আমি প্রচণ্ডরকম ঘৃণা করি।”

“কেন? কেউ ছ্যাকা-ট্যাকা দিয়েছে নাকি?”

প্রণালী কিছু বলে না। নিশ্চুপ হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র বুঝতে পারে এই মেয়েটাকে সে এত সহজে জব্দ করতে পারবে না৷ তাই সেও চুপ করে যায়।

…………….
প্রণালী ও সমুদ্রকে বহনকারী গাড়ি এসে পৌঁছে যায় চৌধুরী ম্যানশনের সামনে। সমুদ্র দ্রুত গাড়ি থেকে নামে। নেমেই হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতে যায়। এদিকে বাড়ির সামনেই বরণ ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সায়মা চৌধুরী। তিনি সমুদ্রকে এভাবে একা আসতে দেখে বলেন,”তুই এভাবে একা আসছিস কেন? তোর কোন আক্কেল নেই?”

পিছন থেকে সজল চৌধুরী বলেন,”ঐ ছেলের আক্কেল আর কবে ছিল।”

সমুদ্র অপমানিত বোধ করে গমগম চোখে তার বাবার দিকে তাকায়। সজল চৌধুরী রেগে বলেন,”আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে নিজের বউকে নিয়ে এসো ইডিয়েট কোথাকার।”

সমুদ্রও সমান রাগ দেখিয়ে বলে,”তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলেছ আমি বিয়ে করেছি। এখন আর আমার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করো না।”

“সমুদ্র! তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মুখের উপর এভাবে বলছ?”

“হ্যাঁ, বলছি। আমাকে আর ডিস্টার্ব করো না তো। আমি অনেক টায়ার্ড এখন ঘুমাতে যাব।”

সমুদ্র চলে যেতে নিতেই সজল চৌধুরী বলে ওঠেন,”এভাবে তুমি কোথাও যেতে পারবে না। আমাদের চৌধুরী বাড়ির একটা রীতি আছে। আমাদের বাড়িতে নতুন বর-বউকে বরণ করেই ঘরে তোলা হয়৷ দেখছ না, তোমার ফুপি বরণ ডালা হাতে দাঁড়িয়ে?”

সমুদ্র নিজের ফুপির দিকে একবার তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি ঐ মেয়েকে আসতে বলো। আমি আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।”

“ঐ মেয়ে কি? স্ত্রী হয় তোমার?”

সমুদ্র বিড়বিড় করে বলে,”স্ত্রী, মাই ফুট!”

এরমধ্যে প্রণালী গাড়ি থেকে নেমে সেখানে এসে উপস্থিত হয়৷ প্রণালীকে দেখে সায়মা চৌধুরী বরণ ডালা নিয়ে এগিয়ে আসেন। দুজনকে পাশাপাশি দেখে মৃদু হেসে বলেন,”মাশাল্লাহ, কি সুন্দর মানিয়েছে তোমাদের দুজনকে।একদম রাজযোটক। কারো নজর না লাগুক।”

বলেই সায়মা চৌধুরী বরণ করতে উদ্যত হন৷ এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন এসে হঠাৎ করে বরণ ডালাটা উলটে ফেলে দেয়। উপস্থিত সবাই চমকে ওঠে। সায়মা চৌধুরী হতবাক হয়ে বলে ওঠেন,”ভাবি তুমি!”

পুষ্পা চৌধুরী রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সজল চৌধুরী এগিয়ে এসে নিজের স্ত্রীকে বলেন,”কি করলে এটা তুমি? আর তোমার না ২ দিন পর ফেরার কথা ছিল।”

পুষ্পা চৌধুরী রেগে যান ভীষণ। কোন কিছু বাধ বিচার না করে সজল চৌধুরীর গালে ঠাস করে থা**প্পড় বসিয়ে দেন। সজল চৌধুরী সবার সামনে এভাবে অপমানিত হয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েন। সায়মা চৌধুরী চিৎকার করে বলেন,”ভাবি! এটা কি করলে তুমি? ভাইয়ার গালে হাত তুললে?”

পুষ্পা চৌধুরী সায়মার উদ্দেশ্য বলেন,”তুমি চুপ থাকো। ভাইয়ের সংসারে নাক গলাতে লজ্জা করে না? দূর হও এখান থেকে।”

অত:পর পুষ্পা চৌধুরী সজল চৌধুরীর সামনে এসে তার শার্টের কলার চেপে ধরে বলেন,”আমি আরো ২ দিন পর ফিরলে তোমার খুব সুবিধা হতো তাইনা? আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলে! এত সাহস তোমার।”

সজল চৌধুরী পুষ্পা চৌধুরীকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যান। পুষ্পা চৌধুরী দ্বিগুণ গর্জন দিয়ে বলেন,”ভুলে যেওনা এই চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সর্বেসর্বা আমি। তুমি আমার অধীনে একজন কর্মচারী মাত্র। কারণ তোমার বাবা এই পুরো চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের দায়িত্ব আমার কাধে দিয়ে গেছেন। আর তোমার এত বড় সাহস, তুমি আমার ছেলের বিয়ে এভাবে দিলে? হাউ ডেয়ার ইউ?”

প্রণালী অবাক হয়ে সবকিছু দেখছিল। সে তো বুঝতেই পারছে না তার চোখের সামনে এসব কি হচ্ছে। এদিকে সজল চৌধুরীও চুপ। তার যৌবনে করা একটা ভুলের জন্য তার বাবা তাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছেন। এমনকি সেই কারণেই তিনি নিজের স্ত্রীর বিরোধিতাও করতে চান না। তার কথা মুখ বুজে মেনে নেন। এমনকি তার সব অপমান। কিন্তু কস্মিনকালেও ভাবেন নি তার স্ত্রী তার সাথে এমন কিছু করবে। নিজের ছেলে-ছেলের বউ সহ এতগুলো মানুষের সামনে তার গায়ে হাত তুলবে!

পুষ্পা চৌধুরী রাগে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজের বান্ধবীর মেয়ে নিজের ছেলের বউ করবেন বলে ভেবেছিলেন। মেয়েটাকে তার বড্ড পছন্দ। অথচ সজল চৌধুরী এভাবে তার সকল পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দিলেন। পুষ্পা চৌধুরী ত্রস্ত পায়ে প্রণালীর সামনে গেলেন। এই মেয়েটাকে দেখে এখন তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। তিনি চিৎকার করে বলেন,”তোমাকে আমি ছেলের বউ হিসেবে মানি না। তুমি যেখান থেকে এসেছ সেখানেই ফিরে যাও।”

প্রণালী এমনিতেই বিধ্বস্ত ছিল, অনেক ক্লান্তও। তার উপর পুষ্পা চৌধুরীর এমন গলাবাজি সহ্য হলো না৷ মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠল। সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ার আগেই সমুদ্র ধরে নিলো। পুষ্পা চৌধুরী এই দৃশ্য দেখে রেগে গিয়ে বললেন,”ছেড়ে দাও এই মেয়েটাকে বাবাই।”

“কিন্তু মম, মেয়েটা তো পড়ে যাবে।”

“আই ডোন্ট কেয়ার বাবাই। আমি যা বলছি তাই করো। নিজের মমের অবাধ্য তো তুমি নও।”

সমুদ্র নিজের মায়ের কথায় প্রণালীকে ছেড়ে দেয়। বিধায় সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে৷ সায়মা চৌধুরী এসে প্রণালীকে আগলে নেয়।

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here